ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির ভারতজুজু রাজনীতি যেভাবে বন্দনায় পরিণত

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১২ জুন ২০১৫

বিএনপির ভারতজুজু রাজনীতি যেভাবে বন্দনায় পরিণত

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যখন অবিশ্বাসের দোলাচালে, ভারত জুজু, মৌলবাদ ও জঙ্গীপ্রীতি, শেষমেষ সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে লাগাতার অবরোধ ডেকে আগুনে মানুষ মারার অপরাজনীতি সবই হয়েছে বুমেরাং। সেনা শাসক প্রেসিডেন্ট জিয়ার জন্ম দেয়া এ দলটির কয়েক দফা নাম পরিবর্তন করে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নামেই স্থিত হয়েছে। অনুরূপভাবে এ দলটির রাজনীতির গতি কখনও একা, কখনও যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতপ্রীতি আবার কখনও জঙ্গীবাদীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ভারত জুজুর ভীতি ছড়িয়ে অপরাজনীতির মাধ্যমে সরকারের চালিকাশক্তির আসন দখলের সকল প্রয়াস বুমেরাং যেমন হয়েছে, তেমনি দলটির রাজনীতির প্রধান তৎপরতা ভারত জুজু শেষমেষ বন্দনায় পরিণত হলো। দলটিতে যে ক্ষয়রোগ ধরেছে এর উত্তরণে বহু কাঠখড় পোড়াতে হবেÑ এমন আলোচনাই চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনের বোদ্ধাদের মাঝে। মানুষের বিশ্বাস অর্জন দূরে থাক, বিএনপির অভ্যন্তরে একজন আরেকজনকে এখন আর আস্থায় আনতে পারছে না। দলীয় চেয়ারপার্সন ‘কাকে রাখি আর কাকে ফেলি’ অবস্থায় পড়ে নানা সঙ্কটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন। ভারত বিরোধিতার টনিক দিয়ে যে দলটি এদেশের ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেÑ সে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শুরু থেকে ভারত জুজু, পরে মৌলবাদী ও জঙ্গীবাদীদের সঙ্গে মিতালি গড়ে তোলে। শেষমেষ ক্ষমতা হারিয়ে এ দলটি যেন মরিয়া হয়ে পেট্রোলবোমার আগুনে সাধারণ মানুষ মারার পথ বেছে নেয়। কিন্তু সবই নিষ্ফল। রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ভারত বিরোধিতার টনিকে যে ফরমালিন ছিল এর কার্যকারিতা হারিয়েছে। মৌলবাদীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় থাকা ও পুনরায় যাওয়ার প্রক্রিয়াটি রাজনীতি সচেতন ভোটার ও নতুন প্রজন্মের প্রগতির পক্ষের ভোটারদের চোখে ভাল লাগেনি। অবশেষে পেট্রোলবোমা মেরে যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ মারার ঘৃণ্যতম পথটি যখন এ দলটির পক্ষ থেকে নেয়া হয় তখন বিএনপির রাজনীতির অবস্থান খান খান হয়ে যায়। শান্তিপ্রিয় অরাজনৈতিক মহলগুলোর কাছে বিএনপির এ অপরাজনীতির সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতা কখনও পায়নি। বিশ্বাস ও সমর্থন দুটিই হারিয়ে গেল বিএনপি থেকে। উল্টো দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর সদস্যরা এ দলটির এসব জঘন্যতম কর্মকা-কে দেখছে ঘৃণার চোখে। আর ক্ষত-বিক্ষত মানুষ দেখছে অন্তরের যন্ত্রণার নিঃশ্বাসে। ফলশ্রুতিতে মৌলবাদী জামায়াতী সখ্য নিয়ে বিএনপির রাজনীতি একে একে শুধু ধরাই খেয়ে গেল। এমন ধরা তারা খেল যে জামায়াত-হেফাজত আর দলটির আন্দোলনে প্রকাশ্যে কেউ এল না। জাতীয় রাজনীতিতে এখন বিএনপি অনেকটা মিত্রহারা একা। আর এ কারণেই সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত পেতে বিএনপির চেয়ারপার্সন হয়েছিলেন মরিয়া। শেষ পর্যন্ত সাক্ষাত পেয়েছেন। দেখিয়েছেন ভারতপ্রীতি। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে ১২ থেকে ১৫ মিনিটের মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপার্সন নিশ্চয় বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের বিরোধী নই, আমরাও তোমাদের বন্ধু’। মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের আগে বিএনপির পক্ষ থেকে যে দৌড়ঝাঁপ পরিলক্ষিত হয় তা অনেকের মনে দলটির প্রতি করুণা জাগিয়েছে। ভারতের পক্ষে প্রথমে এ ধরনের সাক্ষাতে না বোধক থাকলেও শেষমেষ মোদি বেগম জিয়াকে সাক্ষাত দিয়েছেন। কিন্তু মোদি হয়ত ভুলে যাননি তাঁর দেশের রাষ্ট্রপতি এদেশে যখন এসেছিলেন তখনও বিএনপি হরতাল ডেকেছিল। আর হরতালের বাহানা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে যাননি। যা সে সময়ে ভারতীয় রাষ্ট্রপতির জন্য অপমানজনক বলেই বিভিন্ন মহল থেকে বক্তব্য এসেছে। এরপরও বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বের ধারা অব্যাহত রাখতে নরেন্দ্র মোদি শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাদের নয়, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত দান ছাড়াও সুধী সমাবেশে হাজির হয়ে বিদ্যমান বন্ধুত্বকে আরও উত্তরণের আহ্বান জানিয়ে গেলেন। সরকারের সঙ্গে ২২ চুক্তি করে গেছেন। তিস্তার পানি বণ্টনে অমীমাংসিত ইস্যুটি ভবিষ্যতে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গেলেন। মোদির এ সফর দেশ-বিদেশে সর্বত্র প্রশংসা কুড়িয়েছে।
×