ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১২ জুন ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ সকাল হলো বটে। সূর্য উঠল না। সামান্য আলো যা ফুটেছিল, কিছুক্ষণ পর তাও উধাও। দিনের বেলাটি রাতে বদলে গেল। বৃষ্টিরও যেন তর সইছিল না। অঝোর ধারায় ঝরল। এভাবে বর্ষার আগেই বৃহস্পতিবার ভরা বর্ষার রূপ দেখল রাজধানীবাসী। আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্য মতে, এদিন রাজধানীতে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যাঁরা বাসায় ছিলেন তাঁদের অনেকেই এদিন জানালায় চোখ রেখে বৃষ্টি দেখেছেন। ঝিরিঝিরি হাওয়া গায়ে মেখেছেন। বৃষ্টির ফোঁটা শরীর-মন যেমন ভিজিয়ে দিয়েছে, তেমনি ভিজিয়ে দিয়েছে মাটি। ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিয়েছে বাসার সামনের উঠোন। বারান্দার টবে যত গাছ আরও সবুজ হয়ে ধরা দিয়েছে। ঘরে বসে দৃশ্যগুলো দেখা মজার ছিল বৈকি! তবে যাঁরা কাজের মানুষ, বাইরে বের হওয়ার জন্য ছটফট করেছেন। একটু পর পরই জানালায় উঁকি দিয়ে দেখেছেন। বোঝার চেষ্টা করেছেন বৃষ্টি শেষ হলো কিনা। শেষ না হওয়ায় অনেকে দুপুরের খাবার বাসায় সেরেছেন। ফলে লম্বা সময় পর্যন্ত সরগরম ছিল বিভিন্ন বাসাবাড়ি। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যাঁরা ঘর ছেড়েছিলেন তাঁদের যথারীতি ভুগতে হয়েছে। বেদম ছোটাছুটি করেও গা বাঁচাতে পারেননি অনেকে। ভেজা-জামা জুতো নিয়েই অফিস-আদালত করেছেন। স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের অবস্থা দেখে তো মায়াই হয়েছে। অবশ্য দুষ্টুদের কথা আলাদা। এরা সুযোগটি বেশ কাজে লাগিয়েছে। স্বেচ্ছায় ভিজতে দেখা গেছে এদের। সিটি কলেজের একদল ছাত্র একে অন্যকে টেনে বৃষ্টিতে নামাচ্ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও দেখা গেছে এমন দৃশ্য। এখানে বৃষ্টিতে ভেজার খেলায় এগিয়ে ছিল মেয়েরা। দিন শেষে অবশ্য ভুগান্তিটাই বড় হয়ে দেখা দেয়। ভারি বর্ষণে এদিন রাজধানীর প্রায় সব নিচু এলাকা তলিয়ে যায়। শান্তিনগর, মালিবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানি উঠে গেছে হাঁটুর ওপরে। এই এলাকায় বহুদিন ধরে চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ। এখানে-ওখানে গর্ত। চোখের সামনেই উল্টে গেল দু’টি রিকশা। একটি বাইসাইকেল তো গর্তে এক রকম তলিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর পরই দেখা গেল স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইঞ্জিনের। পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে চালাতে হচ্ছিল। প্রায় একই চিত্র দেখা যায় মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের অনেক এলাকায়। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড, উর্দু রোড, গুলিস্তান নাট্যমঞ্চের সামনের রাস্তায় পানি জমে ছিল। অন্ধকারও ছিল দিনভর। তাই হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলেছে। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর দেখা দেয় তীব্র যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকেও পথ শেষ হয়নি। আর যখন যানজট কমেছে তখন সঙ্কট দেখা দিয়েছে গণপরিবহনের। শত শত যাত্রীকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। হঠাৎ কোন বাস আসতে দেখলে শুরু হয়ে গেছে হুড়োহুড়ি। কার আগে কে উঠবে প্রতিযোগিতা লেগেই ছিল। পুরুষ যাত্রীরা কয়েক দফা চেষ্টা করে সফল হন। তবে নারীদের মুখের দিকে তাকানো যায়নি। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাঁদের।
×