ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামের গ্যাস সঙ্কট কাটতে পারে সোমবার

প্রাইভেট রিফাইনারিকে সরাসরি কন্ডেনসেট সরবরাহের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১১ জুন ২০১৫

প্রাইভেট রিফাইনারিকে সরাসরি কন্ডেনসেট সরবরাহের সিদ্ধান্ত

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাস সঙ্কটের কারণে গ্যাস নির্ভরশীল সকল খাতে নেমে আসা বিপর্যয় এখনও অব্যাহত রয়েছে। সিলেটের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত বিদেশী প্রতিষ্ঠান শেভরন দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করার ফলে এর সঙ্গে উঠে আসা কন্ডেনসেট সংরক্ষণ ক্ষমতা না থাকায় এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। কারণ, বিপিসি নিয়ন্ত্রিত তিনটি তেল কোম্পানি ও দশটি প্রাইভেট রিফাইনারি তাদের মুনাফা লাভের বিষয়টি চিন্তা করে কন্ডেনসেট গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। আর এ কারণে কন্ডেনসেট সংরক্ষণের জন্য ট্যাঙ্কগুলোতে এখন তিল পরিমাণ জায়গা নেই। আর এতে করে জাতীয় গ্যাস গ্রিড লাইনে গ্যাস সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে এবং চট্টগ্রাম গ্যাস সঞ্চালন লাইনের শেষ প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় চাহিদার গ্যাস পাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় গ্যাসের অনুপস্থিতিতে তা আঘাত করেছে বিদ্যুত লাইনে, ওয়াসার পানি সরবরাহে, সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে, বিভিন্ন শিল্প-কারখানা এবং আবাসিক বাসা বাড়ির গ্যাসনির্ভর চুলায়ও। গত বেশ ক’দিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকার প্রেক্ষাপটে বুধবার সর্বশেষ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জরুরী এক বৈঠকে ইতোপূর্বেকার গৃহীত সিদ্ধান্ত পাঠিয়ে দশ প্রাইভেট রিফাইনারির পক্ষে আবেদন করা হলে প্রয়োজনের অধিক কন্ডেনসেট সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাইভেট রিফাইনারিগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী কন্ডেনসেট গ্রহণ করলে সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে এবং এতে করে বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করে তা জাতীয় গ্যাস গ্রিড লাইনে সরবরাহের ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটানো যাবে। তবে আগামী রবিবার বা সোমবারের আগে চট্টগ্রামে মারাত্মক গ্যাস বিপর্যয়ের ঘটনার উন্নতি ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানানো হয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি সূত্রে। গ্যাস সেক্টরের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, অতিরিক্ত কন্ডেনসেট সংরক্ষণের অপ্রতুলতার কারণে গ্যাস সরবরাহে এ সঙ্কট সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে চট্টগ্রামে। এর পাশাপাশি ঢাকা, কুমিল্লা ও সিলেটেও এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে বিদ্যুত উৎপাদনে নিয়োজিত দুটি কেন্দ্র সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ফলে লোডশেডিং এখন মাত্রাতিরিক্ত। অধিকাংশ সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস নেই। ফলে গ্যাসচালিত যানবাহনগুলো গ্যাস না পেয়ে সঙ্কটে পড়েছে। ওয়াসার ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উত্তোলনে নিয়োজিত পাম্পগুলো বিদ্যুতের অভাবে অধিকাংশ বন্ধ রয়েছে। ফলে নগরীতে পানি সরবরাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া গ্যাসচালিত বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় গ্যাস না পাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় শিল্প মালিকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এদিকে বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের শুরুর দিক থেকে সরকারী নিরীক্ষা বিভাগের অডিট আপত্তির কারণে কন্ডেনসেট সরাসরি বেসরকারী রিফাইনারিগুলোতে না দিয়ে বিপিসির মাধ্যমে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তা থেকে সরে এসেছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। বুধবার মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর নতুন সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রাইভেট রিফাইনারিগুলো আবেদন করলে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে অতিরিক্ত কন্ডেনসেট সরবরাহ সরাসরি দেবে। এ অবস্থায় বুধবার চারটি প্রাইভেট রিফাইনারি কর্তৃপক্ষকে অনুরূপ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সূত্রে জানানো হয়, গৃহীত নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে অন্য প্রাইভেট রিফাইনারিগুলো আগের মতো সরাসরি গ্যাসফিল্ড থেকে কন্ডেনসেট সরবরাহ নিতে উৎসাহী হবে এবং এতে করে বিপুল পরিমাণ মজুদ কমে আসবে। পাশাপাশি গ্যাসক্ষেত্র থেকে নিয়মিত যে কন্ডেনসেট উত্তোলিত হচ্ছে তা সংরক্ষণের আওতায় চলে আসবে। অপরদিকে, মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে কন্ডেনসেট রফতানির যে সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে দিয়েছে তা কার্যকর করতে সময় নেবে বলে বিপিসি সূত্রে বুধবার জানানো হয়েছে। কেননা, রফতানির এ প্রক্রিয়ায় নানা ধাপ রয়েছে। এসব ধাপ অতিক্রম করে তা বাস্তবাযন করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অপরদিকে, চট্টগ্রাম মহানগরী ও এর আশপাশ অঞ্চলজুড়ে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের হাহাকার অব্যাহত রয়েছে। বাসা বাড়িতে রান্নার চুলায় গ্যাস নেই। লোডশেডিংয়ের মাত্রা মারাত্মক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। গ্যাসনির্ভর যানবাহনগুলোর চলাচল স্বাভাবিকের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। যাদের বেশি প্রয়োজন তারা জ্বালানি তেল গ্রহণ করে যানবাহন সচল রেখেছে। এতে তাদের পড়তে হচ্ছে আর্থিক ক্ষতির মুখে।
×