ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একান্ত বৈঠকে খালেদাকে আলোচনায় বসার পরামর্শও দেন মোদি ॥ আনন্দবাজারের প্রতিবেদন

নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা মানবে না ভারত

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১১ জুন ২০১৫

নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা মানবে না ভারত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে নির্বাচন ছাড়া অন্য কোন পথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা মেনে নেবে না ভারত। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করার জন্য নিজেই উদ্যোগী হয়ে সময় চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করার জন্য নিজেই উদ্যোগী হয়ে সময় চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তার ক্ষণিকের সেই বৈঠকে লাভ কী হলো? মোদি ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সর্বত্র আলাপ-আলোচনায় এখন এটিই প্রধান মুখরোচক বিষয় হয়ে উঠেছে বলে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়। মঙ্গলবার ‘নিজে যেচে মোদির সঙ্গে দেখা করে কাঠগড়ায় খালেদা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিএনপি নেতাদের একাংশও মনে করছেন মোদির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মুখ পুড়িয়েছেন খালেদা জিয়া এবং এজন্য তার একগুঁয়ে মনোভাবই দায়ী। প্রটোকল মেনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে খালেদার আগে সময় পেয়েছেন জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদ, জাসদের হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন। রওশন সংসদে বিরোধী নেত্রী, ইনু ও মেনন হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। সরকারের শরীক হিসেবে সংসদে তাদের বেশ কয়েকজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। তাই খালেদাকে বসিয়ে রেখে তার সামনেই ইনু-মেননদের ডাক পড়ে মোদির সঙ্গে আলোচনার জন্য। সবার শেষে খালেদার জন্য তখন মিনিট দশেক সময় হাতে ছিল মোদির। প্রতিবেদনে বলা হয়, সময় পাবেন না বুঝেই নিজের বক্তব্য একটি কাগজে নোট করে নিয়ে গিয়েছিলেন খালেদা। কিন্তু সেগুলোর সবক’টি তিনি পড়েও উঠতে পারেননি বলে ক’ূটনৈতিক সূত্রের খবর। কিন্তু যেভাবে সরকারের বিরুদ্ধে তিনি বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে নালিশ করেছেন, দেশে গণতন্ত্র নেই বলে অভিযোগ করেছেন, তাতেও প্রশ্ন ওঠেছে। প্রতিবেদনে বিএনপি নেতা মইন খানের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, মইন খান অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন, ‘মোদি নিজে গণতান্ত্রিক মানুষ। গণতান্ত্রিক পথেই তিনি সমাজের সাধারণ স্তর থেকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে উঠে এসেছেন। সে জন্যই তার কাছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র না থাকার অভিযোগটি তুলেছেন বিএনপি নেত্রী। এতে অন্যায়ের কিছু নেই।’ নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন সব সংস্থাকে হাসিনা সরকার কুক্ষিগত করে নিজের হাতিয়ার করেছে বলেও খালেদা মোদির কাছে নালিশ করেছেন বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু নিজের দেশের সরকারই নয়, দিল্লীতে আগের মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধেও খালেদা অনুযোগ করেছেন নরেন্দ্র মোদির কাছে। মোদির কাছে বিএনপি নেত্রীর অভিযোগ, মনমোহন সরকারের প্রশ্রয়েই ভোটের ‘প্রহসন করে’ শেখ হাসিনা ক্ষমতা দখল করেছেন। তিনি আশা করেন, মোদির সরকার এ নীতি পুনর্বিবেচনা করবে। কূটনৈতিক সূত্রে খবর উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, মোদি তাকে (খালেদা) পাল্টা প্রশ্ন করেনÑ কেন তিনি হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছেন না? জবাবে খালেদা বলেন, তারা বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সরকারের আচরণে পিছিয়ে আসেন। মোদি তখন তাকে বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এড়িয়ে অন্য কোন পথে হাঁটার সুযোগ সংসদীয় ব্যবস্থায় নেই। আলোচনায় না বসলে কোন সমস্যার সমাধানও মেলে না। কূটনীতিকদের ব্যাখ্যাÑ এই কথা বলে আসলে খালেদাকে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শই দিয়েছেন মোদি। নির্বাচন ছাড়া অন্য কোন পথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা যে ভারত মেনে নেবে না, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মনমোহন সরকারের বাংলাদেশ নীতিই মেনেই মোদির সরকার চলছে। তাই আগের সরকারের বিরুদ্ধে তোলা খালেদার অভিযোগকে আমল দেননি মোদি। একই দিনে প্রকাশিত আনন্দবাজারের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকা থেকে ফেরার পথে উড়োজাহাজে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মোদি তিস্তার ইস্যুটি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি ঘরোয়া কমিটি গঠন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ৭ জুলাই রাতে দিল্লী ফেরার পথে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের উড়োজাহাজেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নৃপেন্দ্র মিশ্র। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদি নির্দেশ দিয়েছেন, বাংলাদেশ সফর শেষ হয়ে গেছে মানেই কাজ শেষ হয়ে গেছেÑ এমন নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার কাজ আজ থেকেই শুরু করে দিতে হবে। এদিকে ভারতের দি হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মোদির সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটিবারের জন্যও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাম উচ্চারণ করেননি। অথচ ১৯৭৪ সালে সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ নেন। ভারতের কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা অভিযোগ করেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর যে অবদান সেই ইতিহাস ভুলে গেছেন মোদি। সে কারণেই ঢাকা সফরকালে অটল বিহারী বাজপেয়ীকে যখন মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয়া হয়, মোদি তখন একটি বারের জন্যও ইন্দিরা গান্ধীকে স্মরণ করেননি। এদিকে ভারতের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা সফরে সফরসঙ্গী না করায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। টুইটবার্তায় তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে ভূমি হস্তান্তর, ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছেন। অথচ উত্তর-পূর্বের কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি সফরসঙ্গী করেননি। এতে স্পষ্ট হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেন না। উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সীমান্তের পাঁচ প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়েই ঢাকা আসতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মমতার আপত্তিতে মোদি তাদেরকে সফরসঙ্গী করেননি। এ নিয়ে এসব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
×