ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অমলকান্তি সরকার

মোহন মাস্টারের ঢাকা দর্শন

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১১ জুন ২০১৫

মোহন মাস্টারের ঢাকা দর্শন

স্কুলশিক্ষক মোহন মাস্টার অবসর নিয়ে গ্রামেই থাকেন। রাজধানী দেখার সুপ্ত ইচ্ছে দীর্ঘদিনের। এবার সময় এবং অর্থ দুটিই হাতে এসেছে। কমলাপুর স্টেশনে নেমে হেঁটে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এসে যতদূর চোখ যায় বড় বড় বিল্ডিং। বিভিন্ন অফিস আর ব্যাংকের হেড অফিসগুলো। চোখ জুড়িয়ে যায় তাঁর। সামনের দিকে পা বাড়াতেই হোঁচট খান। ফুটপাথে তরিতরকারি, ফলমূল, জামা-কাপড়, মসলা, গৃহস্থালি, প্রসাধনী, চাল-ডাল থেকে শুরু করে সুঁই-সুতো সবই আছে। এ যেন মহেশপুর গ্রামে শাপলা বিলের পাশের হাটটি ভুল করে ঢাকার শাপলা চত্বরে বসেছে। স্টেডিয়াম পার হয়ে বায়তুল মোকাররমের সামনে দাঁড়িয়ে একি দেখছেন! পবিত্র স্থানেও ফুটপাথে উৎপাত? সামনে পবিত্র রমজান মাস। সুরমা, আতর, টুপি কিনে গুলিস্তানের দিকে পা বাড়ান; লোকজন মালপত্র হাতে ছোটাছুটি করছে। পুলিশ উচ্চৈঃস্বরে বাঁশি হাঁকাছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফাঁকা হয় ফুটপাথ। তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। যাক এবার আয়েস করে হাঁটা যাবে। জোহরের নামাজ আদায় করে বের হয়ে তার চোখ ছানাবড়া! একি অবস্থা? আবার দখল হয়েছে ফুটপাথ। একটু এগিয়ে যেতেই চোখ পড়ে মস্তান টাইপের একজন দোকানগুলো থেকে টাকা নিচ্ছে; দূরে দাঁড়িয়ে পুলিশ। বুঝতে বাকি থাকে না মস্তানটি কাদের প্রতিনিধি। সততা যার জীবনের ব্রত; চিরজীবন ছাত্র-ছাত্রীকে সৎপথে চলার দীক্ষা দিয়েছেন, সেই সাদা মানুষটি একি দেখছেন? দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন। ফার্মগেটে এসে দেখেন ওভারব্রিজও হকারদের দখলে। চলাচলের জায়গা নেই বললেই চলে। গাড়ির বহর উচ্চৈঃস্বরে হর্ন বাজিয়ে বিষাক্ত ধোঁয়া ছেড়ে চলেছে। এক যুবক পথচারী মেয়ের মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে কালচে দাঁত বের করে বিশ্রী ঢংয়ে হাসে। প্রতিবাদ করতে গিয়েও থেমে গেলেন মোহন মাস্টার; মনে পড়ে ক’বছর আগে এই ফার্মগেটেই তরুণ ডাক্তারকে প্রাণ দিতে হয়েছিল হকারদের হাতে। ওরা সঙ্ঘবদ্ধ। নিচে নেমে আসেন। হাঁটতে থাকেন ফুটপাথ ধরে। মোটর সাইকেলওয়ালা ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। অল্পের জন্য বড় বিপদ থেকে রক্ষা পান তিনি। মনে কষ্ট আর হতাশা নিয়ে ঢাকা দর্শন সংক্ষিপ্ত করে সন্ধ্যার ট্রেনে বসে ভাবেন; তার না দেখা স্বপ্নের রাজধানীই ভালো ছিল। এই যান্ত্রিক ঢাকা শহরে নাগরিক সুবিধার চেয়ে বিড়ম্বনাই বেশি। যে শহরে ৩৭% পথচারী ফুটপাথ ব্যবহার করে তার এই হাল? আধুনিক নগরীর আয়তনের ২০ থেকে ২৫% রাস্তা থাকা প্রয়োজন। সেখানে আছে মাত্র ৭ থেকে ৮%। নিজেকে প্রশ্ন করেন মোহন মাস্টার। ফুটপাথে কেন উৎপাত? একি সিটি কর্পোরেশন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদাসীনতা? নাকি তাদের কিছু অসাধু কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় পুষ্ট হকারেরা? নাকি রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়া? তেজগাঁও, ঢাকা থেকে
×