ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভ্রাতৃত্বের সিরিজ ঘিরে বিশ্বকাপ বিতর্ক!

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১০ জুন ২০১৫

ভ্রাতৃত্বের সিরিজ ঘিরে বিশ্বকাপ বিতর্ক!

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ মনের আঁচড় সহজে মোছা যায় না। বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন কেবল মাঠের খেলায় সীমাবদ্ধ নেই, জায়গা করে নিয়েছে কোটিপ্রাণের হৃদয় মন্দিরে। ব্যাট-বলের দুনিয়ায় আবেগ-অনুভূতি মিলে মিশে একাকার। সমস্যা এখানেই! দেশ ছাড়ার আগে ইডেন গার্ডেন্সের জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনেও তাই বিরাট কোহলিকে স্বদেশী সাংবাদিকের মুখ থেকে শুনতে হয়েছে অপ্রিয় সেই প্রশ্ন। উত্তরে, ভারতের টেস্ট অধিনায়ক বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ-বিতর্ক এখন অতীত।’ সেটি একদমই মাথায় রাখছেন না তারা। চাইলেই কি সব ঝেড়ে ফেলা যায়? হৃদয় চিড়ে দেয়া কষ্ট সহজে ভোলার নয়। আজ ফতুল্লায় একমাত্র টেস্ট দিয়ে যখন শুরু দু’দেশের ক্রিকেট দ্বৈরথ, তখন প্রতিশোধের নেশায় রক্ত টগবগ করে ফুটছে টাইগার-ভক্তদের! বিশ্বকাপ আর সাধারণ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ যেমন এক নয়, তেমনি এক নয় ওয়ানডে আর টেস্টও। ক্রিকেটীয় ঘোরের মধ্যে বাস করলেও মানুষ তা মানেন। কেবল মানতে পারেন না অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারদের লেলিয়ে দিয়ে ‘মোড়ল’ ভারতের সেই জয় ছিনিয়ে নেয়া! তৈরি হয় বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিতর্কের। ওই ঘটনার পর এই প্রথম মুখোমুখি দু’দেশ। প্রেক্ষাপট যতই ভিন্ন হোক, ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের ক্ষোভ ঠিকরে বেড়োচ্ছে এখনও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমির হোসেন যেমন বলেন, ‘কোহলি-সাকিব যতই বলুন, আমরা বিষয়টা মন থেকে ভুলতে পারিনি। জিতলেই প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালÑ অর্থ ও গায়ের জোরে এমন ম্যাচ বানচাল করে দিলে তা মেনে নেয়া যায় না! ফতুল্লা টেস্ট হয়ে মিরপুরের তিন ওয়ানডের যে কোন একটিতে ওদের হারিয়ে প্রতিশোধ নিতে চাই। উদযাপনের জন্য রং-বাদ্য নিয়ে আমরা এখন থেকেই প্রস্তুত! পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছি, ভারতকে কেন নয়?’ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রথম টেস্টে প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। টাইগার হিরো সাকিব-আল হাসানের ছবি বিক্রি হয় কলকাতার রাস্তায়। দু’দিন আগে সফরে এসে ভ্রাতৃপ্রতীম বন্ধুত্বের দৃঢ়তা প্রকাশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ক্রিকেটের কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষভাবে। বিশ্বকাপের এক বিতর্ক সব কেমন ধোঁয়াময় করে দিয়েছে! আমিরদের মতো তরুণ ভক্তদের কথায় ফুটে উঠছে সেটাই। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর মাশরাফি বিন মর্তুজারা তখন সেমির স্বপ্নে বিভোর। সবশেষ করে দেয় বিতর্কিত আম্পায়ারিং। সুরেশ রায়নাকে এলবিডব্লিউ না দেয়া, রোহিত শর্মা ক্যাচ আউটের পরও কোমরের নিচে থাকা রুবেল হোসেনের বলে ‘নো’ ডাকা এবং বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যাচ ধরতে গিয়ে প্রতিপক্ষ শিখর ধাওয়ানের পা সীমানা রশি ছোঁয়াÑ প্রতিটি সিদ্ধান্তই গেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আম্পায়ারিংকে ‘জঘন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেকরা। উম্মা প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রিকি পন্টিং বলেছিলেন, ‘মাশরাফিদের জয় কেড়ে নেয়া হয়েছে, পুনরায় খেলা হলে বাংলাদেশই জিতবে।’ ক্যারিবিয়ান ব্রায়ান লারা দ্যত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘রুবেলের বলটি শতভাগ বৈধ’। এমনকি খোদ ভারতীয পত্রিকায় আম্পায়ারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়! ঘটনার সেখানেই শেষ নয়। ম্যাচ তদন্তের দাবি তুলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন বাংলাদেশের আহম মুস্তফা কামাল। তার আগে বিশ্বকাপের ঐতিহ্য ভেঙ্গে কামালের পরিবর্তে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার হাতে ট্রফি তুলে দেন বহু-বিতর্ক ও কলঙ্কের হোতা চেয়ারম্যান এন শ্রীনিবাসন। মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আইসিসিকে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ বলে তিরস্কার করেন কামাল। যে প্রেক্ষিতে পূর্ব নির্ধারিত হলেও শেষ পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশে আসবে কি না, তা নিয়ে শুরু হয় নতুন জল্পনা! ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলে কূটনৈতিক তৎপরতা। দু’দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক ও সরকারী সু-সম্পর্কই শেষ পর্যন্ত সব শঙ্কা উড়িয়ে দেয়। পূর্বাপর ওই ঘটনাই এই সিরিজের আগ্রহ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে! বাংলাদেশের মাটিতে আরও কোন দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নিয়ে এত আগ্রহ তৈরি হয়নি। বিতর্ক ছাপিয়ে ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট ফিরবে নিজের জায়গায়, কোহলির মতো সবার চাওয়া সেটাই। ‘যা ঘটেছে, বিশ্বকাপেই সেটা শেষ করেছি। আমি মনে করি না, বিষয়টা আমাদের মনে রাখা উচিত। লক্ষ্য ভাল ক্রিকেট খেলা। ফতুল্লায় জয় দিয়ে শুরু করতে চাই।
×