ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিবাসী

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ১০ জুন ২০১৫

অভিবাসী

নিজ বাসভূম ছেড়ে পরবাসী কে হতে চায়? আশ্রয়ের সন্ধানে সাগরে সাগরে ভাসমান বিপদাপন্ন মানুষের প্রতি বিশ্বমানবতা জাগরূক হচ্ছে। গত মাসে ভাগ্যান্বেষণে অভিবাসীযাত্রায় আন্দামান সাগরে ভেসে থাকা নিরন্ন মানুষের অনিশ্চিত জীবনের চালচিত্র গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া প্রথমদিকে সাগরে মৃত্যুমুখী মানুষগুলোর দিকে ফিরে না তাকালেও পরে সাময়িকভাবে তাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিতে রাজি হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় এক বছরের জন্য এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কথা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়দানের আগ্রহ দেখিয়েছে। বিলম্বে হলেও এ জাতীয় মানবিক সিদ্ধান্তে মানুষগুলোর জীবন রক্ষা পাবে এটাই স্বস্তির বিষয়। আন্দামান সাগরে ও মালাক্কা প্রণালী এলাকায় আটকেপড়া রোহিঙ্গা অভিবাসীদের বিষয়টির আপাত সুরাহা হতে না হতেই বিশ্ববিবেক বিষণœ হয়ে উঠেছে ভূমধ্যসাগরে ভাসমান ৫ লাখ মানুষের ইউরোপ অভিযাত্রার সংবাদে। গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে ইউরোপে পৌঁছানোয় প্রত্যাশী অভিবাসীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ধারণা করতে অসুবিধে হয় না যে, সিরিয়া কিংবা সোমালিয়ার মতো দেশগুলোর সংঘাতময় পরিস্থিতিই এ বিপুলসংখ্যক মানুষকে অভিবাসী হতে প্রভাবিত করছে। গত কয়েক মাসের অভিযানে উদ্ধারকৃত বাস্তুচ্যুতদের সংখ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ। নিপীড়ন, দারিদ্র্য ও সংঘর্ষের ফলে মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আশ্রয়ের খোঁজে নিজের জীবনকে ঝুঁকির ভেতর ফেলছে তারা। বাঁচার বিকল্প পথ নেই বললেই চলে! স্বদেশ যদি দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের আর জীবনের মৌলিক কিছু মানবিক প্রয়োজন পূরণের শতভাগ নিশ্চয়তা দিত তাহলে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ কখনোই বিদেশগামী হতো না। নিজের দেশে যদি কাক্সিক্ষত অবকাঠামো গড়ে না তোলা যায়, অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকে, তখন একান্ত বাধ্য হয়েই মানুষ অন্য দেশে কর্মক্ষেত্র খুঁজে নেয়। দেশে দেশে কর্মহীন শ্রেণীর ভেতর এই বিশ্বাস পাকাপোক্তভাবে বিরাজমান যে, যে কোন উপায়ে উন্নত দেশে চলে যেতে পারলে আর না খেয়ে থাকতে হবে না। পৃথিবী নামক গ্রহে মূলত ক্ষুণিœবৃত্তির জন্যই নানা জাতি নানা দেশের মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে অচেনা লোকালয়ে। মরণাপন্ন অভিবাসীযাত্রার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন না থাকলেও উন্নত রাষ্ট্রসমূহ মানবজীবন রক্ষার ব্যাপারে অনেক সময়ই অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে থাকে। যেমন ইউরোপীয় যুদ্ধ জাহাজ ও কোস্টগার্ড নৌযান সম্প্রতি ভূমধ্যসাগর থেকে ২ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে। দারিদ্র্যপীড়িত উত্তর আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে আগত অভিবাসীদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে পুনর্বাসন করানো যায় কি-না এ প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে। জি-৭ শীর্ষ বৈঠকে এর একটা ইতিবাচক মীমাংসাই আশা করছে বিশ্বমানবতা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অভিমত, এরূপ পুনর্বাসন মানব পাচারকারীদেরই কেবল উৎসাহিত করবে। অপরদিকে জার্মান চ্যান্সেলর এক নতুন ব্যবস্থার আওতায় শরণার্থীদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তাদের জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক শক্তির ভিত্তিতে ভাগ করে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এটা কেবল শুরু। আগামীতে অভিবাসীযাত্রায় শামিল হবেন আরও বহু মানুষÑ এমন ভাবনা অমূলক নয়। তাই অভিবাসীদের বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টিপাতের সময় এসেছে বলেই ধারণা হয়।
×