ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পণ্যমূল্য

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৮ জুন ২০১৫

পণ্যমূল্য

আর ক’দিন পরই পবিত্র রমজান মাস। মুসলিম সম্প্রদায়ের সিয়াম সাধনার এই মাসকে ঘিরে চলতে থাকে নানা আয়োজন। সারাবছর কম ব্যবহৃত হলেও রমজান মাসে বিশেষ কিছু খাদ্যপণ্যের ব্যবহার বেড়ে যায়। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, মসলা ইত্যাদি। এবারও রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দাম বাড়ার এই প্রবণতা বেশ পুরনো। প্রতি বছর সরকারের তরফ থেকে প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, যাতে পণ্যের দাম না বাড়ে। এবারও বাণিজ্যমন্ত্রী যে কোন মূল্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে টিসিবিকে সক্রিয় করার পাশাপাশি নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেছে। রমজানে বেশি চাহিদার কথা মাথায় রেখে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রাখার কথাও বলা হয়েছে। কয়েক দফা বাজার তদারকি অভিযান চালানোর ঘোষণাও দেয়া হয়। এসব উদ্যোগ স্বস্তিদায়ক বলা যায় আপাতদৃষ্টিতে। কিন্তু বাজারের সাম্প্রতিক হালচাল ক্রেতাকে কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন করে। কারণ, ৪ জুন বাজেট পেশের আগে থেকেই পেঁয়াজসহ বেশকিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে কোন ঘোষণা ছাড়াই। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে নানা কারণের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। বলা হয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে তাই এ দেশেও বাড়ছে। নেপালে ভূমিকম্প হয়েছে তাই ডাল এবং ছোলার দাম বেড়েছে, কিন্তু নেপাল থেকে আমাদের দেশে ডাল বা ছোলা আমদানি করা হয় না। ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে তাই বাংলাদেশে বেড়েছে, অথচ ভারত থেকে আমাদের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগ আংশিক মেনে নিলেও অসৎ ব্যবসায়ীদের কারসাজির বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা এবং কেউ অযৌক্তিক দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। আমরা মনে করি সব নিত্যপণ্যের মূল্য তদারকি করা উচিত। এতে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী, চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ কম হলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কথা। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে বা কোন দৃশ্যমান কারণ ছাড়া দাম বাড়ানো হয়ে থাকে। এক শ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ী এ সময়টাতেই অধিক মুনাফার ফন্দি আঁটেন। তারা নানা অজুহাতে চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ভোক্তা অনেকটা নিরুপায় হয়েই বলা চলে বাধ্য হয়েই বেশি দামে তা কেনেন। এই অধিক মুনাফার প্রবণতা বড় ব্যবসায়ী থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবার মধ্যেই দেখা যায়। বলা যায়, ভোক্তারা তাদের কাছে এক ধরনের জিম্মি। যেভাবেই হোক ভোক্তাদের এই জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে হবে। বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের অসৎ, লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তন। তাদের এই পরিবর্তন কবে ঘটবে তার জন্য অপেক্ষায় বসে থাকলে চলবে না। এর জন্য সরকারসহ সমাজের সচেতন দায়িত্বশীল মহলকে ভূমিকা রাখতে হবে। ইতোমধ্যে সরকার টিসিবির মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রাখতে রাজধানীসহ কয়েকটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। এর পরিধি শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরও সচল করা দরকার। যে কোন মূল্যে পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তা জনগণের জন্য স্বাভাবিক রাখতে হবে।
×