ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তরিকতায় অসাধারণ নরেন্দ্র মোদি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৭ জুন ২০১৫

আন্তরিকতায় অসাধারণ নরেন্দ্র মোদি

রশিদ মামুন ॥ অতি অসাধারণের মাঝেই সব সময় বসবাস সাধারণের। কোনদিন কেউ যা ভাবেননি তিনি তেমনই। হাতে হাত মেলাতে আগে তিনিই হাত বাড়িয়ে দেন। ভুবন আলো করা হাসিতে কথার ডালা মেলেন। বলতে ভুল করেন না আসুন ছবি তুলি। সত্যিই প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে খোদ নরেন্দ্র মোদিকে কাছে পেলে কার না ইচ্ছা করে সময়টা স্মৃতি করে ফ্রেমে আটকে রাখতে। আর তেমন সুযোগ যদি মোদি নিজেই করে দেন তাহলে তো কথাই নেই। মোদির দুই দিনের ঢাকা সফরে প্রথমদিন যারাই কাছাকাছি হয়েছেন তারাই উচ্ছ্বাস নিয়ে বলেছেন এত আন্তরিক এত সাধারণ হবেন এই মানুষটি তা ভাবনারও অতীত ছিল। শুধু কি সাধারণ মানুষ, বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে যাওয়ার সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আর অন্য গাড়িতে যেতে দিলেন না। তুলে নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজের গাড়িতে। একসঙ্গে মোদি-হাসিনা-মমতা বৈঠকটি আগেই নির্ধারিত ছিল। কিন্তু মোদি-মমতা একই গাড়িতে এতটা হয়ত কেউ আগে ভাবেননি। পশ্চিবঙ্গের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দ বাজার বলছে ‘দুই নেতা এক সঙ্গেই যাবেন, তা জানা ছিল না। শনিবার সেই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকল ঢাকা।’ অর্থাৎ মোদির আন্তরিকতায় মমতার মান ভাঙ্গায় ভারতীয়রাও হয়ত ভাবছেন আশ্চর্য! শনিবার ঢাকা পৌঁছেই টুইটে মোদি ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশীদের প্রতি। মোদি লিখছেন ‘বাংলাদেশ, আমি আমার সঙ্গে ভারতের মানুষের ভালবাসা এবং শুভেচ্ছা নিয়ে আসছি।’ দেশের সাধারণ মানুষও নরেন্দ্র মোদির এই আবেগকে স্বাগত জানিয়েছে। হাতে হাতে ফেসবুক টুইটারের কল্যাণে মোদির এই ভালবাসার বাণী সকলের মাঝে ছড়িয়ে গেছে সেই সকালেই। রাজধানী ঢাকায় মোদির আসা-যাওয়ার ছুটির দিনেও পথের বিড়ম্বনা ছিল যানজট। সেই জটে বসেই মোদির সফর নিয়ে আলোচনা চলেছে। অনেকে ফিরে গেছেন ক্লিনটনের ঢাকা সফরের ক্ষণে। নিরাপত্তা আর উচ্ছ্বাস মানুষকে সেই সময়টিতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। সংবাদ মাধ্যম বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় মোদির এই সফরকে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা দৃষ্টিতে দেখছেন। ভাবছেন বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন আরও দৃঢ় হবে। প্রতিবেশীর প্রতি প্রতিবেশীর ভালবাসা না থাকলে যেমন চলে না। দুটি পাশাপাশি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তাই। সকলের আশা নরেন্দ্র মোদি তা অন্য রঙে রাঙাবেন। সাভারে জাতির বীরদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মোদি স্থানীয় সংসদ সদস্য আর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। এরা সকলেই মোদির ব্যবহারে হতবাক। এত সাধারণভাবে কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি ‘এত সুন্দর করে হাসেন এত আপন করে নেন’ আরও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তাঁরা। সাভারের স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ এনামুর রহমান বলছেন, ভাবিইনি মোদি এমন হবেন! ভেবে ছিলাম তিনি মুডি হবেন। কিন্তু একেবারেই তা নন তিনি। সাধারণ। খুবই সাধারণ তিনি! নিজে হাত বাড়িয়ে করমর্দন করলেন। বললাম, আমি ডাক্তার এনাম। এই আসনের সংসদ সদস্য। মিষ্টি করে হেসে বললেন, আমি রাস্তায় দেখেছি আপনার লোকদের। যারা আমাকে অভিবাদন জানিয়েছেন। দুই দেশের পতাকা ছিল তাদের হাতে, গ্রেট! ডাঃ এনাম বললেন ‘আমি সত্যিই অভিভূত। আমার পরিশ্রম সার্থক।’ ‘স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে থমকে গেলেন মোদি। বললেন, আসুন ছবি তুলি। তুললাম। বেশ ভাল লাগল। মনে হলো পাশের বাড়ির বড়ভাই। সপ্তাহজুড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ঢাকার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানও দারুণ উচ্ছ্বসিত মোদির সঙ্গে করমর্দন করে। এসপি হাবিব বলেন, ‘তাঁর মতো ক্ষমতাধর দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে পেরে সত্যিই অভিভূত। বলতে পারেন গর্বিতও। মোদির সঙ্গে মিলিত হওয়ার এই ক্ষণকে ‘বিরল অভিজ্ঞতা’ মনে করছেন সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। মোদির সঙ্গে করমর্দন করার পর জানালেন ‘সত্যিই বিরল অভিজ্ঞতা নিজের পরিচয় তুলে ধরলাম। হাত মেলালাম। বেশ ভাল। ঢাকায় মোদি যে শুধু বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় জয় করেছেন তা নয়। এখানে মোদির আন্তরিকতায় বাঁধা পড়েছেন মমতাও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের আগে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। কিন্তু সেই বৈঠকে যে দুই নেতা একই গাড়িতে যাবেন তা জানা ছিল না। শনিবার সেই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রইল ঢাকা। ঢাকায় মোদি উঠেছেন হোটেল সোনারগাঁও আর মমতা থাকছেন র‌্যাডিসনে। মোদির সঙ্গে তাঁকেও একই হোটেলে থাকার অনুরোধ করা হলেও মমতা আলাদাই থেকেছেন। তবে সকল দৈনন্দিন কার্যসূচী যোগ দিচ্ছেন মমতা। ঢাকায় মমতার সফরসূচী আরও একদিন বৃদ্ধিরও অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×