ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণিল উদ্বোধনীতে যাত্রা শুরু ফিফা মহিলা বিশ্বকাপের

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ৭ জুন ২০১৫

বর্ণিল উদ্বোধনীতে যাত্রা শুরু ফিফা মহিলা বিশ্বকাপের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মহিলা বিশ্বকাপ ফুটবলের যাত্রা শুরু হয়ে গেল। চার বছর পর জার্মানি থেকে এবার কানাডায় এসেছে বিশ্বকাপ ট্রফি। আর সেটা জিততে কানাডার ৬ ভেন্যুতে ২৪ দল লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে। আগের আসরগুলোয় ১৬টি করে দল অংশ নিলেও এবার নতুন ৮টি দলের অভিষেক হবে। সবমিলিয়ে ২৪ দেশের ৫৫২ খেলোয়াড় বিশ্বকাপ মঞ্চে অবতীর্ণ হবেন একটি শিরোপা জয়ের যুদ্ধে। গত এক মাস ধরে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাগতিক কানাডা। লড়াইটাও শুরু হয়ে গেল। শনিবার এডমন্টনের ঐতিহ্যবাহী কমনওয়েলথ স্টেডিয়ামে মাত্র ১০ মিনিটের বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে সপ্তম এ আসর। উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক কানাডা ও চীনের মধ্যে লড়াই দিয়ে শুরু হয়ে গেছে মাঠের প্রতিযোগিতা। বিশ্বকাপের মতো আসর আয়োজন করলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে তেমন মাতামাতি করেনি আয়োজকরা। শনিবার প্রথম ম্যাচে কানাডা-চীন মুখোমুখি হওয়ার আগে হালকা অনুশীলন করার পরই মাত্র ১০ মিনিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। এটির আয়োজন করেছে কানাডার জাতীয় আয়োজক কমিটি। বিশ্বের সকল নারীদের ক্ষমতায়ন এবং ঐক্যের সেøাগান এবং আহ্বান ছিল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। এছাড়া ক্রীড়া ও মানবতার মধ্যে সম্পৃক্ততাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সংক্ষিপ্ত এ অনুষ্ঠানে। এজন্য মঞ্চে একটি বালিকা ফুটবলারের চোখের ভাষায় টুর্নামেন্টের উদ্দেশ্য, নারীদের ক্ষমতায়ন ও মর্যাদার ব্যাপারগুলো নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে নেপথ্যে একটি কণ্ঠের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে। জার্মানির পুরস্কার বিজয়ী গায়িকা সারাহ স্যাকলাখল্যান তার দারুণ শ্রোতাপ্রিয় হওয়া গান ‘ইন ইউর শুজ’ গেয়েছেন। এবার বিশ্বকাপ ইভেন্টের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কারা ল্যাং এ সময় মঞ্চে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য উঠেছেন অলিম্পিক, প্যারা অলিম্পিক এবং কমনওয়েলথ গেমসে পদকজয়ী তারকা চ্যান্টাল পেটিটক্লার্ক এবং পাঁচবারের অলিম্পিক পদকজয়ী হাইলে উইকেনহেইসারের সঙ্গে। চলতি বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে ১৫ বছর বয়সী কারা স্বাগতিক দলের হয়ে খেলবেন। এছাড়া মঞ্চে রক ও পপ গানে কানাডায় সাড়া ফেলে দেয়া দুই যমজ কণ্ঠশিল্পী টেগান ও সারা গেয়েছেন ‘আই এ্যাম নট ইউর হিরো’ গানটি। আর এর মাধ্যমেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষের মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় সপ্তম মহিলা বিশ্বকাপ। গত আসর পর্যন্ত মহিলা বিশ্বকাপে খেলেছে ১৬টি করে দল। তবে এবার নতুন ৮ দল যোগ হয়েছে। স্বাগতিক কানাডা সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেছে বিশ্বকাপ আয়োজক হিসেবে। বাকি ২৩ দল অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে ৬ মহাদেশীয় অঞ্চলের মোট ১৩৪ দলের বাছাইপর্ব খেলে। কানাডা বিশ্বকাপে এবার নতুন অনেক মাত্রা যোগ হচ্ছে। ৮ দলের অভিষেক হওয়ার কারণে দল বাড়ার পাশাপাশি সময়সীমা ও ম্যাচ অনেকে বাড়ছে এবার। ক্যামেরুন, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, আইভোরি কোস্ট, হল্যান্ড, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও থাইল্যান্ডের মহিলা দল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলবে। তাছাড়া দল বাড়ার কারণে দ্বিতীয় রাউন্ড হিসেবে পুরো একটি পর্ব নতুন করে যোগ হয়েছে। ৬ গ্রুপে ৪টি করে দল মুখোমুখি হবে। ৬ গ্রুপের খেলা হবে ভিন্ন ভিন্ন ৬ ভেন্যুÑ ভ্যানকুভার, এডমন্টন, উইনিপেগ, অটোয়া, মন্ট্রিল ও মঙ্কটনে। শনিবার সংক্ষিপ্ত কলেবরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এডমন্টনে হলেও সমাপনী ও ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুলাই ভ্যানকুভারে। প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি করে মোট ১২ দল সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে। বাকি চারটি দল নির্বাচন করা হবে সেরা তৃতীয় স্থান দখলকারী চার দলকে নিয়ে। কানাডা প্রথমবারের মতো মহিলা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হয়েছে। তবে উত্তর আমেরিকা মহাদেশে এবার নিয়ে তৃতীয়বার মহিলা বিশ্বকাপের আসর আয়োজিত হচ্ছে। আগের বিশ্বকাপগুলো হয়েছে সাধারণ মাঠে। কিন্তু এবার কৃত্রিম ঘাস বিছিয়ে দেয়া হয়েছে প্রতিটি ভেন্যুতে। আর্টিফিসিয়াল টার্ফ গড়া হয়েছে প্রতিটি ভেন্যুতে। তবে কৃত্রিম ঘাসের ওপর খেলার বিষয়টি নিয়ে অনেক খেলোয়াড়ই অভিযোগ করেছিলেন। এতে ইনজুরিতে পড়ার শঙ্কা বাড়বে এমনটাও বলেছিলেন তারা। সে কারণে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে খেলার ব্যাপারে অসন্তুষ্টি জানিয়েছিলেন অনেকে। বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেসব ধোপে টেকেনি। এছাড়া এবারের আসরে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার থাকছে বিশ্বকাপকে আরও আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর করার জন্য। সঠিকভাবে গোল নির্ধারণের জন্য গোললাইন প্রযুক্তি এবং হক-আই সিস্টেম থাকছে এবারের আসরে। গত বছর ১৭ জুন বিশ্বকাপের মাস্কট ‘শুয়েম’ এর উন্মোচন করা হয়। এটি হচ্ছে সাদা রঙ্গের মাদী পেঁচা। মূলত প্রকৃতির জীববৈচিত্র্যকে বাঁচানো এবং সংরক্ষণের প্রতীক হিসেবে এটিকে মাস্কট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বকাপের মতো বড় আসর প্রথমবার আয়োজন করলেও ইতোমধ্যে ফিফার বেশকিছু টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে কানাডা সফলতার সঙ্গে। কানাডা ইতোমধ্যে ১৯৮৭ সালে ফিফা অনুর্ধ-১৬ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০০২ ফিফা অনুর্ধ-১৯ মহিলা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০০৭ ফিফা অনুর্ধ-২০ বিশ্বকাপ, ২০১৪ ফিফা অনুর্ধ-২০ মহিলা বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে। তাই আয়োজকরা আশাবাদী এবারও ভাল একটি আয়োজন করতে সক্ষম হবেন তারা।
×