ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৈঠকের মধ্যেই সব হম্বিতম্বি সীমাবদ্ধ

বর্ষা এলেই পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিয়ে ॥ শুরু হয় তোড়জোড়

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৭ জুন ২০১৫

বর্ষা এলেই পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিয়ে ॥ শুরু হয় তোড়জোড়

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পাহাড়ের চূড়ায় ও পাদদেশে অবৈধভাবে গেড়ে বসা বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বর্ষা এলেই টনক নড়ে প্রশাসনের। জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন পর্যন্ত এমনকি সিটি কর্পোরেশনও বর্ষা আতঙ্কে নড়েচড়ে বসেছে। পাহাড় রক্ষা ও পুনর্বাসন কমিটির সদস্যরা গত মঙ্গলবারও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবস্থানকারীদের সরিয়ে নিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাল ৮ জুনের মধ্যে নগরীর এগারোটি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় ৯ জুন থেকে গ্যাস, বিদ্যুত ও ওয়াসার সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের মধ্য দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবস্থানরত জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী ৬৬৬টি পরিবারকে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে নগরীর পাহাড়কেন্দ্রিক এলাকাগুলোকে ঘিরে ভূমিদস্যু চক্রের আধিপত্য রয়েছে। এ আধিপত্যের ফসল হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে ও চূড়ায় অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে কাঁচাপাকা ঘর। এসব ঘরে বসবাস করছে দিনমজুর থেকে শুরু করে হতদরিদ্র শ্রেণীর লোক। এমনকি পোশাক কারখানায় কর্মরতদের অনেকেই এসব স্থাপনায় কম ভাড়ায় বসবাস করে। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও ওয়াসার উপযোগিতা ব্যবহার করেই ভূমিদস্যু চক্র অবৈধভাবে গ্রাহকের আচরণ করছে। এসব ভূমিদস্যু চক্র সরকারের রাজস্ব দেয়া তো দূরের কথা বরং এ তিন দফতরের লাইনম্যান, মিটারম্যান ও ভিজিল্যান্স টিমকে ম্যানেজ করে অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে চড়া মূল্যে বিল আদায়ের মধ্য দিয়ে ভূমিদস্যু চক্র নিজেদের আখের গোচাচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারের দফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা এলেই কর্মকর্তারা পাহাড় নিয়ে মেতে ওঠেন। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে বর্ষার প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে যাওয়া ও জনমানবের প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা নিয়ে শুরু হয় বৈঠক। বৈঠকে যারা কমিটির সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকেন তারা সকলেই ‘যে কোন মূল্যে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়া অথবা উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়া’ বিষয় নিয়ে মেরাথন বৈঠক শেষ হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে প্রশাসনের তোড়জোড়। এমনকি ভূমিদস্যুরা সরকারী উর্ধতন আমলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবৈধ পথে আবারও বর্ষা মওসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের অবস্থানে তথা পাহাড়ের পাদদেশে বা চূড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থেকে যায়। ২০০৭, ২০১২ সালে পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনায় যেসব ভূমিদস্যু জড়িত ছিল দীর্ঘ প্রায় আট বছরেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিভাগীয় কমিশনার দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জুন বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া পাহাড় রক্ষা ও পুনর্বাসন কমিটির বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আসন্ন বর্ষাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা।
×