ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জনস্বার্থের মামলা বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে, মানুষ পাচ্ছে অধিকার

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৬ জুন ২০১৫

জনস্বার্থের মামলা বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে, মানুষ পাচ্ছে অধিকার

বিকাশ দত্ত ॥ উচ্চ আদালতের ওপর চাপ বাড়লেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জনস্বার্থের মামলা। প্রতি সপ্তাহেই জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের হচ্ছে, রুল ইস্যুর পর সেই কাজ দ্রুত সমাধাও হচ্ছে। আইনজীবীরা বলেছেন, স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন না করায় জনস্বার্থে মামলা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের রায়ের পর জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাচ্ছে। এতে জনস্বার্থে দায়ের মামলাগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আইনজীবীদের মতে ‘জনস্বার্থের মামলা’ প্রথম ওঠে আমেরিকায় ১৯৬০ সালে। পরবর্তীতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও এটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জনস্বার্থ রক্ষায় হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ, ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ (বেলা) মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো কয়েক হাজার মামলা করেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মামলাতেই আদালত রুল জারি করেছে। এই ধারণা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিকাশমান একটি ধারা। ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সংখ্যার হিসাবে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার অগ্রগতি খারাপ নয়। মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আদালত অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করছে। আদালতের স্বপ্রণোদিত এখতিয়ার জনস্বার্থমূলক মামলার এখন একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। জনস্বার্থে সর্বাধিক রিটকারী এ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ জনকণ্ঠকে বলেন, জনস্বার্থে মামলা করি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলে আমাদের মামলা নিয়ে দৌড়াতে হতো না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে জনস্বার্থে মামলা হচ্ছে। উচ্চ আদাালতের রায়ের পর জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাচ্ছে। কাজেই এখন জনস্বার্থে দায়ের মামলাগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উপমহাদেশের জনস্বার্থমূলক মামলায় অগ্রণী দেশ হিসেবে গণ্য করা হয় ভারতকে। বাংলাদেশে পিআইএল দায়েরের ক্ষেত্রে প্রয়াত ড. মোহিউদ্দিন ফারুক অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত। তাঁর সমধিক পরিচিত ফ্যাপ ২০ নামের মামলাটি বাংলাদেশে পিআইএলের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই মামলার মাধ্যমেই বাংলাদেশে পিআইএলের আনুষ্ঠানিক বিচার বিভাগীয় স্বীকৃতি মেলে এবং একটি সুসংগঠিত প্রাতিষ্ঠানিক ধারা গড়ে ওঠে। ভারতে হাইকোর্টে বিচারক সংখ্যা ও একজন অতিরিক্ত বিচারকের চাকরি সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে একদল আইনজীবী একটি মামলা করেন। ‘এসপি গুপ্ত বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলায় ওই আবেদনকে আদালত জনস্বার্থমূলক মামলা বলে আমলে নেন। পাকিস্তানে ‘বেনজির ভুট্টো বনাম ফেডারেশন অব পাকিস্তান’ মামলাটিকে সে দেশের আদালত জনস্বার্থমূলক মামলার প্রথম নজির হিসেবে মনে করে থাকেন। ভারত, পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশেও জনস্বার্থমূলক মামলার প্রতি দিন দিন প্রত্যাশা বাড়তে থাকে। বাংলাদেশে পিআইএল দায়েরের ক্ষেত্রে প্রয়াত ড. মোহিউদ্দিন ফারুক অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত। তার সমধিক পরিচিত ফ্যাপ ২০ নামের মামলাটি বাংলাদেশে পিআইএলের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ মামলার মাধ্যমেই বাংলাদেশে পিআইএলের আনুষ্ঠানিক বিচার বিভাগীয় স্বীকৃতি মেলে এবং একটি সুসংগঠিত প্রাতিষ্ঠানিক ধারা গড়ে ওঠে। সুপ্রীমকোর্ট বার সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, জনস্বার্থে মামলা করা না হলেও আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে ওই জাতীয় ঘটনায় আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ প্রদান করেন। সংবিধান হেফাজতের দায়িত্ব সুপ্রীমকোর্টের। ফলে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ সাংবিধানিক ক্ষমতার চর্চা করে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করা, আদেশ-নির্দেশ দেয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগকে কার্যত কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। এতে বেআইনী ঘটনায় সম্পৃক্তরা বিরত হচ্ছে। আইন ও বিধি মোতাবেক রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনায় বড় ধরনের পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। পরিবেশ ও আইনের বাস্তবায়নে সম্মত অবস্থান প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), ব্লাস্ট ও মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), জনস্বার্থে মামলা করে আসছে। ব্লাস্ট ১৯৯৮ সাল থেকে জনস্বার্থে মামলা কার্যক্রম করে আসছে। সম্প্রতি বেশকিছু মামলা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর প্রিপ্যারেটরি স্কুল এ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টাকারীকে শনাক্ত করতে রিট, গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইনে অসৎ উদ্দেশ্যে ঘর (ধান্ধাবাজির ঘর) নির্মাণের ঘটনা তদন্ত চেয়ে রিটসহ অন্যান্য।
×