ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীজুড়ে এখন শুধু আম আর আম

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৬ জুন ২০১৫

রাজশাহীজুড়ে এখন শুধু আম আর আম

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ অপরিপক্ক আমে কেমিক্যালের মিশ্রণ নয়, এবার উপযুক্ত সময়ে পাকা আমে ভরে উঠেছে রাজশাহীর বাজার। আমের জন্য প্রসিদ্ধ রাজশাহীজুড়ে এখন আম আর আম। শহরের পাড়া মহল্লার অলিগলি থেকে গ্রামের হাটবাজার সর্বত্রই এখন আমের রাজ্য। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে এবার সঠিক সময়ে জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজার। তাই আমকেন্দ্রিক বাণিজ্য নিয়ে এখন ব্যস্ত রাজশাহীর হাজারো মানুষ। গত কয়েকদিন থেকেই আমের কারবার শুরু হয় রাজশাহী অঞ্চলে। তবে শুক্রবার থেকে ব্যাপকতা লাভ করে আমের বাজারে। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার এখন আমে ভরপুর। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের দু’পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাজারের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই সবার আগে পাকা আমের সুবাসিত গন্ধ নাকে আসে। দৃষ্টি দিলেও দেখা মিলবে আমের রাজ্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বড় বড় ব্যবসায়ীর আনাগোনায় এখন জমে উঠেছে আমের বড় হাটটি। গোপালভোগ, মোহনভোগ, হিমসাগর, লখনা, ল্যাংড়াসহ হরেক প্রজাতির আঁটি আম উঠেছে এ হাটে। শুধু হাট নয়, হাটের সীমানা পেরিয়ে বাগান ও রাস্তাঘাটেও শুধু আম আর আম। কয়েকদিন আগেও যে আম বাগানে শোভা ছড়াচ্ছিল সেই আম এখন এসেছে ব্যবসায়ীদের ঝুড়িতে। শুক্রবার বানেশ্বর বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। ব্যবসায়ী ও আম বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে জমায়েত হচ্ছেন এই হাটে। ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ বাগান মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করছেন, কেউ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাইকারি কিনে নিয়ে পাঠাচ্ছেন রাজশাহীর বাইরে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের ব্যবসায়ীর কাছে। আবার অনেকে নিজ গাছের আম পেড়ে নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। তবে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় সঠিক দাম পাচ্ছেন না বলে মনে করেন আম ব্যবসায়ীরা। বানেশ্বর হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী (আড়তদার) মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে আমের রাজা বলে পরিচিত গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ২৩ থেকে ২৪শ’ টাকা দরে। এর বাইরে নতুন উঠা হিমসাগর ১৪ থেকে ১৫শ’, ল্যাংড়া ১৫ থেকে ১৬শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন গুটি জাতের আম বিক্রি করা হচ্ছে মণপ্রতি ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। বানেশ্বর বাজারে আম বেশি এসেছেন জেলার দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট এবং পুঠিয়ার বিভিন্ন বাগান থেকে। এই বাইরে পবা, মোহনপুর, বাগমারা এবং জেলার বাইরে নাটোরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও। এরপর সেগুলো পাইকারি কিনে নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ নানা জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে এবার একসঙ্গে অতিরিক্ত আম বাজারে আসার কারণে এখন দাম অনেকটাই কম। কিন্তু এই দাম হয়ত কয়েকদিনের মাথায় বেড়ে যাবে। বানেশ্বর বাজারে আম বিক্রি করতে এসেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আমানুল কবির বলেন, নিজের গাছের বাছাই করা আম বাজারে নিয়ে এসেছি। এই আম কেবলই পাকতে শুরু করেছে, তাই ক্রেতার সুবিধার্থে তা সরাসরি বাজারজাত করতে শুরু করেছি। অপর ব্যবসায়ী মোর্শেদ আলী বলেন, বানেশ্বর হাটে দেদার আমের কেনাবেচা শুরু হয়েছে। পুঠিয়ার ভাড়য়া গ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী বাবর আলী জানান, গরমে আম তাড়াতাড়ি পেকে যাচ্ছে। সবাই আম নিয়ে আসছে তাই আমের দাম অনেক কম। প্রতিদিন তিনি সাত থেকে আট মণ আম নিয়ে এসে পাইকারি দরে বিক্রি করে যাচ্ছেন বলেও জানান। ব্যবসায়ীরা জানান, কেমিক্যাল মেশানো আম ধরা পড়লে নগদ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে তাই ব্যবসায়ীরা যথাসময়ে আম বাজারজাত করা শুরু করেছেন। ফলে এবার কোন আমেই কেমিক্যাল পাওয়া যাবে না। ট্রাক শ্রমিক মামুন বলেন, প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১২ ট্রাক আম পাঠানো হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতি ট্রাকে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ ক্যারেট (প্লাস্টিকের ঝুড়ি) আম পাঠানো হয়। এছাড়া গন্তব্যে সহজে আম পাঠানোর জন্য এরইমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিসগুলো। বানেশ্বর বাজার কিংবা রাজশাহী শহরের যে কোন কুরিয়ার সার্ভিসে আমের কারবারও জোরদার শুরু হয়েছে।
×