ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হারুন হাবীব

মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৬ জুন ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক

ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলই নয়, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় সকল মহলেই ব্যাপক আলোচনা চলছে। সকলেই সফরটিকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন নানান কারণে। বেশিরভাগেরই মত হচ্ছে- মোদির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের মাত্রা আরেক দফা বৃদ্ধি পাবে। ইতিহাসের এ সত্যটি সকলেরই জানা যে, অবিভক্ত পাকিস্তানের ২৪ বছরের মাথায় ১৯৭১-এর ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ভারত ও নতুন জন্ম নেয়া বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিত তৈরি হয়েছিল। সে সম্পর্কের ভিত্তি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতি ভারতীয় সরকার, গণমানুষ এবং দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের নিরঙ্কুুশ সমর্থন- যা ইতিহাসের অমোচনীয় দলিল। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা যখন নির্বিচারে গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছিল, এক কোটি মানুষ যখন তাদের ঘরবাড়ি ফেলে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসম ও মেঘালয়ে পাড়ি দিয়েছিল, ভারত তখন মুখ ঘুরিয়ে নেয়নি। মনুষত্বের দাবিতে সে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছিল। এমনকি বাঙালী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে প্রশিক্ষণ ও গোলাবারুদের ব্যবস্থা করেছিল। বিশ্বে এমনকি শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ভারত বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত তৈরি করেছিল এবং সবশেষে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে এক হয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেছিল যৌথ সামরিক কমান্ডÑ যার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য। মোটকথা, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে দেশ দুটির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ, একাত্তরে রক্ত দিয়ে গড়া। কিন্তু ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে, সে সম্পর্ক টিকে থাকেনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের পর বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানী রাজনীতির পুনরাভিযান শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্বাসিত হয়। সেনাপতি শাসন অধিষ্ঠিত হয়। দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি আসে। ঝুলে থাকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা দ্বন্দ্ব, তিক্ততা ও টানাপোড়েনের অবসান ঘটে ২০১০ সালে, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বহুলালোচিত ভারত সফর করেন। সম্পর্কের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত সে সফরের মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো বেশ কিছু ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সেগুলোর বাস্তবায়নও শুরু হয়। এরপর ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং আসেন বাংলাদেশে, শুরু হয় দুই পড়শীর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ প্রায় সব ধরনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী উদ্যোগÑ যা আগে ভাবা যেত না। আমার বিশ্বাস, দুই দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অটুট থাকলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রগতিশীল এই ধারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও যৌথ প্রগতিতে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করতে পারে। নতুন এই সমঝোতায় বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা সমস্যার সুরাহার পথে দৃঢ় ঘোষণা দেয় এবং তা কার্যকর করে। অন্যদিকে মনমোহন সিংয়ের সফরেই ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন, যা প্রায় চার যুগ ধরে ঝুলে ছিল, তার দ্রুত বাস্তবায়নে একটি ‘প্রটোকল’ স্বাক্ষর করা হয়। কিন্তু সীমিত পার্লামেন্টারি শক্তির অভাবে এবং বিজেপি, তৃণমূলসহ তখনকার বিরোধী দলগুলোর বিরোধিতার মুখে কংগ্রেস সরকার চুক্তিটির বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। ব্যর্থ হয় তিস্তার বহুলালোচিত পানি বণ্টন চুক্তি করতেও। এরপর ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতাসীন হয় ভারতীয় জনতা পার্টি। গুজরাটের বহুল সমালোচিত মুখ্যমন্ত্রী থেকে নরেন্দ্র মোদি দিল্লীর আসনে বসেন। মোদি সরকার নতুন চমকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। তারা ‘নেইবারহুড ফাস্ট’ নীতির বাস্তবায়ন করতে থাকে। ভারতের মতো একটি সুবিশাল গণতান্ত্রিক দেশে, বিশেষত যেখানে রাজ্য সরকারগুলোর হাতে ভূমি-পানিসহ নানান বিষয়ের শক্ত খবরদারি থাকে, সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন কতটা ঝুঁকিপূর্ণÑ তা কংগ্রেস সরকার বুঝেছে। কিন্তু ‘মোদি কারিশমায়’ শেষ পর্যন্ত সঙ্কটটির সার্থক উত্তরণ ঘটে। অনস্বীকার্যভাবেই ২০১৫ সালের মে মাসের ৬ ও ৭ তারিখ ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় মাইলফলক। যে বিজেপি কংগ্রেস আমলে বিলটির বিরোধিতা করেছিল তারাই ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধনে উদ্যোগী হয়। ২৪২ আসনের আইনসভার উচ্চকক্ষের উপস্থিত ১৮১ সদস্য কখনও আগে কোন বিলে একসঙ্গে ভোট দিয়েছেন শোনা যায়নি। কিন্তু অসম্ভবটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ প্রশ্নে। সব মিলিয়ে ঘটনাটা যেন ঠিক ১৯৭১-এর মতো। চার যুগের ব্যবধানে বাংলাদেশ প্রশ্নে গোটা ভারতের ভূমিকা পরিপূর্ণ ইতিবাচক। প্রধানমন্ত্রী মোদি সম্প্রতি বলেছেন, পার্লামেন্টে সীমান্ত চুক্তির অনুমোদনটি ‘বার্লিন ওয়াল’ গুঁড়িয়ে দেয়ার মতোÑ তাঁর এই মন্তব্যকে অস্বীকার করার জো নেই। কারণ বাংলাদেশ চুক্তিটি অনুমোদন করার ৪১ বছর পর ভারত তা করতে সক্ষম হয়েছে। সব মিলিয়ে, আমার বিশ্বাস, ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তির অনুমোদন দুই দেশের সম্পর্ককে ১৯৭১ সালের মতোই সুদৃঢ় করেছে। এলবিএ বা সীমান্ত চুক্তিটি নানান দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। এর বাস্তবায়নে সীমান্তের অচিহ্নিত অংশগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি দু’দেশের ছিটমহল এবং অপদখলীয় ভূমি সমস্যার সমাধান হবে। দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চলে যে ১৬২ ছিটমহল আছে, তাদের মানুষেরা এই প্রথমবারের মতো কোন রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার অধিকার লাভ করবে। রাষ্ট্রহীন যাযাবরের মতো কেটেছে এই মানুষগুলোর জীবন ছয় দশকেরও বেশি। এখন তারা প্রথমবারের মতো তাদের রাষ্ট্র পাবে, দেশ পাবে, অধিকার পাবে। কাজেই সীমান্ত বিলটির অনুমোদন অনেক বিলম্বে হলেও মানবতার দাবি পূরণ করেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রাজনৈতিকভাবে কট্টর কংগ্রেসবিরোধী। কিন্তু ইতিহাসের সত্যনিষ্ঠতা থেকে তিনি কংগ্রেসের ভূমিকা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এমনকি ২০১১ সালে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে চুক্তি বিষয়ে যে ‘প্রটোকল’টি স্বাক্ষর হয় তারও উল্লেখ করতে ভুলেননি কংগ্রেসের ঘোরতর এই প্রতিপক্ষ। ভারতীয় রাজনীতির এই সহনশীল দিকটি প্রণিধানযোগ্য। আরও একটি বিশেষ দিক উল্লেখের দাবি রাখে। রাজ্যসভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩১ সদস্য বিলটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে জোরালো বক্তব্য রাখেন। নিন্দুকেরা যাই বলুন না কেন, নানান চড়াই-উৎরাই সীমাবদ্ধতার পরও ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় আবেগ কাজ করে। সে আবেগ অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত। যারা এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে যুক্তি দেখাবার চেষ্টা করেন, আমার বিশ্বাস, তারা এর মানে বোঝার দূরদৃষ্টি বা আত্মা রাখেন না। পাকিস্তান আমলে ‘ভারত বিরোধিতা’ ছিল রাষ্ট্রীয় পুঁজি। বাংলাদেশ আমলের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ‘ভারত বিরোধিতা’ কারও কারও কাছে রাজনৈতিক পুঁজি। কিন্তু সময় প্রমাণ করেছে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক মনোভাব সত্যিকার রাজনৈতিক পুঁজি হয় না কখনও। এই একুশ শতকের আলো-বাতাসে তো নয়ই। আমরা যেন ভুলে না যাই যে, এই বিলটি যখন আলোচিত হচ্ছিল তখন রাজ্যসভার একজন মাননীয় সদস্য সকল রীতিনীতি ভুলে মাইক হাতে নিয়ে গাইতে শুরু করেন আমাদের সেই অমর সঙ্গীতÑ ‘শোনো, একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ ...’ এবং পিনপতন নীরবতায় সেই গান উপভোগ করেন স্পীকারসহ ১৮১ সাংসদ। এই দুই প্রতিবেশীর নিকটতম সম্পর্ক, আমার বিশ্বাস, নানান কারণেই একটি অনিবার্য সম্পর্ক, যার মূলভিত্তি ১৯৭১, যাকে দূরে সরিয়ে দেয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই, না আছে বাংলাদেশের, না ভারতের। দুই রাষ্ট্রের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে দু’দেশকেই আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতে হবে, পুরনো অবিশ্বাস দূর করতে হবে, পারস্পরিক সমঝোতা ও আস্থার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। ভারত বৃহৎ দেশ, সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র, এশিয়ার অর্থনীতিতে উদীয়মান পরাক্রমশালী শক্তি। এটিও সত্যি যে, অর্থনীতিতে শক্তিশালী এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ভারতের অগ্রগতির প্রতিবন্ধক নয়, পরিপূরক। দুই দেশেই যদি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল রাজনীতির বিকাশ ঘটে তাহলেই কেবল সম্পর্কের প্রার্থিত অগ্রগতি সম্ভব। দুই রাষ্ট্রের কল্যাণেই মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে যৌথ সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে। স্বভাবতই ধারণা করা যায়, জুন মাসের ৬-৭ তারিখে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে শুধু সীমান্ত চুক্তিটি বাস্তবায়িত হবে তাই নয়, একই সঙ্গে কংগ্রেস আমলে শুরু হওয়া সম্পর্কের দিগন্তটি আরেক দফা বেগবান হবে। আমার বিশ্বাস, দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের ব্যাপারটি কেবল ভূমির বিনিময় নয়, বিনিময় পারস্পরিক আস্থারও। চুক্তি মতে, বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১ ছিটমহল ভারত (মোট ১৭ হাজার ১৬০.৬৩ একর) বাংলাদেশকে দেবে। অন্যদিকে ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১ ছিটমহল (মোট ৭ হাজার ১১০.০২ একর) ভারতকে দেবে বাংলাদেশ। ভূমি বিনিময়ের পর ছিটমহলবাসীর পুনর্বাসন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি নিঃসন্দেহে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টি বাণিজ্যিক পরিমাপের বিষয় নয়। ছিটের বাসিন্দাদের নাগরিকত্বের বদল হলেই পূর্বতন রাষ্ট্রের কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে না। যে রাষ্ট্রে ছিটমহলগুলো একীভূত হবে সে রাষ্ট্রকে ওই ছিটমহলগুলোর নাগরিক, যারা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী, তাদের জন্যে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রেও দুই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরী। দীর্ঘ লাগোয়া সীমান্তের দুই পড়শীর মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টনসহ আরও কিছু বিষয় ঝুলে আছে। সমস্যাকে জিইয়ে না রেখে দ্রুত সমাধান করাই মঙ্গল। কারণ দুই দেশেই কিছু না কিছু বিরুদ্ধবাদী থাকেন, যারা সম্পর্ক তিক্ততায় লাভবান হতে চান। স্থলসীমান্ত চুক্তিটি বাস্তবায়নে ভারতের সংবিধান সংশোধন করতে হয়েছে। করতে হয়েছে বাংলাদেশকেও। কাজেই বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি। বাংলাদেশের মানুষ ঐকান্তিকভাবে চায় স্বল্পতম সময়ে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিটির স্বাক্ষর করা হোক। শোনা যাচ্ছে, এবারও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী প্রতিবন্ধক হয়েছেন তিস্তা সমঝোতার। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নে যে দৃঢ়তা দেখিয়েছে, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকলেই আশা করবেন যে, তিস্তার বিষয়েও তারা একই দৃঢ়তা দেখাবেন। কোন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই আশা করতে পারেন না যে, কোন ব্যক্তি বা কোন বিশেষ রাজনীতির কাছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পণবন্দী থাকুক। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলসীমান্ত। বিশ্বে পঞ্চম দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক সীমান্ত এটি। আমার বিশ্বাস, মোদির ঢাকা সফর এবং স্থলসীমান্ত চুক্তিটির বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন গতি তৈরি হবে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শান্তি আসবে, দুই দেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সামনের দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে। বাংলাদেশ ও ভারত এক অবিচ্ছেদ সম্পর্কে বাধাÑ ভূগোলে, ইতিহাসে ও সংস্কৃতিতে। দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধ হয়ে যে মহীরুহ দাঁড়িয়ে আছেন তিনি রবীন্দ্রনাথ, আছেন নজরুল। সেই সঙ্গে আছে ১৯৭১-এর রক্তের বন্ধন। দুই রাষ্ট্রের কল্যাণেই এ বন্ধন অটুট রাখতে হবে। এ বন্ধন যত বেশি শক্ত হবে, তত বেশি লাভবান হবে দু’দেশের গণমানুষ। লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও কলামিস্ট
×