ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যানজট নিরসনে সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান চাই

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৫ জুন ২০১৫

যানজট নিরসনে সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অসহনীয় যানজট নিরসনে রাজধানীর যানবাহন ব্যবস্থাপনার জন্য স্বতন্ত্র সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান দরকার বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনে যানজট নিরসনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অর্থমন্ত্রী এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেছেন, যানজটমুক্ত ঢাকা শহর গড়ে তুলতে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৯ সাল নাগাদ এর কাজ শেষ হবে। অর্থমন্ত্রী সরকারের অন্যান্য উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, যানজট সমস্যা সমাধানে আমাদের চলমান অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে ৩৮ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা শহরের জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস এবং হযরত শাহজালাল (র) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল (র) বিমানবন্দর পর্যন্ত, বিমানবন্দর থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণের রুট সমীক্ষা এবং প্রাথমিক নক্সা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, দ্রুতগতিতে চলছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য চীনের কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। এটা নির্মিত হলে চট্টগ্রামের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের সংযোগ বাড়ার পাশাপাশি যানজট হ্রাস পাবে। এদিকে রাজধানীবাসীর জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট। ক্রমাগত তা বেড়েই চলেছে। শুধু রাজধানীর ভেতরেই নয়, সড়ক-মহাসড়কগুলোতেও সাধারণ মানুষের দীর্ঘ যানজটে তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে চলাচলকারী যানবাহনের অর্ধেকের বেশি চলাচল করে রাজধানীতে। মেগাসিটি ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যাও। কিন্তু সে অনুপাতে রাস্তাঘাট প্রশস্ত বা বিকল্প রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে যৎসামান্য। একটি শহরের জন্য মোট আয়তনের ২২ থেকে ২৫ ভাগ রাস্তা থাকা প্রয়োজন হলেও ঢাকায় এর পরিমাণ মাত্র ৮ ভাগ। এতটুকু রাস্তার মধ্যে অনেক জায়গাতেই অর্ধেক যানবাহন পার্কিংয়ের কারণে বেদখল থাকে। ফলে রাজধানীর এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে কয়েক মিনিটের জায়গায় কয়েক ঘণ্টা সময় লাগছে। প্রতি বছর ঢাকা মহানগরীতে গড়ে প্রায় ২১ হাজার নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। যানবাহনের ভারে রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তারই অবস্থা করুণ। রাজধানীতে বিশেষ করে কাঁচপুর ব্রিজ থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়ক প্রতিদিনই তীব্র যানজটে আক্রান্ত। এতটুকু রাস্তা পেরোতে সময় লেগে যাচ্ছে দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত। এর পাশাপাশি দেশের অন্যতম মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনাসহ সব মহাসড়কেই যানজটের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেও রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ঢাকার অসহনীয় যানজট নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই সঙ্গে দিয়েছিলেন একটি পরামর্শও। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের রাস্তা বড়, কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থা খারাপ। লাইট (ট্রাফিক সিগন্যাল) যখন লাগিয়েছি, লাইটের ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু তা মানার সংস্কৃতি আমাদের নেই। তাহলে এই বাতি লাগানোর মানে কী? ট্রাফিকের শৃঙ্খলা আনতে পারলে যানজটমুক্ত হবে ঢাকা। যানজটের দুর্ভোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ৩০ মিনিটের রাস্তা ৪৫ মিনিট লাগতে পারে। কিন্তু দেড় ঘণ্টা কেন লাগবে? এর সমাধান করতেই হবে। তাই লাইটে (ট্রাফিক সিগন্যাল) শৃঙ্খলা আনতে হবে। যানবাহন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে মুহিত বলেন, আমাদের কি রাস্তাঘাট ছোট? নিশ্চয়ই না। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ছুটির দিনে যখন বের হন নিশ্চয়ই তা উপলব্ধি করেন। দোষ রাস্তার না। সমস্যা আমাদের ম্যানেজমেন্টের।
×