ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে তিন মানবপাচারকারী গ্রেফতার, ১৮ জন উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২ জুন ২০১৫

রাজধানীতে তিন মানবপাচারকারী গ্রেফতার, ১৮ জন উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে পৃথক অভিযানে তিন মানবপাচারকারী গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে পাচারের উদ্দেশে ঢাকায় আনা ১৮ জনকে। পাচারের সঙ্গে জড়িত কোম্পানির কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকার বিষয়ে সুরাহা হতে পারে। রবিবার গভীররাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন আশকোনা বাজারের হোটেল ডিরিফাজে অভিযান চালায়। হোটেল থেকে মোঃ গোলাম রাব্বানী ও মোঃ শাহাদাৎ হোসেন ওরফে মাসুদ নামে দুই মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় পাসপোর্টসহ বিভিন্ন কাগজপত্র। পাচারকারীদের তথ্যমতে ওই হোটেল থেকে উদ্ধার হয় ১৮ জন। যাদেরকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাচারের উদ্দেশে সেখানে জড়ো করা হয়েছিল। উদ্ধারকৃতরা জানান, তাদের অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র পালাউ পাঠানোর কথা ছিল। রবিবার রাতে ডিবির আরেকটি দল রাজধানীর মতিঝিল থানাধীন ফকিরেরপুল জিন্যাট টাওয়ারের সামনে থেকে মানবপাচার মামলার আসামি মোঃ সফিকুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে নেয়া ৫০ হাজার টাকাও উদ্ধার হয়। সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির পশ্চিম বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, কবির আহম্মেদ (৩৮) নামে একজনের তথ্যমতে কবিরসহ পাচারের উদ্দেশে জড়ো করা ১৮ জনকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানকালে পালিয়ে যায় মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত জিএলসি প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহামুদুর রহমান, ম্যানেজার বাবুল হোসেন, ক্যাশিয়ার মোঃ মাহফুজুর রহমান, মোঃ মাহাবুব ও মোঃ ওবাইদুর। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলে উদ্ধারকৃতদের টাকার বিষয়ে সুরাহা হতে পারে। তিনি আরও জানান, পালাউ উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে উদ্ধারকৃতদের পাচারের উদ্দেশে ওই হোটেলে জড়ো করা হয়েছিল। প্রত্যেকের কাছ থেকে পালাউ পাঠানো বাবদ সাত লাখ টাকা করে চুক্তি করে মানবপাচারকারীরা। উদ্ধারকৃতরা প্রত্যেকের কাছ থেকেই প্রায় সাত লাখ টাকা করে নিয়েছে। বেশ কয়েক দফায় উদ্ধারকৃতদের পালাউতে পাঠাতে ব্যর্থ হয় পাচারকারীরা। একাধিকবার তারিখও পরিবর্তন করে। সর্বশেষ গত রবিবার রাতে উদ্ধারকৃতদের পালাউ দেশে পাঠানোর জন্য ওই হোটেলে তুলেছিল মানবপাচারকারীরা। উদ্ধারের পর কবির আহমেদ দক্ষিণখান থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ডিসি নাজমুল আলম জানান, অপর অভিযানে গ্রেফতারকৃত সফিকুল ইসলাম রাজু আহমেদ নামের এক ব্যক্তির আত্মীয় আব্দুর রব ও শাহ আলমের সঙ্গে মালয়েশিয়া পাঠানোর চুক্তি করে। চুক্তি মোতাবেক ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু রব ও শাহ আলমকে মালয়েশিয়া না পাঠিয়ে নানা টালবাহানা করতে থাকে। এর মধ্যে গত ৯ মে রবকে মতিঝিলের ফকিরাপুলের জিন্যাট টাওয়ারের সামনে থেকে সিএনজিতে তুলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। মালয়েশিয়ায় রবকে একটি বাসায় কৌশলে আটকে রাখা হয়। রবের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত সফিকুল ইসলাম রাজুর কাছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দাবি করে। গত রবিবার রাতে রাজু ৫০ হাজার হাজার টাকা নিয়ে শফিকুল ইসলামকে দেয়। ওই সময় ডিবি পুলিশ সফিকুলকে গ্রেফতার করে। ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, মানবপাচার আইনে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজা দেয়ার বিধান আছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সাইফুল ইসলাম ও মোঃ শাহাজাহান উপস্থিত ছিলেন।
×