এমপি হয়ে আসুন ॥ টিআইবি কর্মকর্তাদের রওশন

সংসদ রিপোর্টার ॥ সংসদ পর্যবেক্ষণ না করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কর্মকর্তাদের নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসার আমন্ত্রণ জানালেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, আপনারা স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চান, আমরাও এ নিয়ে কাজ করছি। আমরা চাই আপনাদের মতো লোক পর্যবেক্ষণ করতে নয়, মেম্বার (সংসদ সদস্য) হিসেবে সংসদে আসুক। সে জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই। জাতীয় সংসদের শপথ কক্ষে রবিবার বিরোধী দলের সঙ্গে টিআইবি’র ‘প্রাক-বাজেট আলোচনায়’ রওশন এরশাদ এ আমন্ত্রণ জানান। অনুষ্ঠানে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বিষয়ে তাঁদের সুপারিশ তুলে ধরেন। নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসার বিরোধী দলের নেতার আমন্ত্রণের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সবাই তো এক কাজ...। এ সময় রওশন এরশাদ বলেন, আপনারা যদি সংসদে আসেন, তাহলে আপনাদের ভূমিকা আরও ফলপ্রসূ হবে। আপনারা সংসদের কার্যক্রম দেখবেন, পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রাক-বাজেট আলোচনায় টিআইবি সকল প্রকার সরকারী ক্রয়, কর সংগ্রহ অনলাইন ভিত্তিক নিরীক্ষা চালু, প্রতিরক্ষাসহ সব খাতের তথ্য প্রকাশ, অডিট আইন দ্রুত প্রণয়ন, থোক বরাদ্দ নিরুৎসাহিতসহ ১১ দফার সুপারিশ তুলে ধরে। সুপারিশ তুলে ধরার সময়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা, বৈষম্য নিরসন তথা মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিহার্যতা উপেক্ষা করে উন্নয়ন ও মধ্যম আয়ের দেশের তালিকাভুক্তির স্বপ্ন আপাত দৃষ্টিতে সম্ভব বিবেচিত হলেও স্থায়িত্বের সম্ভাবনার মাপকাঠিতে তা স্বপ্ন বিলাস হিসেবে রূপান্তরিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ‘নবম সংসদের পার্লামেন্ট ওয়াচ প্রতিবেদন’ তুলে ধরে গত বছর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এ সংসদে বিরোধী দল নেই। সংসদে সরকারী দল রয়েছে। বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় সে বিরোধী দল নেই। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে কিনা, এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সেটি পারবে কিনা, বিরোধী দল প্রমাণ করবে। তিনি বলেন, যারা বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের দাবি করছে বা যাদের বিরোধী দল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তারা নিজেরাই কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করবে। সেটা আমরা আশা করব। তবে কথাটা আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলছি, বর্তমান বিরোধী দল এক ধরনের আত্মপরিচয়ের সঙ্কটে আছে। এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার দায়িত্ব তাদেরই ওপর। তারা তাদের ভূমিকার মাধ্যমে এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারে। যদি বাজেটের ওপর বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারেন তারা, দেশবাসীকে প্রমাণ করতে পারেন যে তারা সত্যিকার অর্থেই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে- তাহলে হয়ত যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে সেটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে। পরে টিআইবির মন্তব্য সম্পর্কে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সঙ্গে তাদের যে আলোচনা হয়েছে, আমাদের ভূমিকা নিয়ে তারা কোন সন্দেহ করেনি। উনাদের আমরা বলেছি, আমরা অতীতে যে কাজগুলো করেছি... রাজশাহী, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি থেকে আরম্ভ করে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো আমরা তুলে ধরেছি। ওরা আমাদের বলেছে, জোরালোভাবে আপনাদের ভূমিকা রাখবেন। এই আশা করেছেন। কিন্তু আমাদের ভূমিকা নিয়ে ওরা কোন সন্দেহ করেনি। বৈঠকে টিআইবির পক্ষ থেকে সুপারিশ তুলে ধরে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্য, বৈষম্যের শিকার ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে অধিকতর প্রাধান্য দিতে হবে। বিশেষ করে কৃষি পল্লী উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারী-শিশু-যুব উন্নয়ন, ধর্মীয় নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু ও প্রতিবন্ধী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকির মুখোমুখি জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আলোচনায় বিরোধীদলীয় নেতা ছাড়াও বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও শওকত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া টিআইবির পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়ের, এসএম রেজওয়ান উল আলম, রফিকুল হাসান, জাকির হোসেন খান।