ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেপ ব্লাটারের বিজয়ে ফুটবল বিশ্বে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

সভাপতি হিসেবে ব্লাটারকেই যোগ্য মনে করি ॥ সালাউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩১ মে ২০১৫

সভাপতি হিসেবে ব্লাটারকেই যোগ্য মনে করি ॥ সালাউদ্দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সেপ ব্লাটারই যোগ্য প্রার্থী। বিশ্ব ফুটবলের শাসক সংস্থা ফিফার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে ব্লাটারের বিকল্প নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে যিনি লড়াই করেছেন তাকে ফিফার এ আসনে মানায় না। আর এ কারণে আমার ভোট ব্লাটারের পক্ষে পড়েছে। ফিফা পরিচালনায় অনেক অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। হুট করে কেউ দাঁড়িয়ে গেলে তা মেনে নেয়া যায় না। আমিও মেনে নেইনি বিধায় ব্লাটারকেই ভোট দিয়েছি। তার নেতৃত্বে আগামী চার বছর পরিচালিত হবে বিশ্ব ফুটবল। বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে ব্লাটারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ সফরে এসে তিনি আমার দেশকে সম্মান করেছেন। মোদ্দা কথা, বাংলাদেশের ফুটবলের পরম বন্ধু হিসেবে মনে করি ব্লাটারকে- কথাগুলো গতকাল শনিবার সুদূর সুইজারল্যান্ডের জুরিখ থেকে জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। প্রতিক্রিয়ায় বাফুফে সভাপতি বলেন, ব্লাটার বেশ ভালভাবেই জানতেন বাংলাদেশের ভোট তিনিই পাবেন। ফলে ভোট শেষে শুভেচ্ছা জানাতে ভুল করেননি। রেজাল্ট পরবর্তী তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তিনিও পাল্টা শুভেচ্ছা, অভিনন্দন জানান আমাকে। আমি মনে করি এটা আমাকে নয়, বাংলাদেশকে সম্মান জানিয়েছেন সেপ ব্লাটার। যার মাধ্যমে ফিফার সঙ্গে বর্তমানে যে সুসম্পর্ক রয়েছে তা আরও সুদৃঢ় হবে। উল্লেখ্য, জুরিখ থেকে আজ দেশে ফিরবেন কাজী সালাউদ্দিন। এদিকে, সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সেপ ব্লাটারই নির্বাচিত হলেন ফিফার সভাপতি। ফলে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফায় আরও চার বছরের রাজত্ব করবেন ফুটবলের তুখোড় এই সংগঠক। অথচ নির্বাচনের আগেও দারুণ চাপে ছিলেন ব্লাটার। এমনকি সভাপতির পদ থেকে তাকে অপসারণের মতো বিষয়ও উত্থাপিত হয়েছিল। অনেকেই তার পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। তবে নির্বাচনে জিতে পঞ্চমবারের মতো ফিফার সভাপতি হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে অনেক ঘটনা। যে কারণেই নির্বাচনের পর বিশ্বফুটবলের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠক মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এমনকি কেউ কেউ ফুটবল বিশ্ব দ্বিখ-িত হওয়ার আশঙ্কাও করেছেন। নির্বাচনের আগে গত বুধবার দুর্নীতির দায়ে জুরিখে সাতজন ফিফা কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। আর তা নিয়েই বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। ঘুষের দায়ে অভিযুক্তকারীদের দুজন ছিলেন ফিফার সহসভাপতি। যার ফলেই প্রশ্নের মুখে পড়ে ফিফার কার্যক্রম। তবে নির্বাচনের পর মিশ্র প্রতিক্রিয় প্রকাশ করছেন অনেকেই। সেপ ব্লাটার আরেকবার নির্বাচিত হওয়ায় ফুটবলের শক্তিধর দেশগুলো, বিশেষ করে ইউরোপীয় অংশটি ব্যাপক ক্ষুব্ধ। তাদেরই একজন, হল্যান্ডের ফুটবল সংস্থার (কেএনভিবি) প্রধান বার্ট ফন অস্টফিন হুমকি দিয়েছেন যে, সামনের দিনগুলোতে হয়ত নতুন ফিফা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। সবাইকে সম্মান করেই বলছি, এখানে উপস্থিত ছোট দেশগুলোই সংখ্যাগরিষ্ঠতা গড়ে তুলেছে। অথচ বিশ্ব ফুটবলকে আরও প্রসারিত করতে মূল ভূমিকা রাখছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল, হল্যান্ডসহ আরও কিছু দেশ। এই দেশগুলোর এখন উচিত একেবারে শূন্য থেকে একে অন্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন ফিফা গড়ে তোলা।’ ব্লাটার জয়ী হওয়ায় হতাশ ফুটবল ফেডারেশন অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান ফ্রাঙ্ক লোয়ে। তবে তার বিশ্বাস ব্লাটার সভাপতি হয়ে সংগঠনের বর্তমান চ্যালেঞ্চ মোকাবেলায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন তিনি। এ বিষয়ে তার অভিমত হলোÑ ‘এটা একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। ব্লাটার যথাযথভাবেই নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। ফিফা যে বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে তা ব্লাটার খুব ভালভাবেই জানেন। এ সঙ্কট দূরীকরণে ব্লাটারকে এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। আর ফিফার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ এদিকে ব্লাটারের পুনর্নির্বাচনের ফলে নিজের সহসভাপতির পদ প্রত্যাহার করলেন ডেভিড গিল। ৫৭ বছর বয়সী ডেভিড গিল ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন। সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে এ সময়ের মধ্যেই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। কিন্তু ফিফার সদ্য নির্বাচিত সভাপতি ব্লাটারের সঙ্গে কাজ না করার ঘোষণা দেন তিনি। এ বিষয়ে ডেভিড গিল বলেন, ‘এফএ এবং উয়েফায় আমার অবস্থান ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চালিয়ে যাব। তবে বৃহস্পতিবার উয়েফার সভায় আমার ইউরোপের সতীর্থদের সঙ্গে বিষয়টি ভাগ করেছি যে, ফিফার নির্বাহী কমিটিতে আমি কোন স্থান নিচ্ছি না।’ এদিকে ২০১৮ রাশিয়া ও ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে সব ধরনের সংশয় দূর করে ফিফার সাধারণ সম্পাদক জেরোমি ভালকে নিশ্চিত করেছেন যথাসময়েই পরবর্তী এই দুটি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে চলমান স্ক্যান্ডালের জের ধরে অনেকেই এ দুই বিশ্বকাপ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। মূলত জুরিখে অভিযান চালিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ফিফার শীর্ষ দুই কর্মকর্তাসহ সাতজনকে আটক করার ফলেই সেই সংশয় আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। তবে ভালকে শুক্রবার ফিফা সভাপতি পদে নির্বাচনের পরপরই জানিয়ে দিয়েছেন ফিফার পক্ষ থেকে রাশিয়া ও কাতারে বিশ্বকাপে আয়োজনে কোন বাধা নেই। সব ধরনের তথ্যের ভিত্তিতেই ভালকে গণমাধ্যমে এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন। পুরো তদন্তে ফিফার পূর্ণ সহযোগিতা আছে এবং কোন কিছু ব্যতিক্রমী পাওয়া গেলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে বলেও নিশ্চিত করেন এই ফ্রেঞ্চম্যান।
×