ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগে গোল করেও হার বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৩১ মে ২০১৫

আগে গোল করেও হার বাংলাদেশের

রুমেল খান ॥ বাঘ-সিংহের জমজমাট দ্বৈরথে অবশেষে জয়ের শেষ হাসি হাসল সিংহরাই। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শনিবার বিকেলে ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে মুখোমুখি লড়াইয়ে ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত স্বাগতিক বাংলাদেশকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ‘দ্য লায়ন্স’ খ্যাত সিঙ্গাপুর জাতীয় ফুটবল দল। বাংলাদেশ দলের দুর্ভাগ্য, ম্যাচে আগে গোল করেও (প্রথমার্ধে খেলার স্কোর ছিল ১-১ গোলে) হার মানে অতিথি দলের কাছে। আগামী ১১ জুন কিরগিজস্তান এবং ১৬ জুন তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে ঢাকায় ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব ও ২০১৯ সংযুক্ত আরব আমিরাত এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে অংশ নেবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। সেই ম্যাচ দুটি খেলার আগে সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তান জাতীয় দলের সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। তারই অগ্রধাপ হিসেবে ১৬২ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ১৬৯ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল শনিবার জ্যৈষ্ঠের পড়ন্ত দুপুরে। ম্যাচে জোড়া গোল খেয়েছে বাংলাদেশ দল। ডিফেন্ডার এবং গোলকিপারের ভুলই এর জন্য দায়ী। এটা বাদ দিলে ম্যাচে তুলনামূলক বেশি আক্রমণ করে খেলে স্বাগতিক দলই। পক্ষান্তরে সিঙ্গাপুর গোল খেয়েও কখনই উদ্যম হারায়নি। সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছে। কাউন্টার এ্যাটাক করেছে এবং গোলের দেখাও পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে হাজার পাঁচেক দর্শক ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন। চেনা দর্শক, সমর্থন, মাঠ, আবহাওয়াÑ তারপরও ক্রুইফের শিষ্যরা সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারেননি। ফলে হতাশ হয়েছে দর্শক। তবে তাই বলে ম্যাচ শেষে কিন্তু তারা ফুটবলারদের কোন দুয়োধ্বনি দেয়নি, বরং হাততালি দিয়ে উৎসাহই জুগিয়েছে। তবে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের সময়মতো খেলোয়াড় বদল না করায় দর্শকরা গ্যালারিতে ঠিকই তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ম্যাচ শেষে ফেসবুকে সুহাইল বিন আলম নামের এক ফুটবলপ্রেমী লেখেনÑ ‘আমাদের কয়েকজন খেলোয়াড় মাজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বেঞ্চের সব খেলোয়াড় বসা। আর সিঙ্গাপুরের ট্রেনার তার খেলোয়াড়দের নিয়ে প্র্যাকটিস করাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে গোল খাওয়ার বড় কারণ এটা। ওরা ৫ খেলোয়াড় বদল করে ফেলেছে। আমাদের দুইজন। যদিও হেমন্তকে ফুল ফিট মনে হচ্ছে না। কোচের কোন প্ল্যান ‘বি’ কি কেউ দেখতে পাচ্ছে? আমি অন্তত না। আর এনামুলকে ফরোয়ার্ড থেকে শিফট করিয়ে উইংয়ে খেলানোর কারণ বুঝলাম না।’ সম্রাট মহিম তালুকদার লেখেনÑ ‘কোচ রে কি ধইরা শিখাইতে হবে প্লেয়ার চেঞ্জের কথা?’ অথচ ম্যাচের শুরুতে কিন্তু আক্রমণাত্মক ফর্মেশন নিয়েই খেলে বাংলাদেশ। তারা খেলে ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে আর সিঙ্গাপুর খেলে ৫-৩-২ পদ্ধতিতে। ফুটবলপ্রেমীরা আশা করেছিলেন অসুস্থ থেকে সুস্থ হয়ে এ ম্যাচে খেলবেন উইঙ্গার জাহিদ হোসেন এবং ফিলিপিন্স লীগ খেলে আসা জার্মান প্রবাসী রিয়াসাত ইসলাম (পাসপোর্টে ভুলে আগে লেখা হয়েছিল রিয়াসাত খাতন, পরে সেটা সংশোধন করা হয়), কিন্তু দু’জনের কাউকেই খেলাননি কোচ। জাহিদ সাইডবেঞ্চেই ছিলেন না। তবে ছিলেন রিয়াসাত। কিন্তু রিয়াসাতের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েনি। দীর্ঘ ৫ বছর পর জাতীয় দলে ফিরে ম্যাচে আহামরি তেমন কিছু করতে পারেননি স্ট্রাইকার এনামুল হক। দলের একমাত্র গোলদাতা নাসিরকেও একপর্যায়ে উঠিয়ে নেয়া হয়। সবমিলিয়ে দিনটা আসলে বাংলাদেশের হয়নি। খেলা শুরুর ৪ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বা প্রান্ত থেকে অধিনায়ক-মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলামের ফ্রি কিকে চমৎকারভাবে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন ডিফেন্ডার নাসির উদ্দিন চৌধুরী (১-০)। ১১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে করা হেমন্তর গড়ানো শট আটকে দেন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক-অধিনায়ক আব্দুল্লাহ সানি। ১৭ মিনিটে সিঙ্গাপুরের ডিফেন্ডার বিন ইসা নায়েনের চমৎকার ফ্রি কিকটি বাংলাদেশ গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম ফিস্ট করে দলকে রক্ষা করেন। ২৪ মিনিটে মামুনুলের কর্নার বক্সে পেয়ে ফরোয়ার্ড সোহেল রানার শট প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক পা দিয়ে বল পাঠান মাঠের বাইরে। ৩১ মিনিটে বা প্রান্ত থেকে ডিফেন্ডার হাফিজ বিন আবু সাজিদের ক্রস থেকে হেড নেন সিঙ্গাপুর ফরোয়ার্ড নওয়াজ হামিদ। বল ডান পোস্টে লেগে অল্পের জন্য জালে ঢোকেনি। কিন্তু ফিরতি বল বক্সে ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার ইয়ামিন মুন্না। বল চলে যায় নওয়াজের পায়ে। তীব্র শটে গোলরক্ষক মাজহারুলকে পরাস্ত করেন হামিদ (১-১)। ৫১ মিনিটে মামুনুলের কর্নার বক্সে পেয়ে হেড নেন ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান, কিন্তু অল্পের জন্য তা গোল হয়নি। ৬৩ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে বল নিয়ে ঢুকে ফরোয়ার্ড এনামুল হক ক্রস দিলে বক্সে বল পেয়ে শট নেন হেমন্ত। কিন্তু গোলরক্ষক সানি বল ফিরিয়ে দেন। ৭৩ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে জোরালো শটে বাংলাদেশের জালে বল পাঠান ফরোয়ার্ড এম কামাল (২-১)। ৮৭ মিনিটে বক্সের মধ্যে গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন হেমন্ত। রেফারি মিজানুর রহমান খেলা শেষের বাঁশি বাজালে ২-১ গোলের হার নিয়েই মাঠ ছাড়েন মামুনুল বাহিনী। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’ খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশ দল সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। সে আসরে বাংলাদেশ দল রানার্সআপ হয়। সিঙ্গাপুরও খেলে। তবে সেটা ছিল তাদের যুব দল। তারা সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছিল। এটি ছিল বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুরের মধ্যে তৃতীয় ম্যাচ। আগের দুটি ম্যাচই ড্র হয় ১-১ গোলে (কুয়ালালামপুর, ১৯৭৩ এবং কাঠমান্ডু, ১৯৮৬ সালে)। বাংলাদেশের পরের (দ্বিতীয়) প্রস্তুতি ম্যাচ আফগানিস্তান জাতীয় ফুটবল দলের বিরুদ্ধে, আগামী ২ জুন, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে, বিকেল ৪টায়। এ উপলক্ষে আফগান দল বিমানযোগে ঢাকায় পৌঁছেছে বেলা পৌনে তিনটায়।
×