ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

কিশোরগঞ্জের হাসান আলীর মামলার রায় শীঘ্র

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩১ মে ২০১৫

কিশোরগঞ্জের হাসান আলীর মামলার রায় শীঘ্র

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর মামলার রায় শীঘ্রই ঘোষণা করা হতে পারে বলে প্রসিকিউশন পক্ষ আশা করছে। ২০ এপ্রিল হাসান আলীর পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখে ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাটি রয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এদিকে প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর ব্যরিস্টার তাপস কান্তি বল জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা আশা করছি শীঘ্রই পলাতক হাসান আলীর মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। এটি হলে আর কোন মামলা রায় ঘোষণার জন্য সিএভিকৃত নেই। এদিকে মামলার অন্যতম প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী বলেছেন, হাসান আলীর বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আশা করছি তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। হাসান আলীর পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবদুস শুকুর বলেছেন, হাসান আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আমাদের প্রত্যাশা, সব অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন হাসান আলী। কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শরু হয় ২০১৩ সালের ৬ জুন। তদন্ত শেষ হয় ২০১৪ সালের ২৯ জুন। ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয় ২০১৪ সালের ২২ আগস্ট। একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল ডিফেন্স পক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের উপর শুনানি শুরু হয়। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ। চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শুরু হয়। আর শেষ হয় ২০ এপ্রিল। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়। হাসান আলীর বিরুদ্ধে মোট ৬টি অভিযোগ গঠন করা হয়। হাসান আলীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ॥ হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধে সৈয়দ হাসান আলীর বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৭ এপ্রিল সহযোগী রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার সাচাইল গ্রামের হাসান আহমদ ওরফে হাসু ব্যাপারীর ৭টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন তিনি। পরে হাচান আহম্মেদ হেচুকে গুলি করে হত্যা করেন। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৩ আগস্ট তাড়াইল থানার বাড়তি ইউনিয়নের কোনা ভাওয়াল গ্রামের শহীদ তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া ওরফে লালু ভূঁইয়াকে হত্যা করে দুটি ঘরে লুণ্ঠন এবং দুজনকে অপহরণ ও আটক করেন হাসান আলী। তৃতীয় অভিযোগ হলো, একাত্তরের ৯ সেপ্টেম্বর তাড়াইল থানার শিমুলহাটি গ্রামের পালপাড়ার অক্রুর পালসহ ১২ জনকে হত্যা এবং ১০টি ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ। ঘর থেকে পুরুষরা বের হওয়ার পর তাদের ধরে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে হাসান ও তার সহযোগীরা। যাদের হত্যা করা হয় তারা হলেন অক্রুর চন্দ্র পাল, শরৎ চন্দ্র পাল, সুরেশ চন্দ্র পাল, উপেন্দ্র চন্দ্র পাল, গোবিন্দ চন্দ্র পাল, ধরণী চন্দ্র পাল, যোগেশ চন্দ্র পাল, দীনেশ চন্দ্র পাল, যতীন্দ্র পাল, রাখাল চন্দ্র পাল ও মোঃ সুরুজ আলী। চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার তাড়াইল থানার ভোরগাঁও গ্রামের বেলংকা রোডে সতীশ ঘোষসহ ৮ জনকে হত্যা ও ১০ জনকে অপহরণ ও লুটপাটে নেতৃত্ব দেন হাসান আলী। ওই দিন ময়মনসিংহ জেলার (বর্তমান নেত্রকোনা জেলা) কেন্দুয়া থানার পাকুড়া গ্রামে ৮ জন পুরুষ ও ৪-৫ জন নারী ভারতে যাওয়ার জন্য নৌকাযোগে তাড়াইলে আসেন। নৌকার ৮ যাত্রীকে নিচে নামিয়ে এনে গুলি করে হত্যা করেন হাসান ও তার সহযোগীরা। নৌকার ছইয়ের ওপর থেকে আরও তিনজনকে নামিয়ে আনা হয়। যাদের হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেন মঞ্জুবালা ঘোষ, সুরেশ চন্দ্র ঘোষ, জগদীশ চন্দ্র ঘোষ, কৃষ্ণ চন্দ্র ঘোষ শিবু, সুকুমার ঘোষ, রুহিনী চন্দ্র ঘোষ প্রমুখ। পঞ্চম অভিযোগ হলো, একাত্তরের ৮ অক্টোবর শুক্রবার হাসান আলীর নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী তাড়াইল থানার তাল জাঙ্গলা ইউনিয়নের আড়াইউড়া গ্রামের চামেলী কুমার ঘোষের বসতবাড়িতে হামলা করে কামিনী কুমার ঘোষ ও জীবনকৃষ্ণ ঘোষকে হত্যা করে ও ৬টি ঘরে লুটপাট চালায়। রাজাকার বাহিনী জীবনকৃষ্ণ ঘোষের স্ত্রী মিলন রানী চক্রবর্তীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘর থেকে সোনা-রুপার অলঙ্কার লুট করে নেয়। এরপর জীবনকৃষ্ণ ঘোষকে রাইফেলের বাঁট দিয়ে আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর রাজাকার হাসান আলীর নির্দেশে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাজাকার বাহিনী পরে কামিনী কুমার ঘোষকেও ধরে এনে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে গুলি চালালে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে তিনি মারা যান। তার বিরুদ্ধে ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১১ ডিসেম্বর তাড়াইল থানার সাচাইল গ্রামের রাশেদ আলী ব্যাপারীকে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই দিন রাজাকার বাহিনীর ৪০-৫০ জন সদস্য আবদুর রশিদের বাড়ি ঘেরাও করে। তারপর তাকে ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে হাসান আলীর নেতৃত্বে ওই গ্রামে লুটপাট চালানো হয়। ওই দিন ৬৪টি হিন্দু পরিবারের ১০০টি ঘরও পুড়িয়ে দেয়া হয়।
×