ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরে উদ্ধার ২০৮ অভিবাসী উখিয়া সীমান্তে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩০ মে ২০১৫

সাগরে উদ্ধার ২০৮ অভিবাসী উখিয়া সীমান্তে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের জলসীমা থেকে উদ্ধারকৃত ২০৮ জন অভিবাসীর দলটিকে উখিয়া সীমান্ত এলাকার ওপারে এনে জড়ো করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। বিজিবি এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, কোন ধরনের পুশব্যাক করার অপতৎপরতা এখনও লক্ষণীয় না হলেও পুরো সীমান্ত এলাকা জুড়ে বিজিবি টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। অপরদিকে, ব্যাঙ্ককে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে সতের দেশীয় একদিনের আঞ্চলিক সম্মেলন চলা থাকাকালীন সময়ে আন্দামান সাগরের নিজস্ব জলসীমা অভ্যন্তর থেকে ভাসমান আরও ৭২৭ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপ-প্রধানমন্ত্রী জেনারেল থানাসাক ফাতিমা প্রাকর্ণ এ তথ্য জানালেও এ ৭২৭ অভিবাসী কখন উদ্ধার হয়েছে তা খোলাসা করেননি। এদিকে, আন্দামান সাগর থেকে অভিবাসী উদ্ধারে থাইল্যান্ডের জলসীমা ব্যবহারে মার্কিন সেনাবাহিনীকে অনুমতি দিয়েছে থাই সরকার। এছাড়া শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অভিবাসন সমস্যা নিয়ে সতেরো দেশের আঞ্চলিক সম্মেলন কোন ফলাফল ছাড়াই সমাপ্ত হয়েছে। ওই সম্মেলনে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আবারও রোহিঙ্গা মুসলমানদের সে দেশের নাগরিকত্ব না দেয়ার ব্যাপারে তাদের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে বলা হয়েছে, মানব, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বন্ধে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। মানবপাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার ভোরে টেকনাফ থানা পুলিশ আরও ৩ দালালকে গ্রেফতার করেছে। উখিয়া সীমান্তে ২০৮ অভিবাসী ॥ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি সীমান্তের ওপারে সে দেশের ঢেকিবুনিয়ায় ২০৮ অভিবাসীকে এনে জড়ো করেছে। এ ২০৮ অভিবাসীকে গত ২২ মে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে উদ্ধার করে সে দেশের নৌবাহিনী। কক্সবাজার সদর ১৭ বিজিবি ব্যাটেলিয়ন দফতর সূত্রে শুক্রবার বিকেলে জানানো হয়, গত ৩/৪ দিন আগে উদ্ধারকৃত এসব অভিবাসীকে বালুখালি ঘুমধুম সীমান্ত পয়েন্ট এলাকার ঢেকিবুনিয়ার বিজিপি (মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ) এর ১নং হেডকোয়ার্টারের ক্যান্টনমেন্টের ব্যারাকে এনে রাখা হয়েছে। এসব অভিবাসীদের ইউএনএইচসিআর, আইএমওসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার পক্ষ থেকে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ ২০৮ জনকে পুশব্যাক করার অপতৎপরতা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ১৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল আলম শুক্রবার জানান, বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে আগেই চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে উদ্ধারকৃত ২০৮ অভিবাসীর মধ্যে বাংলাদেশী নাগরিক হিসাবে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের দেশে ফেরত আনা হবে। এ ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রেরিত তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনাধীন রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়ে বাংলাদেশী হিসেবে প্রমাণিতদের নিয়ে আসতে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ উদ্ধারকৃত ওই ২০৮ অভিবাসীকে ২৩ মে ফেরত পাঠাতে উদ্যত হয়। কিন্তু বিজিবির পক্ষ থেকে এদের বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত ফেরত নিতে আগ্রহী নয় বলে জানিয়ে দেয়া হলে তখন বিজিপির পক্ষ থেকে ওই ২০৮ জনের তালিকা পাঠানো হয়। যা এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনাধীন। এছাড়া এ ঘটনা নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে তখন মিয়ানমারের মংডু শহরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হলেও সে দেশের পক্ষ থেকে কোন সিগন্যাল না আসায় ওই প্রস্তুতি স্থগিত হয়ে যায়। এদিকে, উখিয়া সীমান্ত এলাকার লোকজন জানাচ্ছে, বিজিপির পক্ষ থেকে এদের যেকোনভাবেই বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হতে পারে। কারণ, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এ ২০৮ জনকে উদ্ধারের পর পরই জানিয়ে দিয়েছে এরা বাংলাদেশী। অথচ, বিজিপি নিশ্চিত এদের অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। বাংলাদেশী থাকলে ফেরত আনা হবে। বিজিবি সূত্র জানায়, এদের জোরপূর্বক পুশব্যাক করার কোন সুযোগ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের নেই। এরপরও যদি এমন তৎপরতা নেয়া হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে বিজিবি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটারব্যাপী সীমান্ত এলাকার প্রতিটি পয়েন্টে বিজিবি টহল ইতোমধ্যে আরও জোরদার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, টেকনাফ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত দু’দেশেরই স্থল সীমান্ত বিস্তৃত। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের সীমান্ত এলাকা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সংরক্ষিত করে রাখতে পারলেও বাংলাদেশ এখনও পারেনি। আর এ কারণেই সীমান্ত গলিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। মিয়ানমার উপকূলে উদ্ধার আরও ৭২৭ ॥ শুক্রবার থাই কর্তৃপক্ষ বলেছে, আন্দামান সাগরে তাদের জলসীমা অভ্যন্তর থেকে ভাসমান আরও ৭২৭ অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশীদের উদ্ধার করেছে সে দেশের নৌবাহিনী। দেশীয় গডফাদাররা চোরাপথে ফিরছে ॥ মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে মানবপাচারকারীদের ধরপাকড় অব্যাহত থাকায় সেখানে থাকা মানবপাচার নিয়ন্ত্রণকারী দেশীয় গডফাদার ও দালাল চক্রের সক্রিয় সদস্যরা পালিয়ে আসতে শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কেউবা আকাশ পথে, কেউবা সাগর পথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও হাতিয়া এলাকা দিয়ে দেশে ঢোকার খবর পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে। তিন দালাল গ্রেফতার ॥ টেকনাফ থানা পুলিশ সাবরাং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ জন মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে। উখিয়ায় ফিরে এসেছে ৩ কিশোর ॥ সাগরে ভাসমান ট্রলারে অনাহারে ও দালালের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কক্সবাজারের উখিয়ার তিন কিশোর ৪০ হাজার টাকা হারে মুক্তিপণ দিয়ে সাগর থেকে ফিরে এসেছে নিজ এলাকায়। কক্সবাজার অঞ্চলে নিখোঁজ দুই হাজার ॥ কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় দুই হাজারের মত যুবক-কিশোর মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিয়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে বেরিয়ে আসছে। তন্মধ্যে শুধু টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে আছে ৫ শতাধিক।
×