মোস্তফা কাদের, বরগুনা ॥ ২৯ মে, বরগুনাবাসীর জন্য রক্তাক্ত স্মৃতি বিজড়িত দিন। একাত্তরের এই দিনে বরগুনা জেলখানায় আটককৃত নিরীহ বাঙালীদের গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পাক হানাদার বাহিনীর রোষানলের শিকার হয়ে অনেক মুসলমান সেদিন কবরের সাড়ে তিন হাত জায়গা পায়নি, হিন্দুরা পায়নি আগুনের ছোঁয়া। তাদের দেয়া হয়েছে একই গর্তে মাটি চাপা। নারীদের করা হয়ছে গণধর্ষণ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ২৭ মে মেজর নাদের পারভেজের নেতৃত্বে পাক হানানদার বাহিনী বরগুনায় প্রবেশ করে। তৎকালীন গণপূর্ত ডাকবাংলোয় অবস্থান নেয় বর্বর এ বাহিনীর সদস্যরা। ২৭ মে রাত থেকেই শুরু হয় ধর-পাকড়। তাদের সহায়তা করে দেশীয় রাজাকার আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। তারা মুক্তিকামী পরিবারে হানা দিয়ে পুরুষ মহিলাদের হাত পিছন মোড়া করে বেঁধে নিয়ে আসে ক্যাম্পে। এখান থেকে যুব মহিলাদের পাঠানো হয় ডাকবাংলোয় আর পুরুষদের পাঠানো হয় জেলখানায়। পৈশাচিক নির্যাতন শেষে মেয়েদের পরের দিন ছেড়ে দেয়া হয়। আর বলা হয় পুরুষরা ছাড়া পাবে দু’দিন পরে কিন্তু তাদের দেখা পায়নি পরিবারের সদস্যরা। ২৯ ও ৩০ মে মুক্তিযুদ্ধের জঘন্যতম ঘটনা ঘটে বরগুনার জেলখানায়। কারা অভ্যন্তরে ২৯ মে সকালে সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয় ৪২ জন মুক্তিকামী জনতাকে। এদের মধ্যে তৎকালীন বরগুনার ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান পনু মিয়াও ছিলেন। পরের দিন সকালে একইভাবে আরও ৩৪ জনকে হত্যা করা হয়। এসব মুক্তিযোদ্ধাদের লাশও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। জেলখানার পশ্চিম পার্শ্বে গণকবরে মাটি চাপা দেয় তাদের। গুলি খেয়েও যারা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তাদের বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে ও কোদাল দিয়ে পিটিয়ে হত্যা নিশ্চিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে অনেক নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। তবে জেলখানার অভ্যন্তরে গণহত্যার ঘটনা বিরল। শুধু হত্যাই নয়। রাজাকারদের সহযোগিতায় তৎকালীন সময়ে গণপূর্ত বিভাগের ডাকবাংলায় বাঙালী নারীদের বেছে বেছে ধরে এনে দিনের পর দিন গণধর্ষণ চালিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনীরা।
বরগুনা জেলা শাখার ডেপুটি কমান্ডার মোতালেব মৃধা বলেন, যারা মুক্তিকামী মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে সেসব যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার শান্তি দেয়া হোক।