ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৯ মে ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ কিছুদিন আগেও শোনা যেত- এভাবে চলতে থাকলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে রাজধানী শহর ঢাকা। যারা বলতেন, আশঙ্কা নিয়েই বলতেন। তবে মনে মনে চাইতেন, চার শ’ বছরের ঢাকা বাঁচুক। বেঁচে থাকুক। কিন্তু না, পতনই দেখতে হচ্ছে শুধু। ঠিক এই মুহূর্তে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষের বাস এই শহরে। বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার চাপ ছাড়াও এখানে আছে আরও অনেক অসংখ্য সমস্যা। নগরবিদরা শহরটিকে বসবাসের যোগ্য বলতে নারাজ। কিছুদিন আগের কথাই ধরা যাক, বিশ্বের বসবাস অযোগ্য ১০ শহরের তালিকায় যথারীতি এসেছে ঢাকার নাম। ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের’ (ইআইইউ) তৈরি করা তালিকার দ্বিতীয় স্থানে এখন বাংলাদেশের রাজধানী। বরাবরই থাকছে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্থানে। এর পরও অবস্থার উন্নতি কল্পে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই। কিছুতেই ঢাকা যাচ্ছে না ঢাকার লজ্জা। ঘটনা দুর্ঘটনা লেগেই আছে। সর্বশেষ বুধবার সকালে পান্থপথে একটি বহুতল ভবনের পাইলিং কাজের সময় পাশের দেয়াল ও রাস্তার বিশাল অংশ ধসে পড়ে। উপরিভাগের মাটি অন্তত দু’শ’ ফুট গভীরে নেমে যায়। সৌভাগ্য বলতে হবে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বড় কোন দুঃসংবাদ এখান থেকে আসেনি। তবে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে সুন্দরবন হোটেল। হোটেলের নিচতলায় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। হোটেলের পাশে থাকা প্রায় দেড়শ ফুট দেয়াল ও বাথরুম ধসে পড়েছে। এ অবস্থায় যখন তখন হোটেল ভবনটি মুখথুবড়ে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এরই মাঝে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এখানে কাজ শুরু করেছে বটে। সুন্দরবন হোটেলের ধসে পড়া অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করার কাজ চলছে দিন রাত। আরও ভালোর আশায় এ কাজে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। বৃহস্পতিবার এলাকাটি পরিদর্শনে গিয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তা চান তিনি। এর পরও আশঙ্কা কাটছে না। শত শত সাধারণ মানুষ ভিড় করেছেন ওই এলাকায়। পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সুন্দরবন হোটেলের দিকে তাকিয়ে থাকছেন। সকলেরই প্রার্থনাÑ বড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে এ শহর রক্ষা পাক। গত সপ্তাহে ঢাকায় ঘটেছে অত্যন্ত কলঙ্কজনক একটি ঘটনা। শহরের কুড়িল-বিশ্বরোডে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে এক গারো তরুণীকে ধর্ষণ করে দুই বখাটে। পহেলা বৈশাখ টিএসসি এলাকায় নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে সরব যখন গোটা শহর, ঠিক তখন আরও একটি বর্বর ঘটনা। সঙ্গত কারণেই রাগে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন রাজধানীবাসী। শুরু হয় প্রতিবাদ। পুলিশও তৎপর হয়। ফলে আশরাফ খান তুষার ও লাভলু নামের দুই অপরাধীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। বুধবার র‌্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন তুষার ও লাভলু। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে ওই আদিবাসী গারো তরুণীকে তারা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলেও জানান ওই র‌্যাব কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার পাপিষ্টদের দশদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শহরে চুরি ছিনতাইও যেন বেড়ে চলেছে। রাজধানীতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মোবাইল ফোন ও দরকারী কাগজপত্র খুইয়েছেন ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা। কল্যাণ কান্তি দাস নামে ভারতীয় হাইকমিশনের ওই কর্মকর্তা বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তেজগাঁওয়ে আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। দুই-তিনজন ছিনতাইকারী রিকশা আটকে তার কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে। সব মিলিয়ে শহরের ভাল তেমন চোখে পড়ছে না। অবস্থার উন্নতি হোক। আমাদের তাই প্রত্যাশা।
×