ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে আইএস সদস্য সংগ্রহ চলছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৮ মে ২০১৫

ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে আইএস সদস্য সংগ্রহ চলছে

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের পাকিস্তান, তুরস্ক কিংবা তৃতীয় কোন দেশের মাধ্যমে সিরিয়াভিত্তিক উগ্রপন্থী জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে আইএসের ৫০ লক্ষাধিক টাকার একটি তহবিলের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা একটি বেসরকারী ব্যাংকের হিসাবে জমা আছে। সিরিয়ায় যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশে ফিরে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য এবং এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিদের ওপর হামলা করাই তাদের পরিকল্পনা। বাংলাদেশের দুই আইএস সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম বেগ ও সাকিব বিন কামালকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। বাংলাদেশের দুই আইএস সমন্বয়ক গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ফেসবুক, টুইটার, উইকার ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে আইএসের সদস্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আফগানিস্তানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আল কায়েদায় যেভাবে বাংলাদেশীদের ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখিয়ে জিহাদে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে, সেভাবেই সিরিয়াভিত্তিক উগ্রপন্থী জঙ্গী সংগঠন আইএসে যোগ দিতে বাংলাদেশীদের মগজধোলাই করানো হচ্ছে। এ জন্য বেছে নেয়া হয়েছে উচ্চশিক্ষিত ও প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী তরুণ-তরুণীদের। পশ্চিমা বিশ্বের ইউরোপ-আমেরিকার হতাশাগ্রস্ত, দরিদ্র শ্রেণীর বিপথগামী তরুণ-তরুণীদের আইএস রণাঙ্গনে যাওয়ার আহ্বান সফল হওয়ার পর এখন বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে আইএসে যোগদানের আহ্বান জানানো হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের দুই আইএস সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম বেগের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট চেক করে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধুর সংখ্যা পাওয়া গেছে ৩০৮২ জন, যার প্রায় সবাই আইএস মতাদর্শের অনুসারী। তার একটি বেসরকারী ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ৫০ লক্ষাধিক টাকা জমা থাকার কথা জানা গেছে, যা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাধীন সাকিব বিন কামাল বাংলাদেশে আইএসের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে দীর্ঘদিন তৎপর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক সাবেক মহিলা উপদেষ্টার মেয়ের জামাই সাকিব বিন কামাল। বাংলাদেশে আইএসের দুই সমন্বয়ক আমিনুল ও সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছেÑ পড়াশোনা, ভ্রমণ কিংবা চাকরির জন্য প্রথমে তুরস্ক যায়। তারপর তারা যুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য যায় সিরিয়ায়। বাংলাদেশে এ ধরনের ২০ জনের নাম পাওয়া গেছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। এর মধ্যে দু’জন তরুণীর নাম পাওয়া গেছে যাদের মধ্যে একজন বেসরকারী কোম্পানির কম্পিউটার প্রকৌশলী এবং অপরজন সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। গ্রেফতারকৃত আমিনুল ইন্টারনেটে আইএস সদস্য যোগাড়ের কাজ করত। গ্রেফতারকৃত আমিনুল ও সাকিবের একত্রে ইরাকে গিয়ে আইএসে যোগ দেয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ইরাকে চলে গেছে তিন যুবক। তারা আইএসে যোগদানের আগে জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সদস্য হিসেবে সক্রিয় থেকে ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের জিহাদে অংশ নেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোর তৎপরতার মুখে জেএমবির মেরুদ- ভেঙ্গে যাওয়ায় এখন তারা আইএসে যোগদানের জন্য ইরাকে চলে গেছে। বাংলাদেশের দুই আইএস সমন্বয়ক আমিনুল ও সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে ২০ জন আইএসে যোগদানের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, আইএসে যোগদানের বিষয়টি এখন তরুণ-তরুণীদের বেশিরভাগ সদস্যই দেশের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান, স্বাবলম্বী এবং উচ্চশিক্ষিত ও প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী।
×