ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;আশা করি মৃত্যুদ- বহাল থাকবে ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল

মুজাহিদের আপীলের যুক্তিতর্ক শেষ, ১৬ জুন রায়

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৮ মে ২০১৫

মুজাহিদের আপীলের যুক্তিতর্ক শেষ, ১৬ জুন রায়

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলবদর কমান্ডার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপীলের রায় ঘোষণা হবে ১৬ জুন। আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ বুধবার এই দিন নির্ধারণ করেছেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আপীল বিভাগে মোট নয় দিন এ মামলার শুনানি হয়েছে। বুধবার শুনানির নবম দিনে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করে এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ্যাডভোকেট এস এম শাজাহান। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে এটি হবে আপীল বিভাগের চতুর্থ রায়। এর আগে আরও তিনটি মামলার আপীল নিষ্পত্তি হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা (মৃত্যুদ- কার্যকর), নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (আমৃত্যু কারাদ-) ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (মৃত্যুদ- কার্যকর)। জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। তবে সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত না হওয়ায় রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি। আর আপীলে থাকা অবস্থাতেই জামায়াত সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বর্তমানে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলীসহ আরও ৭টি মামলা আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আপীল বিভাগের আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-াদেশ বহাল থাকবে বলে আশা করছি। বুদ্ধিজীবী হত্যার পেছনে আলবদরের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। আপীল শুনানিতে দেখানোর চেষ্টা করেছি, ছাত্রসংঘের সভাপতি হিসেবে মুজাহিদ আলবদরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পাকিস্তানী এক লেখকের ‘আলবদর’ নামক বই আদালতে উপস্থিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মুজাহিদ ছাত্রসংঘের নাজেম। নাজেম মানে হচ্ছে প্রধান। এছাড়াও ১৬ ডিসেম্বর আলবদরের শীর্ষ নেতারা পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন। সেখানে মুজাহিদ ছিলেন। কি ধরনের দ- আশা করেন এ প্রশ্নের জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদ- দিয়েছেন। আশা করি তা বহাল থাকবে। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী মোঃ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা যে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন, তাতে মুজাহিদ খালাস পাবেন বলে আশা করছেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর থেকে মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। তিনি আলবদর বাহিনীতে ছিলেন না। এমনকি এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও তদন্তের সময় মুজাহিদের নাম আলবদর বাহিনীর তালিকায় পাননি। এরপরও আমরা যে যুক্তিতর্ক আদালতে উপস্থাপন করেছি আশা করি, আদালত আমাদের যুক্তিতর্ক বিবেচনায় নিয়ে মুজাহিদকে খালাস দেবেন। ১৮ মে রাষ্ট্রপক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল এবং ৪, ৫, ৬ ,১৭ ও ১৮ মে আপীলে পেপারবুক পড়া শেষ করেন মুজাহিদের আইনজীবী। গত ১৫ এপ্রিল আপীল বিভাগ আপীলের ওপর শুনানির জন্য ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য করে। তবে ওইদিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সাধারণ ছুটি থাকায় শুনানি হয়নি। প্রায় ২১ মাস পর ২৯ এপ্রিল আপীলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর ৪, ৫, ৬ ও ১৭, ১৮, ২৫, ২৬ ও ২৭ মে শুনানি গ্রহণ করে আদালত। ২৭ মে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৬ জুন দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট খালাস চেয়ে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করেন মুজাহিদ। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপীল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনালের পুরো রায়ের বিরুদ্ধে ১১৫টি যুক্তি নিয়ে আপীল করেন মুজাহিদ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহতাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হয়েছে এবং ২টি প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি। প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দুটি অভিযোগে সমন্বিতভাবে ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-, ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। প্রমাণিত না হওয়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে খালাস পেয়েছেন মুজাহিদ।
×