ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশী সন্ত্রাসী যোদ্ধার সংখ্যা ২৫ হাজার ॥ জাতিসংঘের রিপোর্ট

জিহাদীরা শতাধিক দেশের

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৮ মে ২০১৫

জিহাদীরা শতাধিক দেশের

বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি দেশ থেকে বর্তমানে ইসলামী চরমপন্থী যোদ্ধারা আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের মতো দলগুলোতে যোগ দিচ্ছে। জাতিসংঘ এ কথা জানায়। খবর গার্ডিয়ানের। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তৈরি করা এক রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমানে ২৫ হাজারেরও বেশি ‘বিদেশী সন্ত্রাসী যোদ্ধা’ জিহাদী যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে এবং তারা এক শ’টিরও বেশি সদস্য রাষ্ট্র থেকে সেখানে যোগ দিচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়, গত নয় মাস বা সেরূপ সময়ে বিশ্বজুড়ে সেই যোদ্ধাদের সংখ্যা শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি বেড়ে থাকতে পারে এবং তারা এক তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী সন্ত্রাসী হুমকির সৃষ্টি করছে। রিপোর্টে বলা হয়, উগ্রপন্থী মতবাদের বিস্তার প্রক্রিয়া বুঝে ওঠা কঠিন, যদিও সংঘাতকবলিত এলাকা ও পাশ্চাত্য শহরগুলোতে ইন্টারনেট, সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর দিকে মনোনিবেশ ওই মতবাদের বিস্তার ঘটানোর ক্ষেত্রে এক বড় ভূমিকা পালন করছে। রিপোর্টে বলা হয়, যারা একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও মেলামেশা করে তারা একসঙ্গে বোমা হামলা চালাতে পারে। ‘বিদেশী সন্ত্রাসী যোদ্ধা’ সম্পর্কিত সমস্যার এক বৈশ্বিক ধারণা এই প্রথম জাতিসংঘ কোন রিপোর্ট প্রকাশ করল। এতে আফগানিস্তান, আফ্রিকা ও অন্যান্য রণাঙ্গন এবং সিরিয়া ও ইরাকের কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা যোদ্ধাদের ওই অনুমিত সংখ্যাকে প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, প্রকৃতপক্ষে তাদের মোট সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি হতে পারে। রিপোর্টে বলা হয়, বিদেশী সন্ত্রাসী যোদ্ধাদের গমনাগমনের হার এখন অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি এবং সিরিয়া ও ইরাকেই প্রধানত তাদের আগমন ঘটছে। লিবিয়াতেও এরূপ যোদ্ধাদের আগমণজনিত সমস্যা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। নিরাপত্তা পরিষদ বিদেশী সন্ত্রাসী যোদ্ধা সম্পর্কিত সমস্যা এবং এ হুমকি মোকাবেলার সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার বৈঠকে মিলিত হবে। সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) দমন করার পশ্চিমা কৌশল নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দেয়ার মধ্যে ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হলো। সম্প্রতি আইএস উভয় দেশেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে, যদিও ইতোপূর্বে কয়েক মাস ধরে তাদের ওপর বিমান হামলা চালানো হয়। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ওই অঞ্চলের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা সমালোচনার মুখে পড়েন। রবিবার মার্কিন সিনেটের জন ম্যাককেইন জলবায়ু পরিবর্তনকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অন্যতম হুমকি হিসেবে উল্লেখ করায় প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করেন। তিনি মতব্যক্ত করেন যে, পরিবেশগত ইস্যুগুলোর দিকে ওবামা প্রশাসন দৃষ্টি দিয়ে আইএসবিরোধী লড়াই থেকে মনোযোগ ভিন্নদিকে চালিত করছে। নতুন রিপোর্টে ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়াকে সন্ত্রাসীদের ‘যথার্থই ফিনিশিং স্কুল’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, তিউনিসিয়া, মরক্কো, ফ্রান্স ও রুশ ফেডারেশনের ভবিষ্যতে হামলার মুখে পড়ার বিশেষ আশঙ্কা রয়েছে, কারণ এসব দেশ থেকে বহুসংখ্যক যোদ্ধা আইএসে যোগ দেয়। রিপোর্টে বলা হয়, যারা তাদের নিজ রাষ্ট্রে বা তৃতীয় দেশগুলোতে ফিরে গেছে বা ফিরে যাবে, তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। এতে বলা হয়, অনেকে সহিংসতা ত্যাগ করে মূলধারার সঙ্গে পুনরায় মিশে যেতে পারে। কেউ কেউ আরও সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে গেছে এবং অন্যরা ভবিষ্যতে তা-ই করবে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ৬ হাজার ৫শ’ বিদেশী সন্ত্রাসী যোদ্ধা আফগানিস্তানে সক্রিয় রয়েছে বলে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ধারণা ব্যক্ত করে। তাদের বেশির ভাগই প্রতিবেশী পাকিস্তানভিত্তিক দলগুলোর অন্তর্গত। তবে ২০০ জন উজবেকিস্তানের ইসলামিক মুভমেন্টের এবং ১৫০ জন ইস্টার্ন টার্কেস্তান ইসলামিক মুভমেন্টের সদস্য। শেষোক্ত দলটি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে।
×