ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ

মুজাহিদের খালাস চেয়েছেন খন্দকার মাহবুব

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ মে ২০১৫

মুজাহিদের খালাস চেয়েছেন খন্দকার মাহবুব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপীল মামলায় আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেছেন। আজ বুধবার আবারও রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের চার সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেছেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে প্রয়োজনে আসামি পক্ষ আবার এ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের জবাব দিতে পারবেন। শুনানিতে মুজাহিদের পক্ষে খন্দকার মাহবুব বলেন, ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের দেয়া সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় আমাদের মনে হয়েছে এসব সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। এসব সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে কাউকে মৃত্যুদ-াদেশের মতো শাস্তি দেয়া যায় না। তাই মুজাহিদের মৃত্যুদ-াদেশের রায় বাতিল করে তাকে খালাস দেয়া হোক। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন তৈরি হয়েছিল। যারা নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠন করে দেশের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল তাদের ছেড়ে দিয়ে আলবদর ও আল শাসমদের বিচার হতে পারে না। মুজাহিদ ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন, তাই তার বিচার করা হবে তা হতে পারে না। তিনি বলেন, জামায়াত ইসলামী রাজনৈতিক বিশ্বাসে পাকিস্তানের পক্ষে থাকতে পারে কিন্তু বুদ্ধিজীবীসহ কোন হত্যায় মুজাহিদের কোন সম্পর্ক ছিল না। তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আনুষ্ঠিক অভিযোগ দাখিলের সময় মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৭ নম্বর অভিযোগ ছিল না,পরে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার যাবতীয় সাক্ষ্য পরীক্ষা করলে দেখা যায়, সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে যে জবানবন্দী দিয়েছে তাতে তাকে সাজা দেয়া যায় না। এসব সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে একটি অভিযোগও প্রমাণ হয়নি উল্লেখ করে এ মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আশা করছি তিনি খালাস পাবেন। এরপর এ্যাটর্র্নি জেনারেল ২৫ পৃষ্ঠার একটি লিখিত যুক্তি জমা দিয়ে আদালতে তিনি দুটি অভিযোগের বিষয়ে পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি বলেন, সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন হত্যার সঙ্গে মুজাহিদ জড়িত না থাকলেও তাকে ধরে নেয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। ছাত্র সংঘের নেতা হিসেবে প্রেক্ষাপট তৈরির দায় তার। দুই নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত কুমার নাথ নির্যাতনের সঙ্গে মুজাহিদের সম্পর্ক নাই আসামিপক্ষের এই যুক্তির জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মুজাহিদের সহযোগিতায় পাক সেনারা রঞ্জিত নাথকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। তার কথার প্রেক্ষিতেই পাক সেনারা রঞ্জিত নাথকে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়। এই সম্পৃক্ততার জন্য ট্রাইব্যুনাল তাকে যে ৫ বছর সাজা দিয়েছে তা সথেষ্ট নয় উল্লেখ করে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই অভিাযোগে তার সাজা আরও বেশি হতে পারতো। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বুধবার যুক্তি উপস্থাপন শেষ হতে পারে। তার আগে গত ১৮ মে রাষ্ট্রপক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল এবং ৪, ৫, ৬ ,১৭ ও ১৮ মে আপিলে পেপারবুক পড়া শেষ করেন মুজাহিদের আইনজীবী। গত ১৫ এপ্রিল আপীল বিভাগ আপীলের ওপর শুনানির জন্য ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য করে। তবে ঐদিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সাধারণ ছুটি থাকায় শুনানি হয়নি। প্রায় ২১ মাস পর ২৯ এপ্রিল আপীলের ওপর শুনানি শুুরু হয়। এরপর ৪, ৫, ৬ ও ১৭, ১৮ মে শুনানি গ্রহণ করে আদালত।
×