ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

বাদীর সাক্ষ্য বাতিল চেয়ে করা খালেদার আবেদন খারিজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ মে ২০১৫

বাদীর সাক্ষ্য বাতিল চেয়ে করা খালেদার আবেদন খারিজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বাদীর দেয়া সাক্ষ্য গ্রহণ বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। তবে মামলার শুনানির প্রস্তুতির জন্য খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আদালত আগামী ১৮ জুন মামলার পরবর্তী দিন ঠিক করেন। সোমবার আসামি খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে পুরান ঢাকার বকশিবাজারে কারা কর্তৃপক্ষের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ আদেশ দেন। সোমবার আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদক কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ তার জবানবন্দী শেষ করেন। এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার জবানবন্দী শেষ হওয়ায় বর্তমানে জেরা চলছে। তবে এই দুই মামলার কোনটিতেই খালেদার আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করেননি। এদিকে, সোমবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আদালতে আসাকে কেন্দ্র করে বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কারা অধিদফতর প্যারেড মাঠে আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছিল। বেলা ১০টা ৫৬ মিনিটে খালেদা জিয়া আদালত প্রাঙ্গণে এসে হাজির হন। আদালত চলাকালীন সময়ে খালেদা জিয়া কারও সঙ্গে কোন কথা বলেননি। বেগুনি রংয়ের শাড়ি পরে শান্তভাবেই বসে ছিলেন এজলাসে। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আদালত আদেশ দেয়ার পর তিনি আদালত থেকে বেরিয়ে যান। আদেশের পর খালেদার অন্যতম আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, তারা আদালতে দুটি আবেদন করেছিলেন। একটি আবেদনে বলা হয়, আগের কয়েকটি তারিখে খালেদা জিয়া আদালতে না আসায় তিনি সাক্ষ্য শুনতে পারেননি। এ কারণে বাদীর দেয়া সাক্ষ্য বাতিলের আবেদন জানান তারা। অন্য আবেদন, বার কাউন্সিল নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের ব্যস্ততার কথা বলে শুনানিতে অংশ নেয়ার জন্য সময় চাওয়া হয়। আদালতে দুদকের পক্ষে এসব আবেদনের বিরোধিতা করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। দুই পক্ষের বক্তব্য শেষে বিচারক প্রথম আবেদনটি খারিজ করে আদেশে বলেন, সাক্ষ্য বাতিলের সুযোগ নেই। সময়ের আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকাটা যৌক্তিক। প্রস্তুতির জন্য সময় দেয়া যেতে পারে। তবে হাইকোর্টে যাবেন, সেজন্য সময় দিতে পারব না। পরে ১৮ জুন মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করে আদেশ দেন বিচারক। এই দুই দুর্নীতি মামলায় নানা কারণ দেখিয়ে শুনানির জন্য নির্ধারিত ৬৬ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৮ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া, হাজির হয়েছেন মাত্র ৮ দিন। দীর্ঘদিন ধরে শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ অপর দুই আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছিলেন আদালত। ৪ মার্চও এ গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রাখেন আদালত। পরে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে প্রতি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত থাকার নিশ্চয়তা দিয়ে গত ৫ এপ্রিল আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন খালেদা জিয়াসহ ওই তিন আসামি। তবে সর্বশেষ ধার্য দিন ৫ মে’ই আদালতে যাননি খালেদা জিয়া। চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ॥ ২০১১ সালের ৮ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন। অরফানেজ ট্রাস্ট ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে। এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়। দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন উর রশিদ ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। রবিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদও জামিন পান। বাকি দু’জন পলাতক।
×