ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের আগ্রহ

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৬ মে ২০১৫

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের আগ্রহ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ পানি সম্পদ নিয়ে ১০০ বছরের পরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান) বাস্তবায়নে সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগকে (জিইডি) জানিয়েছে সংস্থাটি। শুধু তাই নয় ইতোমধ্যেই একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকও করেছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাওয়ার আগেই তারা চিঠি দিয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী জিইডি এই চিঠির বিষয়ে উত্তর দিতে পারে না, সেহেতু অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) অনুরোধ করা হয়েছিল জিইডির পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে ইআরডি নেগোশিয়েশন করে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। আগামী ১৬ অথবা ১৭ জুন এই চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ডেল্টা প্ল্যান তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের মধ্যে অনেকগুলো প্রকল্প থাকবে। সেসব বাস্তবায়নে অবশ্যই উন্নয়নসহযোগীদের অর্থায়ন প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা কোন কোন ক্ষেত্রে সহায়তা দিতে চায় সেসব বিষয়ে পরবর্তীতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আপাতত আমরা বলেছি পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে। এটির বাস্তবায়ন পর্যায়ে বড় বড় প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চায় বাংলাদেশ। সূত্র জানায়, তিন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ডেল্টা প্ল্যান তৈরি করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ। এগুলো হচ্ছে নদী ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং ভূমি উদ্ধার। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান) তৈরির জন্য পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে নেদারল্যান্ড। গত বছরের শুরুর দিকেই পরামর্শক দলটি তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। কাজ শুরুর আগে পরামর্শক দলের কাছে এ তিন বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছিল পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ বিষয়ে জিইডি সদস্য ড. শামসুল আলম জানান, জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব মেকাবেলায় তৈরি হতে যাওয়া ডেল্টা প্লানে নদী ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং ভূমি উদ্ধারের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিদেশী পরামর্শকদের কাছে এ তিনটি বিষয়ে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ীই কাজ চলছে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক ডেস্কের প্রধান কাজী সফিকুল আযম জনকণ্ঠকে জানান, বিশ্বব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইআরডির পক্ষ থেকে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে আলাপ আলোচনার পর আংশিক ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা গেছে, পানি সম্পদ, ভূমি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-প্রতিবেশ খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণীত হবে। বাংলাদেশের ব-দ্বীপ ভূমিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের ভবিষ্যত উন্নয়ন প্রশাসন সম্পর্কে একটি দীর্ঘ মেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গী তৈরি করা হবে। সমন্বিত নীতি উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বাঁধা চিহ্নিত করে করণীয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এ পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত সরকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও মান উন্নয়ন এবং সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনা হবে। পরিকল্পনার ফলে একই কাঠামোর আওতায় সার্বিক সমন্বিত আকারে সকল খাতে এর সুনিদিষ্ট পলিসি ও প্ল্যান এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রতিফলন ঘটবে। এতে সীমিত সম্পদের মধ্যে কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলায় কর্মসূচীসমূহ আরও যৌক্তিক উপায়ে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হবে। সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশের পানি সম্পদ নিয়ে ১০০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার কাজ শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ শীর্ষক এ পরিকলল্পনা তৈরিতে সহায়তা দিচ্ছে নেদারল্যান্ড। এ জন্য ইতোমধ্যেই দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় নেদারল্যান্ড এ পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে।
×