ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রী জিম্মি করে ধর্মঘট

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৬ মে ২০১৫

যাত্রী জিম্মি করে ধর্মঘট

আগাম কোন ঘোষণা ছাড়াই খুলনা বিভাগের ছয় জেলা ও ফরিদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলে পরিবহন ধর্মঘট চলছে কার্যত বুধবার থেকে। যাত্রীদের জিম্মি করেই অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। বর্তমানে দেশের ২৪ জেলায় যান চলাচল একেবারেই বন্ধ। ডাকাতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আটক সোহাগ পরিবহনের চালক ও সহকারীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই জনদুর্ভোগের কর্মসূচী দেয়া হয়। মঙ্গলবারের মধ্যে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি না দিলে মালিক-শ্রমিকরা এই কর্মসূচী সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন-মালিক সমিতি কিংবা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সঙ্কট নিরসনের কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এই ধর্মঘটের কারণে আটকা পড়েছে হাজার হাজার যাত্রী। বিকল্প ব্যবস্থায় আসার চেষ্টা করলেও বাধার মুখে পড়ে যাত্রীরা। যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি আমলে না নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত সে প্রশ্নটিই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, ফরিদপুরের মধুখালীতে বেনাপোলগামী সোহাগ পরিবহনের একটি নৈশকোচে সোমবার রাতে ডাকাতির পর পুলিশ বাসটির চালক ও তার সহকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পুলিশের দাবি, বাসচালক ও সহকারী ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অন্যদিকে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ডাকাতরা যাত্রীবেশে বাসে উঠেছিল, ডাকাতিতে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দাবি আদায়ে বা কোন ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা পরিবহন বন্ধ রাখাকেই মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এটা অনেক পুরনো পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে দাবি-দাওয়া বা প্রতিবাদের ইস্যুটি যৌক্তিক হোক বা অযৌক্তিক হোক। তবে যৌক্তিক হলেও এর জন্য কথায় কথায় পরিবহন ধর্মঘট ডাকা কোনভাবেই দায়িত্বশীল আচরণ বলা যাবে না। এতে সরকার বা অন্য কোন মহলের ওপর চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে জিম্মি করা হলো সাধারণ মানুষকে। পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও সরকার বা প্রশাসনের সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের বৈঠক হয়নি। বরং আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এই ক’দিনেই মানুষের দুর্ভোগ, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি সহজেই অনুমেয়। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ধর্মঘটের কারণে ভারত ফেরত কয়েক শ’ যাত্রী বেনাপোলে আটকা পড়েছেন। তারা বিভিন্ন বাসের কাউন্টার ও আবাসিক হোটেলে আশ্রয় নিয়ে কখন আন্দোলন প্রত্যাহার হবে তার অপেক্ষা করছেন। বলা যায়, সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। প্রশ্ন উঠছে, আটক বাসচালক ও সহকারীকে আইনীভাবে নির্দোষ প্রমাণে না গিয়ে কেন এমন কঠিন আন্দোলনে নামা? এটা কি দেশের প্রচলিত আইনকে অবজ্ঞা করা নয়? সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি ও ক্ষতিগ্রস্ত করা, জনজীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে বিপর্যস্ত করা কতটা ন্যায়সঙ্গত তা ভাবা দরকার। সড়ক পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকরা দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবার সঙ্গে যুক্ত। যার সঙ্গে জনজীবন এবং দেশের অর্থনীতি সম্পৃক্ত। সে দায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই আন্দোলন বা প্রতিবাদ কর্মসূচীগুলো নির্ধারণ করা উচিত। কথায় কথায় পরিবহন ধর্মঘট ডাকার প্রবণতা বন্ধ হওয়া দরকার। পরিবহনের চালক-শ্রমিকরা অহেতুক বা মিথ্যা হয়রানির শিকার হোক তা যেমন কাম্য নয়, তেমনি এসব কারণে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ুক সেটাও প্রত্যাশিত নয়। পুরো বিষয়টা এখন আইনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। দেশে আইন আছে, বিচার ব্যবস্থা আছে, সঙ্কট সমাধানে সেটাই উত্তম পথ। অপরাধকে আইনের পথে চলতে দিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আলোচনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব ধর্মঘট প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেবেন সেটাই প্রত্যাশা।
×