ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব পেট্রোল পাম্পে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে ॥ সাঈদ খোকন

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৫ মে ২০১৫

সব পেট্রোল পাম্পে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে ॥ সাঈদ খোকন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নগর উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আসার আগেই সেসব দুর্নীতি প্রতিরোধ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। নাগরিক সেবার বাধা হিসেবে যে কোন প্রকার দুর্নীতির অভিযোগ আসলে সে ব্যক্তি যেই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া নগরের জন্য গৃহীত উন্নয়ন কর্মকা- ও পরিকল্পনা নিয়ে প্রতি তিন মাস পর পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার ঘোষণাও দেন। এজন্য অবশ্যই সাংবাদিক তথা সকল শ্রেণীর নাগরিকদের সহায়তা প্রয়োজন। রবিবার নগর ভবনে সিটি কর্পোরেশনের বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে নগর উন্নয়নে পরামর্শ ও সহযোগিতা শীর্ষক মতবিনিময়কালে তিনি এ অঙ্গীকার করেন। এ সময় তিনি সংবাদিকদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ শুনেন। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের সমস্যা সম্পর্কিত চলমান বিভিন্ন সমস্যা আমলে নিয়ে তা সমাধানেরও আশ্বাস দেন। তারুণ্যদীপ্ত ডিএসসিসির এ মেয়র ঢাকা সিটিতে পাবলিক টয়লেটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবে নতুন করে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের চিন্তা করা হচ্ছে। বিশেষ করে নারী পথচারীদের সুবিধার্থে প্রতিটি পেট্রোল পাম্পের সঙ্গে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে প্রতিবন্ধীসহ সকল নারী পুরুষই ব্যবহারের সুবিধা থাকবে। এছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, কর্পোরেশনের প্রতিটি বোর্ড সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। যে কোন বিষয়ে খোলামেলা পরামর্শ নেবেন। কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের তথ্য সাংবাদিকদের সরবরাহ করতে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিবেন। তার দরজা নগরবাসীসহ সাংবাদিকদের জন্য সর্বক্ষণিক খোলা থাকবে। খোকন বলেন, আপনারা জানেন সিটি কর্পোরেশনে সকল শ্রেণীর মানুষের যাতায়াত থাকায় সমস্যার পাশাপাশি দুর্নীতিও বিদ্যমান। এরপরও নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে পূর্ণ মেয়াদেই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। সকল প্রকার সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে সরকারের উর্ধতন মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ‘ঢাকা ডায়ালগ’ করার চিন্তা রয়েছে। আপনাদের সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমার মনে হয় নাগরিকদের চলমান সমস্যার সমাধান করতে সকল নাগরিকেরই আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবার সহযোগিতা পেলে অবশ্যই ঢাকাকে একটি সুন্দর নগর উপহার দিতে পারব এবং তা কম সময়েই সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া কর্পোরেশনের সম্পত্তি অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করা, বকেয়া রাজস্ব আদায়ের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, নতুন করে হোল্ডিং গণনা শুরু, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়মিতকরণসহ নানা উদ্যোগের কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। মেয়র বলেন, আমার পিতা মরহুম মোহাম্মদ হানিফ বলতেন সাংবাদিকরা হচ্ছে আই অপেনার। যাদের মাধ্যমে সমাজের সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়। আমিও বাবার মতোই আপনাদের পাশে নিয়ে পূর্ণ মেয়াদ কাটাতে চাই। সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ নয় বিবেক দিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্য আহ্বান জানান। সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনে মেয়র হতে সাঈদ খোকনকে ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েক কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করছি যদি কোন ব্যক্তি এমন কথা বলে থাকেন তাহলে তাকে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসেন। অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করব। আমি এরই মধ্যে সব বিভাগকে বলে দিয়েছি কেউ যদি আমার নাম ভাঙিয়ে কিছু করে তাকে পুলিশে দেবেন। দুর্নীতি কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন, সাংবাদিক ও সেবা গ্রহণকারী নাগরিকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে আমরা পুরো নগর ভবনকেই ওয়াইফাই জোনের আওতায় নিয়ে আসতে চাই। এছাড়া নগর ভবনে একটি মিডিয়া সেন্টার তৈরি করা হবে। যেখান থেকে সাংবাদিকগণ বিভিন্ন প্রকার সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। বর্তমান জনসংযোগ বিভাগকে কার্যকর করারও ঘোষণা দেন। দক্ষিণ সিটির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি উল্লেখ করে মেয়র বলেন, বিভক্তির সময়ই উত্তর ও দক্ষিণ সিটির সীমানাসহ আয় ব্যয়ের মধ্যে ভুল ছিল। সীমানা নির্ধারণ ও রাজস্ব খাতে আয় বাড়ানো নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা চলছে। এছাড়া কর্পোরেশনের সংযোগ বিভাগের জনবলসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সাংবাদিকদের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো থেকে তথ্য পেতে অসহযোগিতা পাওয়া, কর্পোরেশনের আয় বাড়াতে রাজস্ব বিভাগকে কার্যকর করা, সর্বোপরি সেবার মান বৃদ্ধি করে দুর্নীতি কমিয়ে আনার কথা তিনি উল্লেখ করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর মেয়র তার গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় বলেন, অনেকেই আমাকে বলেছেন এটা খুব চ্যালেঞ্জিং কাজ, খুব কঠিন। কিন্তু আমার কাছে এটা মনেই হয়নি। আমি এই নগরীর সবার কাছে সহযোগিতার মনোভাব দেখেছি। আশা করি নির্ধারিত সময়েই সুন্দর ঢাকা উপহার দেয়া সম্ভব হবে। মতবিনিময় সভায় মেয়রের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কর্পোরেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী গিয়াস উদ্দিন সুমন প্রমুখ।
×