ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৫ মে ২০১৫

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়তা  দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সক্ষমতা অর্জনসহ বাংলাদেশ ব্যাংক শক্তিশালী করণে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ফলে ২ হাজার ৭১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির তত্ত্বাবধান কাঠামো শক্তিশালী করা হবে বলে জানা গেছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্ব ব্যাংক দিচ্ছে ২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়িত হলে আর্থিক খাত ও বাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন, দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন খাতে সরবরাহ বৃদ্ধি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষনসহ আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে নেগোশিয়েশন সম্পন্ন করেছে। আগমী ৫ জুন ওয়াসিংটনে অনুষ্ঠিতব্য সংস্থাটির বোর্ড সভায় এর অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। বিশ্বব্যাংকের সহজ শর্তে দেয়া এ ঋণ পরিশোধে ৩৮ বছর সময় পাবে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে রেয়াতকাল ধরা হয়েছে ৬ বছর। রেয়াতকাল পরবর্তী সময়ে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্ব ব্যাংক ইউংয়ের প্রধান কাজী শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, এ প্রকল্পের প্রস্তাবটি পরিকল্পনা মন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তিনি জানান, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দক্ষ ও কার্যকরী তত্ত্বাবধান এবং তদারকির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এছাড়া দেশের উৎপাদনশীল খাতে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ প্রদানের মাধ্যমে উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের মূলধন সরবরাহ করাও এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। এজন্য বিশ্ব ব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) আওতায় সহায়তা পাওয়া যাবে। যা ইতোমধ্যে নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা তার কাছাকাছি পৌঁছা সম্ভব হবে। ইআরডি সূত্র জানায়, ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্ট শীর্ষক এ প্রকল্পে ৪টি কম্পোনেন্টের আওতায় বেশ কয়েকটি কাজের উদ্যোগ নেয়া হবে। বিশ্ব ব্যাংকের সহজ শর্তের ঋণে চলতি বছর থেকে ২০২১ সাল নাগাদ এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রকল্পের মোট অর্থের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের বাইরে ৩৯৩ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক বাজার শক্তিশালী করতে পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ, ঋণ তথ্য ব্যুরোর আওতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট অবকাঠামো ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ স্থাপন, প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ এবং ইনফরমেশন সিস্টেম স্ট্রেটেজিক পেপার তৈরিতে কারিগরি সমীক্ষা পরিচালনা করা হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকের প্রবিধি ও তত্ত্বাবধায় ক্ষমতা শক্তিশালীকরণ, উৎপাদনশীল খাতে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়ন সুবিধা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব বলেন, এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে যাচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। আগামী ৫ জুন বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তর হওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এজন্য টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র্য বিমোচন জরুরী। আর এ জন্য প্রয়োজন আর্থিক বাজারে স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী অবকাঠামো। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য প্রযুক্তি খাতে সুসংহতকরণ, ব্যাংকিং লেনদেন ও অন্যান্য তথ্য উপাত্ত নিরাপদে স্থানান্তরে সম্পূর্ণ পৃথক ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্থাপন, অনলাইনে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যউপাত্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রডেনসিয়াল রেগুলেশন ও তত্ত্বাবধান পদ্ধতিকে আন্তর্জাতিক রীতি পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো অর্জনে এ প্রকল্পটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তারা। সূত্র জানায়, এর আগে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশকে সহযোগী দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল বিশ্বব্যাংক। সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা করতে চেয়েছিল সংস্থাটি। ২০১৩ সালে সহযোগিতা চেয়ে বিশ্বব্যাংকে আনুষ্ঠানিক পত্র দেয় বাংলাদেশ।
×