ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এফবিসিসিআইয়ের উৎসবমুখর নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৪ মে ২০১৫

এফবিসিসিআইয়ের উৎসবমুখর নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ভোট দানকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলায় এবারের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্œ উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান স্বয়ং তার ভূূমিকা দিয়ে এবারের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করার পরিবর্তে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোট চলাকালে নিজেই তার ছেলের জন্য ভোট চেয়ে বেড়িয়েছেন। তার এ কার্যক্রম নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে একটি প্যানেলের পক্ষে প্রভাব বিস্তার করেছে। যা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভোট কেনাবেচার প্রত্যক্ষ নজির দেখা গেছে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানে। আগের রাতে চেম্বার গ্রুপের প্রতিটি ভোট ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় কেনাবেচার খবর পাওয়া যায়। পরদিন ভোট কেন্দ্রে দেখা যায়, যারা ভোট বিক্রি করেছেন তারা ভোট দিতে এসে ব্যালট পেপার সংগ্রহের পর পরই ভিড়ের মধ্যে তাদের ব্যালট ভোটের ক্রেতাদের লোকজন নিয়ে যায় এবং তারাই ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্সে ফেলে দেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভোট দেয়ার প্রমাণ হিসেবে মোবাইলে সিল দেয়া ব্যালটের ছবি তুলে তা বাকি পেমেন্টের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টায় মতিঝিল ফেডারেশন ভবনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। একটানা চলে বিকেল ৫টা ১০ পর্যন্ত। দিনভর ঘিঞ্জি পরিবেশে সারাদেশের চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ভোট দিতে আসেন ফেডারেশন ভবনে। ভবনের সামনে রাস্তার ওপর লম্বাভাবে প্রায় অর্ধেক রাস্তাজুড়ে টানানো হয় প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের মধ্যদিয়েই ফেডারেশন ভবনের গেটের সামনে প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা দাঁড়িয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। এবার প্রার্থীদের কর্মীদের উপস্থিতি এত ব্যাপক ছিল যে, তাদের নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম জাতীয় নির্বাচনকেও হার মানিয়ে দিয়েছেন। প্রার্থীর পক্ষে মিছিল নির্বাচনকে উৎসবমুখর করে তুললেও ব্যবসায়ীদের নির্বাচন হিসেবে তা দৃষ্টিকটু লেগেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দৈনিক বাংলার মোড় থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে প্রার্থীদের পোস্টার ও লিফলেট টাঙ্গানো হয়। কোন কোন প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাস্তার ওপর বড় বড় বিলবোর্ডে বিশাল আকারে পোস্টার লাগিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। ফেডারেশন ভবনের নাকের ডগায় একটি বিশেষ প্যানেলের প্রার্থীরা এভাবে প্রচার চালালেও নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি পড়েনি। ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ছিল বিশৃঙ্খল অবস্থা। ভোট কেন্দ্রে নন-ভোটারদের মাত্রারিক্ত উপস্থিতিই এ বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। ভোট কেন্দ্রে চেম্বার গ্রুপের পক্ষে একটি প্যানেলের পক্ষে জোরপূর্বক ভোটারদের ভোট দানে প্রভাবিত করার বিষয়টিও বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ছেলের পক্ষে বার বার ৭নং ব্যালটে ভোট চেয়ে নির্বাচনে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দুজন সদস্যের সেঙ্গ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতবিরোধ দেখা দেয়। দিনভর ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে চেম্বার গ্রুপ ও এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ভোটগ্রহণ শনিবার বিকেলে শেষ হয়েছে। চেম্বার গ্রুপে ৪৩৬ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৪১৮টি। ভোট প্রদানের হার ৯৬ শতাংশ। অপরদিকে এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ১৭৬৮ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৫৩২টি। ভোটের হার ৮৭ শতাংশ। আর দুই গ্রুপ মিলিয়ে ভোট প্রদানের হার ৯১.৫ শতাংশ। ভোট গ্রহণের দুই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টায় ভোট গণনা শুরু হয়। প্রথমে শুরু হয় চেম্বার গড় গ্রুপে ভোট গণনা। গণনা শেষে রাতেই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে। এবারের নির্বাচনে ৩২ পরিচালক পদে তিনটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এর মধ্যে ছিল স্বাধীনতা ব্যবসায়ী পরিষদ, ব্যবসায়ী উন্নয়ন পরিষদ ও ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ নামে তিনটি প্যানেল। ‘স্বাধীনতা ব্যবসায়ী পরিষদ’ এর নেতৃত্বে রয়েছেন পর্ষদের প্রথম সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী। ‘ব্যবসায়ী উন্নয়ন পরিষদ’ নামে প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমেদ এবং ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। এফবিসিসিআইয়ের এবারের নির্বাচনে মোট ২ হাজার ১৯৬ জন ভোটার রয়েছেন। ভোটগ্রহণ শেষে বিকেলে নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আশরাফ আলী এমপি সাংবাদিকদের জানান, ‘শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে।’ স্থান সংকুলান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জায়গা আরও বড় পরিসরে হলে ভাল হতো। আমরা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ভোট নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি।’ এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে এ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার থেকে ১৬ জন করে মোট ৩২ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশন থেকে আরও ২০ জন মনোনীত পরিচালকসহ ৫২ জন নিয়ে এফবিসিসিআই বোর্ড গঠিত হবে। পরিচালক নির্বাচন শেষে আগামী ২৫ মে সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি এবং একজন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন। সংগঠনের সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন চেম্বার গ্রুপ থেকে। আর প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে।
×