ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইসিসির সাবেক সভাপতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোস্তফা কামাল

বাংলাদেশে ‘শ্রীনি’ এখন গালি!

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৪ মে ২০১৫

বাংলাদেশে ‘শ্রীনি’ এখন গালি!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) সাবেক সভাপতি আহম মোস্তফা কামাল। বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রীও। আজ যে আইপিএলে মুম্বাই-চেন্নাই ফাইনাল খেলাটি হবে, তা দেখতে এখন কলকাতায় আছেন মোস্তফা কামাল। ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি জগমোহন ডালমিয়ার আমন্ত্রণে কলকাতা গেছেন মোস্তফা কামাল এবং ফাইনাল খেলাও দেখবেন। এর ফাঁকে আনন্দবাজারকে এক সাক্ষাতকার দেন। তাতে মোস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশে ‘শ্রীনি’ এখন গালি! সাক্ষাতকারটি এখানে তুলে ধরা হলো- প্রশ্ন ॥ শোনা যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের একাংশের মধ্যে তীব্র ভীতি রয়েছে যে, আসন্ন বাংলাদেশ সফরে তাদের উত্তেজিত গণসমর্থনের বিরুদ্ধে পড়তে হতে পারে। সোজা কথায়, তাদের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে। মোস্তফা কামাল ॥ কোথা থেকে শুনছেন এ সব কথা! সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ঠিক উল্টো, গোটা বাংলাদেশ ভারতীয় ক্রিকেটারদের স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষায় আছে। ইন্ডিয়া এলে একটা দারুণ এক্সাইটমেন্ট হবে। ক্রিকেট উৎসবের চেহারা নেবে। প্রশ্ন ॥ কিন্তু বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের পর যেভাবে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট আছড়ে পড়েছে এবং তারও আগে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্লগার অভিজিত রায় খুন হওয়াতেই নাকি ক্রিকেটাররা এত উদ্বিগ্ন। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তাদের কারও কারও দুর্ভাবনা- আবার ক্রিকেট ঘিরে এমন উত্তেজক কিছু ঘটে তাদের নিরাপত্তা বিঘিœত হয় কিনা। কামাল ॥ বিন্দুমাত্র কোন আশঙ্কা নেই। বরঞ্চ গোটা দেশ উদ্বেল হয়ে ভারতীয় সিরিজের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে হাজির থাকবেন ওয়ান ডে দেখতে। জগমোহন ডালমিয়াকে কাল দেখা করে আমরা বিশেষ আমন্ত্রণ জানাব অন্তত এক দিনের জন্য হলেও আসার। ডালমিয়া হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের গডফাদার। তার জন্যই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পাই। সেই ঋণ বাংলাদেশ ভোলেনি। প্রশ্ন ॥ সে তো শ্রীনিবাসনও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করেছেন বলে শোনা যায়। উনি না থাকলে বাংলাদেশ টি২০ বিশ্বকাপ পেত না। কামাল ॥ একদম বাজে কথা। টি২০ বিশ্বকাপ কোথায় হবে, উনি আসার আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন ॥ আপনি ছিলেন আইসিসি প্রেসিডেন্ট। শ্রীনি চেয়ারম্যান। পদে বসার পরপরই আপনি প্রচুর প্রশংসা করতেন শ্রীনির। কামাল ॥ হ্যাঁ, করতাম। তখনও জানতাম না তার বাড়ির লোকেরা এভাবে বেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। জানতাম না ক্রিকেট প্রসারের নামে উনি এতটা বেনিয়া। আইসিসিতে পরবর্তীকালে তার হাবভাব দেখে আমার মনে হতো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আবার ফেরত এলো নাকি? খালি ধান্ধা টাকা রোজগারের আর নিজের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার। কোথায় ক্রিকেটের বিশ্বায়ন হবে, তা নয়। আইসিসি পরের বিশ্বকাপে টিমের সংখ্যা ১৪ থেকে ১০-এ নামিয়ে আনছে। খালি বলে টাকা, টাকা। কোথা থেকে কত রোজগার হবে। আরে কোথাও তো ব্যাট আর বলের কথাটা বল। প্রশ্ন ॥ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ভারত হারানোর পর আপনি যে সব কথা বলেছিলেন, অনেকের মতে উত্তেজনা তাতেই বাড়ে। কামাল ॥ একটা কথা ভাল করে বুঝুন। আমি কিন্তু ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে বলিনি। আমি একটা লোকের বিরুদ্ধে বলেছিলাম। আইসিসির প্রেসিডেন্ট ছিলাম আমি। উনি চেয়ারম্যান। অপারেশনের দায়িত্ব তার হাতে। মেলবোর্নে সেদিন উনি আমাদের ম্যাচে স্পাইক্যাম কেন রাখেননি বলতে পারেন? কেন টিভি রিপ্লে বেছে বেছে সে দিনই ব্যবস্থা করা হয়নি? মাহমুদুল্লাহর ক্যাচটা তো লাইনের বাইরে থেকে ধরা। অথচ টিভিতে দেখায়নি। স্কোরবোর্ডের ওপরে যে দেখাচ্ছিল ইন্ডিয়া জিতেগা জিতেগা, এটা কী? এটা তো আইসিসির স্পেস। সেখানে একটা টিমের প্রতি এমন পক্ষপাত দেখানো হবে কেন? এগুলো সব শ্রীনির কীর্তি। ফেয়ার প্লেতে এই লোকটা বিশ্বাসই করে না। প্রশ্ন ॥ ফাইনালে আপনাকে আইসিসি প্রেসিডেন্ট হয়েও পুরস্কার দিতে দেয়া হয়নি। তখন আপনি বলেছিলেন আইসিসির বিরুদ্ধে মামলা করবেন, কিন্তু করেননি। বরঞ্চ পদ ছেড়ে দেন। কেন? কামাল ॥ পরে ভেবে দেখি সেটা করাটা খুব অনুচিত কাজ হবে। ইনস্টিটিউশনের একটা লোক পচা, তাই বলে প্রতিষ্ঠানটা তো নয়। এই লোকটার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখায়নি। আমি দেখাই। প্রশ্ন ॥ শ্রীনি ভারতীয় বোর্ডের দায়িত্বে থাকলে বাংলাদেশ সফর হতোই না। কামাল ॥ জানি তো। গোটা বাংলাদেশ খুব খুশি যে ভারতীয় বোর্ড থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশ শ্রীনির ওপর প্রচ- ক্ষিপ্ত। প্রশ্ন ॥ শেখ হাসিনা তো বিশ্বকাপের পর আপনার সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন? কামাল ॥ একে তো উনি অসম্ভব ক্রিকেট ভক্ত। একেবারে প্রথম বল থেকে খেলা দেখেন। তার ওপর তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য আমি। আমার সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করা হয়েছে। তাই উনি চুপ করে থাকেননি।
×