ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দাবদাহে পুড়ছে দেশ, তাপপ্রবাহ থাকবে আরও দুদিন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৪ মে ২০১৫

দাবদাহে পুড়ছে দেশ, তাপপ্রবাহ থাকবে আরও দুদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেলেও দাবদাহ ও মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা কমেনি। শনিবারও দেশের সর্বত্র অনুভূত হয় তীব্র গরম। বৃষ্টির দেখা নেই দেশের কোথাও। বাসার ছাদের উপরে থাকা ট্যাঙ্কির পানি হয়ে যাচ্ছে সিদ্ধ। মাঝে মধ্যে বয়ে যাওয়া ঠা-া বাতাসেই প্রশান্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ। রাজধানী ও সারাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। ছত্রিশ পেরিয়ে গেছে রাজধানীর তাপমাত্রা। আর রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী হওয়া মানেই ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। কাঠফাটা রোগ ও তীব্র গরমে নাজেহাল দেশবাসী এখন বৃষ্টির অপেক্ষায়। তাপপ্রবাহ, আর্দ্রতার দাপট ও বৃষ্টিশূন্যতাই গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। স্বস্তিপ্রত্যাশী দেশবাসীকে আরেকটি দুঃসংবাদ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি সেন্টারেই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক হ্রাস পেয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি হওয়া অবস্থায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যত হ্রাস পাবে, গরমের তীব্রতা ততই বাড়বে। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৩৯ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সিলেটে ২০.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়, যা তীব্র গরম অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত দেয়। আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, আজ রবিবারও তাপপ্রবাহ নতুন নতুন জেলায় বিস্তার লাভ করবে। অর্থাৎ আগামী দুই-তিন দিনেও তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। গত কয়েক দিন ধরে দাবদাহে পুড়ছে দেশ। বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। দেশের কিছু জায়গায় সীমিত বৃষ্টিপাত হলেও তা মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খরতাপে শুকিয়ে যাচ্ছে। খা খা করছে দেশের মাঠ প্রান্তর। খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয় ফের পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। গত মাসে বেশ কিছুদিন বৃষ্টিপাত থাকায় ওই সব জায়গায় পানি দেখা গিয়েছিল। বোরো ধান কাটার সুবিধে হলেও বৃষ্টিবিহীন আবহাওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশিসহ নানা মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি মাসজুড়ে দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। বায়ুম-লে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পুবালী লঘুচাপের সংযোগ না ঘটায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বায়ুম-লে ক্রমেই অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া বিন্যাসে সাধিত হচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। আবহাওয়া বিন্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে পশ্চিমা বায়ু উপরের দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং উপরের অংশে অবস্থান করছে। পশ্চিমা বায়ুর অবস্থান উত্তর দিকে হিমালয় বরাবর। এ বছর গ্রীষ্মকালে তুলমামূলকভাবে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। জলভাগ ও স্থলভাগের তাপমাত্রায় বড় ধরনের পার্থক্যের কারণে বর্ষাকাল সৃষ্টি হয়। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে এ বছর এই দুই স্থানের তাপমাত্রার ব্যবধান অনেকটা বেশি থাকবে। আবহাওয়ার দীর্ঘকালীন পূর্বাভাসে চলতি মাসে দুটি নিম্নচাপের কথা বলা হয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। নিম্নচাপ হলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারত এবং দাবদাহের মাত্রা হ্রাস পেতÑ এমনটি মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদরা আরও বলছেন, দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনেক উপরে উঠে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সব আবহাওয়া স্টেশনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়ে আসছে। মাঝে মধ্যে আকাশে মেঘ জমলেও বৃষ্টি হয় না। কিছু সময়ের জন্য বাতাসের বেগ বেড়ে গিয়ে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ে। এতে ভূ-পৃষ্ঠের শুষ্ক অবস্থা আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। বেড়ে যায় ভ্যাপসা গরমের মাত্রা। এদিকে রাজধানীর আকাশেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত নেই। দিনের অধিকাংশ সময় পড়ছে তীব্র রোদ। গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী। ঘন ঘন লোডশেডিং বাড়িয়ে দিচ্ছে দুর্ভোগের মাত্রা। ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক কাজকর্ম। প্রখর রোদ উপেক্ষা করেই চলতে হয় পথচারীদের। এত অস্বাভাবিক গরমে পরিবহনগুলোর ভেতরের তপ্ত পরিবেশে অস্থির হয়ে ওঠে যাত্রীরা। দাবদাহে জর্জরিত মানুষের কাছে বেড়ে যায় ঠা-া পানীয়ের চাহিদা। শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩৬.৪ ও ২৯.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঢাকার গত কয়েক দিনের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ থেকে ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা যদি বেশি থাকে এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসে, তাহলে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। বর্তমানে ঢাকায় এমন অবস্থাই বিরাজ করছে। ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস পেয়ে ৬ থেকে ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীসহ শহুরে এলাকার জন্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস অনেকটাই দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি করে। বর্তমানে রাজধানীবাসীকেও এমন বিরূপ আবহাওয়া ও ইট-পাথরের প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
×