ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে-

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৩ মে ২০১৫

প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে-

অন্ধজনে আলো দেয়ার আহ্বান রেখে যান মনীষীরা যুগে যুগে। একই ভাবে প্রকৃতি যাদের ওপর প্রতিবন্ধকতা চাপিয়ে দিয়েছে সেসব মানুষের কল্যাণে অবদান রাখার কথাও সমকালে উচ্চারিত হয় বিভিন্ন সভা-সেমিনারে। বিশেষ করে বছরের বিশেষ বিশেষ দিবসে প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা জেগে ওঠে , অনেক ক্ষেত্রে প্রচারমাধ্যম তা জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব নেয়। আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসও পালিত হয় দেশে। সকল আহ্বানই যে রুটিনমাফিক গৎবাঁধা শুষ্ক আহ্বানÑ এমন কথা আমরা বলি না। নিশ্চয়ই এর ভেতরে অনেকেরই আন্তরিকতা রয়েছে, রয়েছে দীর্ঘশ্বাসমিশ্রিত কাতর আর্তি। বিশেষ করে যাদের পরিবারে রয়েছেন অন্তত একজন প্রতিবন্ধীÑ শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধীÑ অর্থাৎ যারা ভুক্তভোগী তাদের কষ্টের কথা আমাদের হৃদয় মথিত করে যায়। বহুবিচিত্র প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই সমাজে প্রতিবন্ধীদের এগিয়ে যেতে হয়। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণার্থে একটি মূলবাণী নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। সেটি হলোÑ ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় একীভূতকরণ : বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন’। এ ব্যাপারে আমাদের সাফল্য ব্যাপক না হলেও আমরা এগিয়ে চলেছি। দেশের প্রতিবন্ধীদের সঠিক কোন সংখ্যা জানা যায় না। সঠিকভাবে প্রতিবন্ধীদের গণনা নিশ্চিত করা দরকার। সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়া করার অসুবিধা দূর করার কোন বিকল্প নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণে প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদান পদ্ধতি বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে সমাজ উপকৃত হবে। বিন্দুমাত্র সংশয়ের কারণ নেই যে, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান ছাড়া প্রতিবন্ধীদের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন-২০০১ সংসদে পাস হয়। গত বুধবার সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন, যা প্রশংসাযোগ্য। তাঁর সভাপতিত্বে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের বৈঠকে প্রতিবন্ধীদের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। কর্মজীবী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ডরমেটরি নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি সুবিধাপ্রাপ্তির আওতায় যোগ হয়েছে আরও দুই লাখ ব্যক্তি। আমরা আশা করব, তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সচ্ছল ব্যক্তিরা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে আসবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষার পথ সুগম করেছিলেন। বর্তমানে দেশের অনেক বেসরকারী সংস্থা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করছে। এছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। জাতীয় বাজেটে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তথা অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতার পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ানো হচ্ছে। এটা সুলক্ষণ। তবে সরকারকে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের সামগ্রিক বিষয়টি তদারকি করতে হবে। শুধু পরিবারের নিকটজনই নয়, তাঁদের কাছাকাছি থাকা প্রতিটি মানুষের আচরণই এমন হোকÑ যাতে প্রতিবন্ধীরা নিজেদের উপেক্ষিত ও করুণার পাত্র না ভাবেন। এই বিষয়টিও সবাইকে ভাবতে হবে।
×