ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রীনগরে হ্যান্ডকাফ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা কারা?

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২২ মে ২০১৫

শ্রীনগরে হ্যান্ডকাফ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা কারা?

স্টাফ রিপোর্টার,মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে র‌্যাব-পুলিশের বাইরে হ্যান্ডকাফ হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা কারা? বিষয়টি চায়ের দোকান থেকে শুরু করে উপজেলার সর্বত্র এখন আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র জানায়, এরা শক্তিশালী প্রতারক চক্রের সদস্য। র‌্যাব-পুলিশ-মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে চক্রটি উপজেলার সর্বত্র একের পর এক প্রতারণা করে যাচ্ছে। র‌্যাব-পুলিশ পরিচয় দিয়ে চক্রটি ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য প্রতারণার কাজে হ্যান্ডকাফ ব্যবহার করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতারক চক্রটির ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও শ্রীনগর থানায় একাধিক লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জমা পড়লেও পুলিশ কোন কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধান ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চক্রটির সদস্যরা দলবদ্ধভাবে ৮/১০ জন এক সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে বা কাউকে অভিযোগকারী বানিয়ে জমি দখল, পাওনা টাকা উত্তোলন, হুন্ডি ব্যবসা, বল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন, ধর্ষণসহ ইত্যাদি অভিযোগ এনে চক্রটি ফিল্মি স্টাইলে নিরীহ লোকজনের বাড়িতে হাজির হয়ে দলের সদস্যরা একেক জন নিজেদের র‌্যাব-ডিবি পুলিশের লোক, বা মানবাধিকারের লোক পরিচয় দিয়ে বাড়ির কোন সদস্যের বিরুদ্ধে ভুয়া ও বানোয়াট অভিযোগ এনে প্রথমে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে। পরে হ্যান্ডকাফ দেখিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখায়। এ সময় ওই দলেরই একজন দুতিয়ালীর ভূমিকা নিয়ে চাঁদা দাবি করে। চাঁদার পরিমাণ কখনো লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। তবে বাড়ির লোকজন দিতে অস্বীকার করলে যা পায় তা নিয়েই দ্রুত কেটে পড়ে। উপজেলার সর্বত্র এ চক্রটির দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অভিযোগের সূত্রধরে পুলিশ জানায়, চক্রটির মূল হোতা উপজেলার ষোলঘর বাজারের দেলোয়ার ম্যানশনের নাম পরিচয়হীন একটি সংগঠনের কর্তাব্যক্তি আনোয়ার হোসেন, নাজিম উদ্দিন, বাবু, শফিক ও তাদের কয়েকজন সঙ্গী। এ চক্রটির বিরুদ্ধে গত ১৩ মে সিংপাড়া গ্রামের প্রবাসী আঃ রহিমের স্ত্রী নাছিমা বেগম মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি জানান, সম্প্রতি চক্রটির সদস্যরা তার বসত বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়ির অর্ধ শতাধিক মেহগনি ও ইউক্যালিপ্টাসের চারা গাছ নিজেদের হাতে কেটে ফেলে এবং সেখানে একটি ছাপড়া ঘর উত্তোলন করে অন্য একজনকে দখল বুঝিয়ে দেয়। প্রথমে ভয় পেলেও পরে নাছিমা বেগম চক্রটির এ কর্মকা-ের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রাখেন এবং তা পুলিশ সুপারের কাছে সাক্ষ্য হিসাবে জমা দেন। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার শ্রীনগর থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। গত ১৮ মে বিকালে চক্রটির হোতা আনোয়ারসহ ৩/৪ সদস্য সালেপুর গ্রামের আতাহার শেখের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে নিজেদের আইনের লোক ও মানবাধিকার কর্মী হিসাবে দাবি করে। এই চক্রটি ছাড়াও উপজেলার মাশুরগাঁও ফেরিঘাট এবং ষোলঘর হাসপাতাল সংলগ্ন এরকম আরও দুটি প্রতারক চক্র রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব প্রতারক চক্রগুলোর দলে দেখতে স্মার্ট একাধিক নারী সদস্যও রয়েছে। শ্রীনগর সার্কেলের এএসপি শামসুজ্জামান জানান, এসব বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মুজিবুর রহমান অভিযোগের বিষয়গুলো স্বীকার করে বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে আনোয়ার গংদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
×