মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা ॥ দু’বছর ধরে মা সালেহা খাতুন আশায় বুক বেঁধে ছিলেন, এই বুঝি ছেলে আরিফের ফোন আসবে। সেই কবে চাকরির জন্য সমুদ্রপথে গেছে মালয়েশিয়ায়। আরশাদ আলির পুত্র সুমন, তার ছোট ভাই, ভাইপোসহ একই পরিবারের ৪ জন একই যাত্রায় যায় মালয়েশিয়ায়। গত দু’বছর ধরে ওদের কোন খোঁজ নেই। একমাত্র ছেলেকে বুকে ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুণছেন। এক যুগ আগে স্বামী হারান নিখোঁজ সাইফুলের মা নাসিমা খাতুন। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবরের সন্ধান লাভের পর মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশীদের নিয়তির কথা আশঙ্কা করে জেলার কলারোয়া উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের ১৬ জন যুবকের পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম।
বসন্তপুর গ্রামের সাহেদ আলী, সাইফুল, আরিফসহ ১৬ জন তরুণ দু’বছর আগে কাজের সন্ধানে যায় মালয়েশিয়ায়। উঠতি বয়সী এ সব তরুণরা কেউ কলেজ পড়ুযা, কেউ আবার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। কেটে গেছে দুই বছর। তারপরও কোন খোঁজ মেলেনি সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যাওয়া নিখোঁজ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের ১৬ যুবকের।
অভিভাবকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, উপজেলার কাজীরহাট গ্রামের রউফ ও শুভঙ্করকাটি গ্রামের আজিজ মালয়েশিয়ায় ভাল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে তাদেরকে সমুদ্রপথে মালেশিয়া পাঠানোর ব্যবস্থা করে। দু’বছর আগে তারা দালালের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়। তবে ট্রলারে ওঠার পর থেকে পরিবারের কারোর সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ হয়নি। অভিভাবকরা জানেন না তাদের প্রিয় সন্তানটি বেঁচে আছে, না মারা গেছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে অভিভাবকদের হতাশা বেড়েছে, বেড়েছে সন্তান হারানোর বুকফাঁটা আর্তনাদ। নিখোঁজ আজমল মোড়লের বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, নিজের পৈত্রিক জমি বিক্রির তিন লাখ টাকা দালালকে দিয়ে ছেলেকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছেন। ছেলের খোঁজ না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এখন শয্যাশায়ী।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: