ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজামউদ্দিন জামি

সেই যে আমার গ্রামখানি

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২১ মে ২০১৫

সেই যে আমার গ্রামখানি

আমার ছেলেবেলার গ্রাম সুন্দর ছিল, এখন সৌন্দর্য হারিয়েছে। পরিবর্তন পৃথিবীর ধর্ম, তা রোধ করার ক্ষমতাও আমরা কেউ রাখি না। গ্রামে বিদ্যুত এসেছে তাও পঁয়ত্রিশ বছরের কম নয়। তখন এক ফিউজ, দুই ফিউজ করে বাল্ব জ্বলত। লোডশেডিং থাকলেও উন্নতি হয়েছে। চাঁদনি রাতে ঘর থেকে বের হলে নিজের ছায়া দেখে ভয় পেতাম। আমি হাত নাড়লে, ছায়াও হাত নাড়ে। ঘরে এসে মাকে বলতাম, মা হাসতেন। এখন গ্রামের বাড়িতেও রান্নাঘর-বাথরুম একসঙ্গে। তখন মা কোরবানির মাংস শুকিয়ে সংরক্ষণ করতেন, এখন ফ্রিজে। গ্রামের মানুষ আগে ‘টাট্টি’ ব্যবহার করত। এখন এর সঙ্গে নতুন প্রজন্ম এক প্রকার অপরিচিতই। এভাবে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। বাড়ির উত্তর-পূর্বে মাইজভান্ডার। বৃহস্পতিবার রাতে দল বেঁধে জিয়ারতে যেতাম। পরীক্ষার আগের শুক্রবারও যেতাম, দিনে। দোয়া চেয়ে অনেক কিছু মানত করতাম, এক টাকা-পঁাঁচ টাকা। বার্ষিক উরস হতো ১০ মাঘ। সারা বছর টাকা জমাতাম উরসের জন্য। বাঁশের চুঙ্গা কেটে জমা রাখতাম ভাংতি পয়সা। ঈদ বা উরসে বাঁশ কেটে কত জমিয়েছি তার আনন্দ ভাগাভাগি করতাম। এ টাকা কতবার যে গুনতাম তার হিসাব নেই। আমাদের দক্ষিণে ছিল ‘দেব বাড়ি’। বিশাল বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সব ছেড়ে তাঁরা চলে গেলেন। আত্মীয়স্বজনরা তা দেখভাল করলেও বেদখল হয়ে গেছে অনেক কিছু। গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী এটাকে বালিকা স্কুল করেছেন। এর সামান্য পশ্চিমে শিলেরহাট (নাইতের হাট)। এখানে রাসাংগিরি হাই স্কুল ও ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। শিলেরহাটের পাশ ঘেঁষে চলে গেছে পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ‘হালদা নদী’। এর পানি দিয়ে চাষাবাদ হতো। এখন এ নদীতে ‘হাঁটু জল থাকে’। বর্ষার মৌসুমে হালদা উপচে পার্শ্ববর্তী কয়েক কিলোমিটার প্লাবিত হয়। আমাদের বাড়ির পশ্চিম-উত্তর দিকে নাজিরহাট। এখানে ‘ঝংকার’ সিনেমা আছে। ছোটকালে লুকিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়ে ধরা পড়ি। আমার বাড়ির নাম সোবহান মোল্লার বাড়ি, গ্রাম রোসাংগিরি। এটি উপজেলা ফটিকছড়ির ১৫নং ইউনিয়ন। আমাদের গ্রামের ভেতর দিয়ে আরেকটি ছোট নদী চলে গিয়েছে। ধুরংখাল। মাছ ধরাসহ চাষাবাদ হতো এর পানি দিয়ে। আমাদের বাড়ির উত্তর ও পুবে হিন্দুবাড়ি। এর কিছু দূরে মগ ও বৌদ্ধরা থাকে। তাদের সঙ্গে কেটে যাচ্ছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। গ্রামে গেলে আমি এখনও আনমনা হয়ে যাই। ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম থেকে
×