ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জের রাজাকার রাজ্জাককে জেলে পাঠাল ট্রাইব্যুনাল

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২১ মে ২০১৫

হবিগঞ্জের রাজাকার রাজ্জাককে জেলে পাঠাল ট্রাইব্যুনাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত হবিগঞ্জের রাজাকার আব্দুর রাজ্জাককে কারাগারে পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। শুনানি শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। বুধবার সকালে আব্দুর রাজ্জাককে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার চাচাত ভাই আব্দুর রাজ্জাক। ট্রাইব্যুনালে হাজির করার পর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন বলেন, আপনার কোন আইনজীবী আছে কিনা। উত্তরে আসামি বলেন না কোন আইনজীবী নেই। এ সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ কি জিজ্ঞাসা করায় আসামি বলেন আগে থেকে রক্ত পড়ে। এরপর ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন। এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মৌলভীবাজার জেলা সদরের আতানগিরি পাহাড় থেকে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করে বানিয়াচং থানা পুলিশ। পরে ওইদিনই তাকে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করতে ঢাকায় পাঠানো হয়। রাজাকার রাজ্জাক হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার চাচাত ভাই এবং তাদের সঙ্গে একই মামলার আসামি। রবিবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই হবিগঞ্জের তিন আসামির বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, প্রসিকিউটর রাজিয়া সুলতানা বেগম চমন ও প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। ২৫ মে তা আমলে নেয়ার বিষয়ে শুনানি ও আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গত ৩০ এপ্রিল একই মামলার আসামি বড় মিয়া-আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিশন পক্ষ। ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ২৮ এপ্রিল শেষ করেন এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুর হোসেন। এতে ২১ জন সাক্ষীর জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমুরশামা গ্রামের বাসিন্দা গ্রেফতারকৃত মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকায় রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলেন। তাদের মধ্যে বড় ভাই ছিলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও ছোট ভাই ছিলেন রাজাকার কমান্ডার। তাদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন তাদের চাচাত ভাই আব্দুর রাজ্জাক। আসামিরা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, অভিযোগ-১ : একাত্তর সালের ১১ নবেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে মরদেহ গুম করে ফেলেন আসামিরা। অভিযোগ-২ : তারা মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি মরহুম মেজর জেনারেল এম এ রবের বাড়িতে পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগিতায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যান এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেন। অভিযোগ-৩ : একই দিন বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় তাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। অভিযোগ-৪ : একাত্তর সালের বাংলা ভাদ্র মাসের যে কোনদিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালান তারা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে যান আনছার আলী।
×