ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মালয়েশিয়ায় বৈধকর্মী প্রেরণ অনেকটাই অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২১ মে ২০১৫

মালয়েশিয়ায় বৈধকর্মী প্রেরণ অনেকটাই অনিশ্চিত

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জি টু জি চুক্তিটি (সরকার টু সরকার) অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাগরে ভাসা অভিবাসীদের তীরে ভিড়তে না দেয়ায় সমালোচনার মুখে পড়া মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ আপাতত জি টু জি পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ করবে না। কর্মী নিয়োগের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে গঠিত কমিটির বৈঠকও ডাকা হচ্ছে না। বর্তমান সঙ্কট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মী নিয়োগের সব প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার ১৫ দেশ অবৈধভাবে মানবপাচার বন্ধ নিয়ে থাইল্যান্ডে আয়োজিত বৈঠকে বসছে। ওই বৈঠকে কি ধরনের আলোচনা হয় তার ওপর ভিত্তি করে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে মালয়েশিয়া আলোচনায় বসতে পারে। তা না হলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধই থাকবে। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা। এদিকে, দেশটির কর্তৃপক্ষ অবৈধ অভিবাসী আটকের জন্য বিশেষ অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে নামবে বলে খবর মিলেছে। অভিযানে বেশি অগ্রাধিকার পাবে সাগর তীরবর্তী এলাকা। দেশটির পুলিশ মনে করছে, সাগর পথে যারা মালয়েশিয়ায় এসেছেÑ তারা উপকূলবর্তী শহরগুলোতেই রয়েছে। তারা কোন অবৈধ অভিবাসীকে স্থান দেবে না বলে ইমিগ্রেশন পুলিশ ঘোষণা দেয়ার পর দেশটিতে এখন গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। একদিকে হাজার হাজার মানুষ সাগরে ভাসছে-তাদের কূলে ভিড়তে না দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে গভীর সাগরে। আবার স্থলভাগে অবৈধ অভিযান চালানোর ঘোষণায় দেশটির বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। তারা বলছেন এ যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমরা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি যাতে জি টু জি পদ্ধতিতে (সরকার টু সরকার) কর্মী নিয়োগ বন্ধ না হয়। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, বৈধ পথে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করবে না। জি টু জি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে কোন অসুবিধা হবে না। অবৈধ পথে কর্মী যাওয়ার কারণে দেশটিতে শ্রমের বাজার কিছুটা মন্থর হয়েছে এটা ঠিক। তবে সার্বিকভাবে বাজারটি ভালই আছে। আমরা চেষ্টা করছি বৈধ পথে বেশি কর্মী পাঠানোর। যাতে সাগর পথে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে কাউকে যেতে না হয়। মালয়েশিয়া এক অভিবাসী কর্মী টেলিফোনে জানান, এবার বিদেশী অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে দেশটির কর্তৃপক্ষ অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। অভিযানে দেশটির কয়েকটি সংস্থা অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন কারণ জানায়নি। তবে দেশটি সরকার বলছে, তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে কোন অবৈধ অভিবাসীকে থাকতে দেয়া হবে না। অবৈধদের বৈধ হওয়ার জন্য পাঁচ দফায় সুযোগ দেয়ার পরও যারা এই সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের স্ব স্ব দেশে ফেরত যেতেই হবে। পুলিশের হাতে আটক হলে জেল জরিমানা হতে পারে। এমন কি জেল জরিমানা হওয়ার পর ছাড়া পেয়ে নিজ খরচে দেশে ফিরতে হবে। দেশটির কর্তৃপক্ষ এবারের অভিযান কঠোর হাতে চালাবে। অভিযানের বিষয়টি সম্পর্কে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়টি অফিসিয়ালি জানানো হয়নি। তবে এখানে প্রতিনিয়ত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলে। এটা তাদের ‘রুটিন ওয়ার্ক’। অবৈধ হলে হাইকমিশনের কিছু করার থাকবে না। তবে কোন বৈধ কর্মী আটক হলে সেক্ষেত্রে হাইকমিশন তাদের পাশে দাঁড়াবে।
×