ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শত শত নারী লাঞ্ছিত

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২০ মে ২০১৫

শত শত নারী লাঞ্ছিত

বোকো হারামের হাতে বন্দী শত শত নারী ও মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে, অনেককে উপর্যুপরি। কর্মকর্তা ও ত্রাণকর্মীরা একে গ্রামীণ অধিবাসীদের ওপর আধিপত্য করার সুচিন্তিত কৌশল বলে বর্ণনা করেছে এবং সম্ভবত এর লক্ষ্য এমনকি নাইজিরিয়ায় ইসলামী জঙ্গীদের একটি নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি করা। সাক্ষাতকারে ওই নারীরা বর্ণনা করেন কিভাবে যোদ্ধাদের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে হয় এবং কিভাবে তাদের বাড়ির মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। তারপর যোদ্ধারা তাদের সঙ্গে জোরপূর্বক যৌনক্রিয়া করে- কখনও তাদের গর্ভবতী করার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। খবর ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমসের। কালো আর লালচে বেগুনি রংয়ের স্কার্ফ মাথায় একজন তরুণী হামসাতু (২৫) নতদৃষ্টিতে বলল : ‘তারা আমাকে বিয়ে করেছে।’ তিনি জানান, তিনি ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অজাত শিশুটির পিতা বোকো হারামের একজন সদস্য। তাকে তার শহর দখলকারী অন্যান্য চরমপন্থীদের সঙ্গেও সহবাস করতে হয়েছে। হামসাতু, পরিচয় গোপন রাখার জন্য তার পুরো নাম প্রকাশ করা হয়নি- জানায়, ‘তারা বিয়ে করতে চায় এমন একজনকে বেছে নেয়।’ ‘কেউ যদি চিৎকার করে তবে তাদের গুলি করা হবে বলে ভয় দেখানো হয়।’ চরমপন্থী ইসলামী সম্প্রদায় বোকো হারাম নাইজিরিয়ার উত্তর-পূর্বের- বিস্তীর্ণ ভূখ- তাদের দখলে এনেছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা নারীদের তাদের নিশানা করেছে। শহর গ্রাম দখল করার পর তারা নারীদের পাকড়াও করে এক জায়গায় জড়ো করে। নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের ‘বিয়ের’ জন্য বোকো হারাম যোদ্ধাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। যৌন সহিংসতার পরিবর্তে নরম শব্দ ‘বিয়ে’ ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বোর্নো রাজ্যের রাজধানী মাইদুগুরির বাইরে বাস্তুচ্যুতদের জন্য স্থাপিত একটি বিশৃঙ্খল শিবিরে কয়েক ডজন সদ্যমুক্ত নারী ও মেয়েকে দেখা গেছে, যাদের অনেকেই অন্তঃসত্ত্বা ও বিধ্বস্ত চেহারার। নাইজিরিয়ার সৈন্যরা ও অন্যান্য সামরিক বাহিনী বোকো হারামকে নিকটবর্তী এলাকা থেকে হটিয়ে দিয়েছে। গত বছরের দীর্ঘ সময় ধরে তারা ওই এলাকা দখল করে রাখে। তাদের দখলদারির পূর্ণ মানবিক ক্ষয়ক্ষতি সবেমাত্র প্রকাশ পাচ্ছে। ফেডারেল দফতর কর্মীদের একটি পরিত্যক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১৫ সহস্রাধিক লোক আশ্রয় প্রার্থনা করেছে, যাদের অধিকাংশ নারী বলে ত্রাণ কর্মকর্তারা জানান। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক নারীকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে, ত্রাণ কর্মকর্তারা মনে করেন আরও অনেকেই তাদের গর্ভে বোকো হারাম চরমপন্থীদের অবাঞ্ছিত সন্তান বহন করছে। বার্নোর গবর্নর কাশেম শেত্তিমা বললেন : ‘জঙ্গীগোষ্ঠীর নেতারা নারীদের গর্ভবতী করার জন্য অত্যন্ত সচেতন প্রয়াস গ্রহণ করে।’ আমাকে বলা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ যৌন মিলনের আগে আল্লাহর কাছে বিনম্র মোনাজাত করে এই বলে যে তাদের কাজের মাধ্যমে উৎপন্ন শিশুরা যেন উত্তরাধিকার সূত্রে তাদের আদর্শ গ্রহণ করে। চরমপন্থীরা প্রকাশ্যে নারীদের তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিরূপে গণ্য করার অঙ্গীকার করে। গত বছর চিবক গ্রাম থেকে তিনশ’ স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর গোষ্ঠীর নেতা তাদের ক্রীতদাস হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের বাজারে বিক্রি করে দেয়ার হুমকি দেয়। ওই মেয়েদের অপহরণ করার অব্যবহিত পরে গোষ্ঠীর নেতা আবু বকর শেকাউ এক ভিডিও বার্তায় জানায়, ‘আমরা তাদের ৯ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দেব।’ তারপর বিশ্বব্যাপী ‘আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে দাও’ প্রচার শুরু হলে তারা জানায়, ‘আমরা তাদের ১২ বছর বয়সে বিয়ে দেব।’ চরমপন্থী গোষ্ঠী অনেক শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হাজার হাজার লোক পালিয়ে গেলে তাদের আচরণের ভয়াবহ ছবি প্রকাশ পায়। শত শত নারী ও মেয়েকে যাদের অনেকের বয়স ১১- তাদের পদ্ধতিগত, সংগঠিত যৌন সহিংসতার শিকারে পরিণত করা হয়েছে। ইয়াহাওয়া (৩০) হাতে ওষুধ ভর্তি একটি প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়ে তার সবুজ মাথার স্কার্ফ দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলছিল তার সবে এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়েছে।
×