ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোহামেডান-আবাহনী জম্পেশ লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২০ মে ২০১৫

মোহামেডান-আবাহনী জম্পেশ লড়াই আজ

রুমেল খান ॥ দেশীয় ফুটবলের রমরমা অবস্থা আগের মতো আর নেই। তারপরও নির্দিষ্ট দুটি দল যখন মুখোমুখি হয়, তখন দর্শক আসেন তাদের প্রিয় দলের খেলা উপভোগ করতে। আর এই দল দুটি হচ্ছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড বনাম ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। ‘মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলে আজ ঐতিহ্যবাহী দল দুটি মুখোমুখি হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। পয়েন্ট টেবিলে দুই দলের কেউই নেই শীর্ষ অবস্থানে। তবে পিঠাপিঠি অবস্থানে আছে ঠিকই। মোহামেডান আছে তৃতীয় ও আবাহনী আছে চতুর্থ স্থান (প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে আছে শেখ জামাল ধানম-ি ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র)। ৯ ম্যাচে ৫ জয়, ২ ড্র ও ২ হারে ১৭ পয়েন্ট ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’দের। মজার বিষয়Ñ ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’দের সংগ্রহও ৯ ম্যাচে ৫ জয়, ২ ড্র ও ২ হারে ১৭ পয়েন্ট! তবে গোল গড়ে এগিয়ে থাকায় (মোহামেডান +১২, আবাহনী +৮) সাদা-কালোরাই এগিয়ে আকাশী-নীলদের চেয়ে। গত লীগে আবাহনী প্রথম সাক্ষাতে মোহামেডানকে হারায় ১-০ গোলে। দ্বিতীয় সাক্ষাতে আবাহনীকে একই ব্যবধানে হারিয়ে বদলা নেয় মোহামেডান। তৃতীয় সাক্ষাতের স্কোরও সেই ১-০। তবে এবার জয়ী হয় আবাহনী। আজকের ম্যাচটি উভয় দলের কাছেই নিছক লড়াই নয়, বরং এটা হচ্ছে মর্যাদার দ্বৈরথ। এ দু’দলের লড়াইকে ফুটবলপ্রেমীদের কেউ আখ্যা দিয়েছেন ‘ঢাকা ডার্বি’, কেউ বা আবার ‘বাংলার ক্লাসিকো!’ পৃথিবীর সব দেশেই ক্রীড়া দর্শকদের জনপ্রিয় দল রয়েছে এবং সে সব দলে থাকে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতামুখর আমেজ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বার্সা-রিয়াল, ম্যানইউ-ম্যানসিটি। তেমনি বাংলাদেশের ফুটবল আর আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ এ যেন এক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাংলাদেশের ফুটবলের জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই। মাঠে দর্শকও আসে না সেভাবে। তারপরও আবাহনী-মোহামেডান নাম দুটি শুনলেই ফুটবলপ্রেমীদের রক্ত কেমন টগবগ করে ওঠে। এখনও তর্কের তুফান ওঠে। মোহামেডানের কোচ কাজী জসিমউদ্দিসন জোসি বলেন, ‘আবাহনী অবশ্যই ভাল দল। তবে আমরাও পিছিয়ে নেই। খেলায় যারা গোলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রথম গোল করতে পারবে, তাদের এ্যাডভান্টেজ থাকবে। আমার দলে কোন ইনজুরি নেই। সবাই মানসিকভাবে আবাহনীকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। কারুরই আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই। মাঠে নেমে গেমপ্ল্যান অনুযায়ী খেলে জয় ছিনিয়ে নিতে সচেষ্ট থাকব। লীগের পয়েন্ট টেবিলে চোখ বোলালেই বোঝা যায় লীগ এখন দারুণ ইন্টারেস্টিং অবস্থায় আছে।’ আজকের ম্যাচে মোহামেডান পয়েন্ট নষ্ট করলে দর্শক রোষানলের কবলে পড়া প্রসঙ্গে জোসির অভিমত, ‘এখন প্রচ- গরম। তারপরও আশা করি এ ম্যাচ দেখতে দর্শকরা স্টেডিয়ামে আসবেন। মনের মতো রেজাল্ট না হলে দর্শকরা আবেগ দেখাবেই। এটাই স্বাভাবিক। খেলার মূল আকর্ষণ তো তারাই। আমি নিজেও চাই খেলায় একটু-আধটু উত্তেজনা থাকুক, নইলে খেলা জমে না।’ আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপু বরেন, ‘এটা প্রেস্টিজিয়াস ম্যাচ। ড্র বা হার নয়, আমরা মোহামেডানের বিরুদ্ধে যে কোন মূল্যেই হোক জিততে চাই। খেলার মান নিয়ে কোন ভাবনা নেই। তাই বলে আমরা মোটেও খারাপ ফুটবল খেলব না। জয়ের বিষয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাসের কোন কমতি নেই। তবে যারা স্নায়ুচাপ সামলে খেলতে পারবে, তারাই জেতবে। আশা করি ম্যাচটা অনেক উপভোগ্য হবে।’ শেখ জামাল হারায় যে লীগটা জমেছে সে প্রসঙ্গে রূপু বলেন, ‘জামাল এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচেই হেরেছে। আর তাদের হারিয়েছে আবাহনীই। এ মৌসুমে যদি শক্তির বিচার করা হয় তাহলে আবাহনী-মোহামেডান কেউই এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে পারছে না। ডিফেন্স, মিডফিল্ডে ভাল খেলোয়াড় থাকলেও ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারছে না আবাহনী। খানিকটা খর্বশক্তির দল গড়লেও তরুণদের নজরকাড়া পারফমের্ন্সে ভাল মতোই লীগে জবাব দিচ্ছে মোহামেডান। দারুণ ফর্মে আছেন মোহামেডানের গিনির ফরোয়ার্ড ইসমাইল বাঙ্গুরা। তার গোলসংখ্যা ৮, যা লীগে ব্যক্তিগত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তৌহিদুল আলম সবুজ করেছেন ৪ গোল। জুয়েল রানা, মোবারক, অরূপও ভাল খেলছেন। চলতি মৌসুমে টিকিটাকা স্টাইল দিয়ে শুরু করলেও স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতায় গোল করতে ব্যর্থ আবাহনী। তাদের ইমন, শাহেদ, কোমলরা ভাল খেললেও সেভাবে গোল করতে পারছেন না। ফরোয়ার্ড ওয়াহেদ আহমেদ বিয়ের পর ক্যাম্পে ফিরে বিলম্বে হলেও এক ম্যাচে জোড়া গোল করে ঝলসে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন। লীগে শুরুর দিকে সাদা-কালোদের খেলা ছিল মিশ্র ধরনের, যা ক্লাব সমর্থকদের পুরোপুরি সন্তুষ্ট করেনি। যেমন তাদের নিচে থাকা শেখ রাসেলের কাছে হার এবং অনেক নিচে থাকা ফেনী সকারের সঙ্গে ড্র করা। তবে কৃতিত্ব হচ্ছে এক নম্বরে থাকা শেখ জামালের সঙ্গে ড্র করা এবং দুই নম্বরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়ে দেয়া। আবাহনীর অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের জন্য দুঃসংবাদ- নির্ভরযোগ্য হাঙ্গেরিয়ান ফরোয়ার্ড জাবালোস সোর্বা পেটের মাংসপেশির ইনজুরিতে। কদিন আগেই তিনি হাঙ্গেরি ফিরে গেছেন চিকিৎসার জন্য। চলতি মৌসুমের বাকি ম্যাচগুলো আর নাও খেলতে পারেন জাবালোস। আবাহনীর ১৩ গোলের সর্বোচ্চ ৪টিই করেছিলেন এই জাবালোস। স্বদেশী সতীর্থ ফরোয়ার্ড গ্যাবর ডেমিয়েনও করেছেন ৪ গোল।এখন দেখার বিষয়, আজকের মহারণে কি হয়।
×