ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাইড তৈরি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়

এবার দশ জেলার বাজেট ঘোষণা করা হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২০ মে ২০১৫

এবার দশ জেলার বাজেট ঘোষণা করা হতে পারে

এম শাহজাহান ॥ তৃণমূল মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলনে জেলা বাজেট কার্যকর করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। পর পর গত দুটি অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে সাতটি জেলার জন্য এই বাজেট ঘোষণা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি আলোর মুখ দেখেনি। এই বাস্তবতায় জেলা বাজেট থাকবে কি থাকবে না এই নিয়ে যখন বিতর্ক চলছে তখন এটি কার্যকর করতে আসন্ন বাজেটে কাঠামো সংস্কারের বিষয়ে গাইড তৈরি করছে অর্থমন্ত্রণালয়। নতুন বাজেটে যাতে এটি কার্যকর হতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্রমতে, বিগত দুই বছরের ধারাবাহিকতায় আসন্ন ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও জেলা বাজেটের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। এই প্রস্তাবে বাজেটে কাঠামো সংস্কারের বিষয়ে গাইড লাইন দেয়া হবে। এই গাইড অনুসরণ করে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা বাজেট কার্যকর করা হবে। এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সাতটি জেলার পাশাপাশি আসছে বাজেটে আরও তিনটি নতুন জেলার জন্য জেলা বাজেট ঘোষণা করা হতে পারে। জানা গেছে, এবারের জেলা বাজেটগুলোতে পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের বাজেটগুলো সঙ্কলন করার পদ্ধতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করবে অর্থমন্ত্রণালয়। কারণ সঙ্কলন করার পদ্ধতি জানা না থাকার কারণেই জেলা বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার তৈরি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এদিকে, গত ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করার সময় টাঙ্গাইল জেলার জন্য প্রথম পরীক্ষামূলক বাজেটের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরীক্ষামূলক ওই বাজেটে টাঙ্গাইল জেলার জন্য মোট ১ হাজার ৬৭৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় দেখানো হয় ১ হাজার ১১৮ কোটি ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দেখানো হয় ৫৫৪ কোটি ৯০ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে টাঙ্গাইলসহ আরও ছয়টি জেলার জন্য জেলা বাজেটের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। এগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট জেলা। এগুলো বিভাগীয় সদর জেলা। জানা গেছে, একটি জেলা এক বছরে কোন কোন উৎস থেকে কত টাকা আয় করবে এবং কোন কোন খাতে তা ব্যয় করবে, তার একটি চিত্র থাকে জেলা বাজেটে। কোন জেলা প্রয়োজনের তুলনায় অর্থ ঘাটতিতে থাকলে কেন্দ্রীয় সরকার ওই জেলাকে কত টাকা দেবে, তারও হিসাব থাকে। তবে প্রস্তাবিত জেলাগুলোর ক্ষেত্রে এসব কিছু নেই। অর্থাৎ পুরো অর্থই বরাদ্দ হবে কেন্দ্রীয়ভাবে। তাই আসন্ন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জেলা বাজেটে এসব বিষয়ের প্রতি নজর দেয়া হবে। এদিকে, চলতি অর্থবছরে সাত জেলার জন্য বাজেট বরাদ্দের একটি পুস্তিকা বের করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ। এর মুখবন্ধে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আঞ্চলিক সমতা নিশ্চিত করতে জেলা বাজেট সহায়ক হবে বলে তার বিশ্বাস। আর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হলে নতুন মাত্রা পাবে এই জেলা বাজেট। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমি সেদিনের স্বপ্ন দেখি, যখন জাতীয় বাজেট শুধু কেন্দ্রীয়ভাবেই প্রণীত বাজেটই-ই হবে না বরং এটি হবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চাহিদার প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিফলন। তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় সরকারকে দুর্বল রেখে জেলা বাজেটের বাস্তবায়ন অসম্ভব। এজন্য সর্বাগ্রে জেলাগুলোতে নির্বাচিত জেলা প্রশাসকের প্রয়োজন। বেসরকারী সংস্থা সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) এ প্রসঙ্গে মনে করে, বাজেট কাঠামোতে প্রক্রিয়াগত সংস্কারের মাধ্যমে জেলা বাজেট প্রণয়ন হওয়া উচিত। সংস্থাটি বলেছে, কাঠামো সংস্কার ছাড়াই প্রণীত নতুন জেলা বাজেটে শুধু একটি জেলার ব্যয়ের খতিয়ান পাওয়া যাবে। তৃণমূল মানুষের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন তাতে দেখা যাবে না। জাতীয় বাজেটের গুণগত বাস্তবায়ন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্যই অংশগ্রহণমূলক জেলা বাজেট প্রণয়ন করা দরকার বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারী এই সংস্থাটি। সংগঠনটি বেশ কয়েক বছর ধরেই জেলা বাজেট প্রণয়নের জন্য নানা পর্যায়ে আলোচনা ও দাবি জানিয়ে আসছে। সংস্থাটি বলেছে, সব পর্যায়ের জন্য অংশগ্রহণ ও জন-চাহিদার বিষয়টি নিশ্চিত করেই এ বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় তিন স্তর, তথা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব বাজেট খুবই কম। এগুলোর আয়ের উৎস্য সীমিত। তাছাড়া চলতি অর্থবছরের জেলা বাজেট প্রকাশনায় এর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলা হয়েছে, প্রকৃত অর্থে জেলা বাজেট বলতে যা বোঝায়, তা প্রণয়ন করতে বড় ধরনের প্রশাসনিক সংস্কার দরকার। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমানে যেভাবে জেলা বাজেট দেয়া হচ্ছে, তা মূলত, ওই জেলার ব্যয়ের একটা খতিয়ানই বলা চলে। কারণ ওই বাজেটে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটছে না। যেমনটি আমাদের জাতীয় বাজেটে হয়ে থাকে। তাছাড়া জেলা বাজেট নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের সঙ্গে আলোচনা হতেও দেখা যায় না। এজন্য এটাকে বায়বীয় বলেই মনে হয়। তবে জেলা বাজেট ঘোষণার আগে জেলা পরিষদকে কার্যকর করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
×