ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে স্ত্রীর স্বীকারোক্তি

তবলীগে বেশি সময় কাটানো ও একাধিক বিয়ের কারণে জবাই করা হয় স্বামীকে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২০ মে ২০১৫

তবলীগে বেশি সময় কাটানো ও একাধিক বিয়ের কারণে জবাই করা হয় স্বামীকে

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ সিলেটে তবলীগ জামায়াত নেতা খুনের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে তার স্ত্রী ফতেহা মাশরুকা। মঙ্গলবার আদালতে জানিয়েছে, ছুরি দিয়ে ঘুমন্ত স্বামী ইবরাহিম আবু খলিলকে হত্যা করা হয়। প্রথমে স্ত্রীর আঘাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে প্রাণ রক্ষায় ইবরাহিম ছটফট করলেও মাশরুকা থেমে থাকেনি। পাটের রশি দিয়ে স্বামীর হাত দুটো বেঁধে বুকের ওপর বসে স্বামীর গলায় ছুরি চালায়। ভোর রাতে জবাই করে স্বামীর মৃত্যু নিশ্চিত করে। নগরীর সওদাগরটুলায় তবলীগ জামায়াতের আমির ধনাঢ্য ইবরাহিম আল খলিল হত্যাকা-ের ঘটনায় তার সহধর্মিণী ফাতেহা মাশরুকা এভাবেই আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকা-ের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে হত্যার কারণও জানিয়েছে এই মহিলা। সোমবার সকালে নিজ বাসা থেকে ইবরাহিমের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি সওদারগরটুলার (১নং বাসা) মৃত সাদ উদ্দিন আল হাবীবের পুত্র। তার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগরে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরীর সওদাগরটুলার ১নং বাসার বাসিন্দা স্থানীয় তবলীগ জামায়াতের আমির ইবরাহিম আল খলিল (৫৫) খাওয়া দাওয়া শেষে গত রোববার দিবাগত রাতে নিজ শয়ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। পাশের কক্ষে ঘুমায় স্ত্রী ফাতেহা মাশরুকা। কনিষ্ঠপুত্র হাফেজ সাজিদ উদ্দিন নিজ কক্ষেই ঘুমাতে যান। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় হাফেজ সাজিদ ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান বিছানার নিচে পিতা ইবরাহিমের রক্তাক্ত লাশ পড়ে রয়েছে। ইবরাহিমের হাত পাটের রশি দিয়ে বাঁধা ও গলা জবাই করা। মুখে বালিশ চাপা দেয়া। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নিহতের স্ত্রী মোছাঃ ফাতেহা মাশরুকা (৪০) ও কনিষ্ঠপুত্র হাফেজ সাজিদকে (১৬) কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। নিহত ইবরাহিম ৩ পুত্র সন্তানের জনক। এর মধ্যে প্রথমপুত্র মাওলানা উজায়ফা ও দ্বিতীয় পুত্র মাওলানা তানজিম ঘটনার সময় বরিশালের পিরোজপুর জেলায় তবলীগ জামায়াতে ছিলেন। পুলিশ সূত্র জানায়, কোতোয়ালি থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গৃহবধূ ফাতেহা মাশরুকা স্বামীকে হত্যার ঘটনার বর্ণনা করে। কারও সহযোগিতা ছাড়াই কিভাবে একা স্বামীকে খুন করল তার আদ্যোপান্ত স্বীকার করে আদালতে। ১৬৪ ধারায় আদালত জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করেছে। জবানবন্দীতে ফাতেহা জানায়, স্বামী ইবরাহিম মোট ৩টি বিয়ে করেন। ফাতেহা হলো প্রথম স্ত্রী। দ্বিতীয় স্ত্রী বড়লেখার সুজানগরে থাকে। তৃতীয় বিয়ে করেন দিনাজপুর জেলায়। তবলীগ জামায়াতে বেশি সময় কাটানো, একাধিক বিয়েসহ নানা কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল। এ অবস্থায় ফাতেহা সম্পত্তির ভাগ ভাটোয়ারা করে সন্তানদের ভবিষ্যত ঝামেলা থেকে মুক্ত করার জন্যে বার বার বললেও এতে ইবরাহিম কর্ণপাত করেননি। ঘটনার রাতে নিজ নিজ কক্ষে তারা ঘুমিয়েছিলেন। রাত প্রায় ৩টার দিকে রেলওয়ের পাত হাতে নিয়ে ফাতেহা স্বামীর কক্ষে যান। তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন স্বামীর মাথায় আঘাত করলে ইবরাহিম প্রাণরক্ষায় ধস্তাধস্তির চেষ্টা করলে স্বামীর পেটের ডান দিকে ৩টি আঘাত করেন। এ সময় স্বামীর দু’হাত রশি দিয়ে বেঁধে ফেলেন। পরে ছোরা দিয়ে স্বামীকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ঘটনার পর রক্তমাখা ছোরা নিজ বাসায় রাখেন। স্বামীকে জবাই করে নিজে বাসায় ছিল সে। জানা গেছে, ফাতেহা মাশরুকা ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল কাটালের ডা. মফিজ উদ্দিনের কন্যা। তবে ফাতেহার বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকায়। পিতামাতার ৬ পুত্র ও ৫ কন্যা সন্তানের মধ্যে ফাতেহা হলো অষ্টম। ছোট বেলা থেকে ধর্মভীরু ফাতেহা এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। ১৯৯০ দশকের শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করা ইবরাহিম আল খলিলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। জানা গেছে, পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ইবরাহিম ৩ ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ। তাদের আদি নিবাস পাকিস্তানের করাচী। তার বড়ভাই মারা গেছেন। দ্বিতীয় জন দুবাই প্রবাসী। তিনি বসবাস করতেন সওদাগরটুলায়। কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে সিলেট নগরীতে। এ সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে সংসার চালাতেন ও দেশ বিদেশে তবলীগ জামায়াতে যেতেন। তবলীগ জামায়াত থেকে গত কয়েক দিন আগে ভারতের দিল্লী থেকে ঢাকায় ফেরে দুই পুত্রকে দেখতে পিরোজপুরে চলে যান। পিরোজপুর থেকে ঢাকায় আসার পর গত শনিবার রাত পৌনে ১২টায় এনা পরিবহনের বাসে করে সিলেটের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। শ্যালক মঈন উদ্দিন তাকে এই বাসে তুলে দেন। যে রাতে বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হন ঢাকা থেকে ঠিক এর পরের রাতেই প্রিয়তমা স্ত্রীর হাতে নিজ বাসায় খুন হন ইবরাহিম আল খলিল।
×