ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্বৃত্তায়নে জনপ্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৯ মে ২০১৫

দুর্বৃত্তায়নে জনপ্রতিনিধি

নির্বাচনের আগে শোনা যায়, দেশের ধূলিকণাটিও আমার কাছে পবিত্র, মূল্যবান বস্তু। কিন্তু নির্বাচিত হওয়া মাত্র দেখা যায়, দেশের কোন জিনিসেরই কানাকড়ি মূল্য নেই। জনপ্রতিনিধিদের কারও কারও হাতে নানাভাবে এই হতদরিদ্র হতে উত্তরণে সচেষ্ট দেশের শত শত সম্পদ বিনষ্ট হয়, লুট হয়, পাচার হয়, লোপাট হয়, গায়েব হয়। এমনকি রাজপথে নেমে যানবাহন, দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজির ঘটনা ঘটানোর নেতৃত্বদানেও দেখা যায়। স্মাগলিং, চাঁদাবাজি, খাল-বিল-নদী-নালা ভরাট করে স্থাপনা গড়ে তোলা, সরকারী খাস বা রেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমি দখল করে ঘরবাড়ি, মার্কেট নির্মাণের অজস্র ঘটনা থাকলেও সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ হয় তার অর্ধেক। কারণ সেসব প্রকাশ মানেই প্রকাশকারীর জীবন হয়ে পড়ে হুমকির সম্মুখীন। সরকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ পিটিয়ে হাত মকসো করেছেন এমন রাজনীতিকের সংখ্যাও কম নয়। উপজেলা প্রশাসনসহ স্কুল-কলেজের প্রশাসন পরিচালনায় খবরদারির সুযোগটাও তাদের একান্ত নিজস্ব। এলাকার সবখানেই জনপ্রতিনিধিদের নজরদারি থাকতেই পারে- সব বিষয়ে তারা অবহিত থাকবেন এমনটা অস্বাভাবিক নয়। জনগণের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষিত রাখায় তাদের অবদানটাই হওয়ার কথা বেশি। কিন্তু রক্ষকই যদি হয়ে ওঠে ভক্ষক, বিপদ তখন চারদিক হতে গ্রাস করতে চায়। ভাবতে অবাক লাগতেই পারে, কোন কোন জনপ্রতিনিধি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করতে পারেন। এ যেন ছেলেখেলা! গণবিরোধী কাজে জড়িত হয়ে পড়া জনপ্রতিনিধিরা নিজেরাই নিজেদের নিন্দনীয় করে তোলেন। নিজের মানসম্মান নিজেই খুইয়ে ফেলেন। নইলে রাজনীতি তো রাজসম্মানের অধিকারী। একসময় পেয়েছেও সেই সম্মান। নেতারা ছিলেন দেশের মুকুটহীন রাজা। মানুষের মন জয় করে তারা নেতা হয়েছেন। ভোটযুদ্ধে জয়ী হয়ে নয়। ভোটযুদ্ধের জন্য একালে মন জয় করতে হয় না। ওটার জন্য নানা কসরত করতে হয় একালে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া প্রতিনিধিরা সাধারণত সকল প্রকার অপ্রিয় কার্য হতে বিরত থাকেন আর জনপ্রিয়তা অর্জন ও ধরে রাখার পথই হচ্ছে মানুষের পাশে থেকে তাদের সুখ-দুখে সহায়তার, শুভকামনার, সমস্যা সমাধানের হাত বাড়ানো। রাজধর্ম পালন এবং সম্ভ্রান্ত গণমুখী ও সংবেদনশীল জীবনাচরণের মাধ্যমেই জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের গৌরবের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
×