ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছয় বছরে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে আশাতীত ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৯ মে ২০১৫

ছয় বছরে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে আশাতীত ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। দারিদ্র্য বিমোচন, শিশুমৃত্যু হার হ্রাস, মাতৃস্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফল্য পেয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, মধ্য আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ছয় বছরে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে। এই অর্জন ধরে রাখতে হলে উন্নত বিশ্বের সহযোগিতা বাড়াতে হবে। সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিমুখী সহযোগিতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সভার সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে হলে উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতার পরিমাণ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণের উন্নয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ ও কারিগরি ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্যে দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিমুখী সহযোগিতা একটি ব্যাপকভিত্তিক কাঠামো। দক্ষিণ অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশসমূহ তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং প্রযুক্তি সহায়তা ও আর্থিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি ছাড়াও আঞ্চলিক সংযোগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত সমস্যা সমাধানে দক্ষিণ-দক্ষিণ অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং অন্যান্য সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই সহযোগিতা আরও বাড়াতে হবে। দু’দিনব্যাপী (১৭-১৮ মে) এই সেমিনারে জাতিসংঘের দক্ষিণ-দক্ষিণ কার্যালয় ও ইউএনডিপির সহযোগিতায় ৪৫টি দেশের অর্থমন্ত্রী, উন্নয়নমন্ত্রী এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার শতাধিক প্রতিনিধি সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। দুই দিনের এ সভায় ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। এতে সর্বমোট তিনটি প্লেনারি সেশন অনুষ্ঠিত হয় যথা-প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং ইনোভেশন, দক্ষিণ-দক্ষিণ দেশসমূহের অর্থায়ন এবং অধিক সম্ভাবনা খাতগুলোতে অর্থায়ন সহযোগিতা করে তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা। এ সভায় উত্থাপিত বক্তব্য ও মতামতসমূহ আগামী জুলাই মাসে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠেয় তৃতীয় আন্তর্জাতিক দক্ষিণ-দক্ষিণ সেমিনারে উপস্থাপন করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশের আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন। যদিও আগামী বাজেটে এ বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তি এবং অনুদান বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সহযোগিতার ব্যাপারে ধনী দেশগুলোর কার্পণ্যতা দূর করতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এই অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, গত ছয় বছরে বাজেটের আকার প্রায় তিনগুণ হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি খাতও এগিয়ে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধি ও রফতানি বেড়েছে। কিন্তু বৈদেশিক অনুদান ও ঋণপ্রাপ্তি সেভাবে বাড়েনি। এখন দশমিক ৭ শতাংশ অর্জন করা যায়নি। এটা দশমিক ৪ পর্যন্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এমডিজি অর্জনে সফলতা পেয়েছে। এমডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অধিকাংশ পূরণ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, এই সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য বিদেশী সহযোগিতা বাড়ানোর কৌশল নির্ধারণ। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে যে পরিমাণ সহযোগিতা পাওয়া প্রয়োজন তা আসছে না। এটা কিভাবে আনা যায় সে উদ্দেশ্যেই এই দু’দিনব্যাপী এই সেমিনার করা হলো। তিনি বলেন, গত ছয় বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। বিদেশীরা জানতে চায় আমরা কিভাবে এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা, শিশুমৃত্যুহার হ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মাতৃস্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বিদেশীরা অভিভূত। আমরা এ বিষয়গুলো এই সেমিনারের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষিণের দেশগুলো যতই উন্নতি করছে ততই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তাদের স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উত্তরের দেশগুলোর সহযোগিতা, এক্ষেত্রে অনেক বাধা দূর করতে পারে। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা ক্রমাগতভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রে দক্ষিণের দেশগুলোর অগ্রগতির পাশাপাশি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে হচ্ছে এ অঞ্চলকে। তিনি বলেন, মানবসম্পদ আর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একেএম আব্দুল মোমেন। ইউএনডিপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি প্রমুখ।
×