ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরা নির্ভর করছে ভারতীয় আদালতের ওপর

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৯ মে ২০১৫

সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরা নির্ভর করছে ভারতীয় আদালতের ওপর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাত ও চোখ বেঁধে শিলং পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। শিলং সিভিল হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করার উদ্দেশ্যে নেয়ার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় এমন দাবি করেন সালাহউদ্দিন। যদিও এমন দাবি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিজিবির সূত্রগুলো বলছে, সালাহউদ্দিনের এমন দাবি মনগড়া এবং উদ্দেশ্যমূলক। এমন মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। সালাহউদ্দিন রহস্যের জট খুলতে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করছে। তবে সালাহউদ্দিনকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নির্ভর করছে সে দেশটির আদালতের ওপর। কারণ অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে ভারতীয় পুলিশ। মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন হওয়ার পরেই সালাহউদ্দিনকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সোমবার দুপুরে শিলং সিভিল হাসপাতালের মূল ভবনে সিটিস্ক্যান করতে নেয়া হয় সালাহউদ্দিনকে। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, তার হাত ও চোখ বেঁধে শিলংয়ে নিয়ে রাখা হয়েছে। শিলং পৌঁছানোর আগে কয়েক দফায় গাড়ি বদল করা হয়েছে। অনেক জায়গায় হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় ঘুরনো হয়েছে। এরপর তাকে শিলংয়ে নিয়ে রাখা হয়। এর আগে ঢাকা থেকে তাকে অপহরণের পর একটি ছোট্ট কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। এমনকি বাংলাদেশ পুলিশের তরফ থেকে তাকে গ্রেফতার করতে রেডএলার্ট জারির করার বিষয়টি তিনি জানেন বলেও দাবি করেন। তিনি বলেন, রেডএলার্ট জারি করায় তার দেশে ফেরায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। শিলং পুলিশের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, সালাহউদ্দিনকে আদালতে হাজির করার বিষয়টি নির্ভর করছে শিলং সিভিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর। হাসপাতালের চিকিৎসকরা যখন সালাহউদ্দিনকে অব্যাহতি দেবেন তখনই তাকে আদালতে সোর্পদ করা হবে। আদালতের আইনী প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে সালাহউদ্দিনের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দিনক্ষণ। বিএনপির সহদফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি ইতোপূর্বে জানান, সালাহউদ্দিনের স্মৃতিভ্রম হচ্ছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ কিছুই মনে করতে পারছেন না। গত ১২ মে শিলং সিভিল হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জি কে গোস্বামীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন সালাহউদ্দিন। চিকিৎসক গোস্বামী বলছেন, সালাহউদ্দিন স্বাভাবিক আছেন। সালাহউদ্দিনের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। তার মানসিক কোন সমস্যা নেই। তিনি পুরোপুরি মানসিকভাবে সুস্থ এবং স্বাভাবিক। স্মৃতিভ্রম হওয়ার কোন লক্ষণ সালাহউদ্দিনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তাবিথ আউয়াল শিলং গেছেন। তাদের তরফ থেকে কোন কিছুই জানানো হয়নি। প্রসঙ্গত, গত ৫ মার্চ থেকে বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধের মধ্যেই গত ১১ মার্চ সালাহউদ্দিনের স্ত্রী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ আচমকা সংবাদিকদের জানান, তার স্বামীকে গত ১০ মার্চ রাতে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই সালাহউদ্দিনকে অপহরণের পর গুম করা হয়েছে বলে পরিবারের ও দলের তরফ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। যদিও আজ পর্যন্ত সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি দেরিতে প্রকাশের কারণ সর্ম্পকে সালাহউদ্দিনের স্ত্রী ও ওই বাড়ির মালিক ব্যাংক কর্মকর্তা হাবিব হাসনাতের তরফ থেকে আজও কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া মেলেনি। ডিবি পুলিশ বরাবরই সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করছে। আবার গত ১২ মে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রীই ভারতের মেঘালয়ের একটি হাসপাতালে স্বামীর হদিস মেলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ওইদিনই হাসপাতাল থেকে তার স্বামী তাকে ফোন করেছিলেন। তিনি হাসপাতালে সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। তবে তিনি কিভাবে মেঘালয়ে গেলেন সে সর্ম্পকে কিছুই জানাননি। মেঘালয়ের শিলং পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, গত ১১ মে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে মেঘালয়ের শিলং পলোগ্রাউন্ড এলাকায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ানোর সময় সালাহউদ্দিনকে পুলিশ প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করে। কথাবার্তায় সালাহউদ্দিন ভারতীয় নাগরিক নন, বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপর পুলিশ তার কাছে ভারতে প্রবেশের কাগজপত্র দেখাতে বলে। তা দেখাতে ব্যর্থ হলে পুলিশ সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে অবৈধভাবে ভারত প্রবেশের অপরাধে ওইদিনই একটি মামলা দায়ের করেন। সালাহউদ্দিনের বাহ্যিক আচার আচরণ দেখে পুলিশ তাকে মানসিক রোগী ভেবে প্রথমে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এ্যান্ড নিউরোলজিক্যাল সাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকরা সালাহউদ্দিন সুস্থ বলে মতামত দেয়। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় শিলং সিভিল হাসপাতালে। সেখানেই তিনি পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
×