ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তি ও কথনের সম্মিলনে রবীন্দ্র নৃত্যধারা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৮ মে ২০১৫

মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তি ও  কথনের সম্মিলনে  রবীন্দ্র নৃত্যধারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালীর সৃষ্টিশীলতার সকল শাখাতেই প্রবলভাবে বিরাজমান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সূত্রে শিল্পের রূপময় শাখা নাচের ভুবনেও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ। সমকালীন সমাজে নৃত্যের যে কদর লক্ষ্য করা যায় তাও সম্ভব হয়েছে রবিঠাকুরের কল্যাণে। নৃত্যের প্রসারে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নৃত্য-শিক্ষালয়। আর রবিবার জ্যৈষ্ঠের সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথের নৃত্যশৈলীর অনন্য এক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হলো ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কটে। একঝাঁক নৃত্যশিল্পী মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির অনিন্দ্য প্রকাশে ফুটিয়ে তুললেন রবীন্দ্র সৃষ্ট নৃত্যধারা। পরিবেশনার সঙ্গে কথনের মাধ্যমে বর্ণিত হয় রবীন্দ্র-নৃত্যের ভাব এবং বিভিন্ন ধারার নৃত্যকলা থেকে এ ধারায় গহনের খুঁটিনাটি বিষয়াবলী। এছাড়াও উপস্থাপিত হয় নৃত্য বিষয়ক অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনী। ‘নৃত্য উপলব্ধি : রবীন্দ্র-নৃত্যধারা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনার পাশাপাশি বক্তব্য প্রদান এবং নৃত্যশৈলী পরিবেশন ও পরিচালনা করেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী শর্মিলা ব্যানার্জি। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের শাস্ত্রীয় নৃত্য উপলব্ধির ধারাবাহিক উদ্যোগের পঞ্চম পর্ব হিসেবে অনুষ্ঠিত হলো এ আয়োজন। নৃত্যসন্ধ্যায় নাচ ও কথনের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয় বিভিন্ন বিষয়। একে একে উপস্থাপিত হয় সঙ্গীতের ভাব প্রকাশক অভিব্যক্তি বা অভিনয়ের সঙ্গে ছন্দোময় অঙ্গ সঞ্চালন, ইঙ্গিত ও গতিময় পদবিক্ষেপ। রবীন্দ্র-নৃত্যের ঐতিহাসিক বিবর্তন ও প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সময় থেকে সমকালীন নৃত্যধারার বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন। নানা শাস্ত্রীয়-নৃত্য যেমন মণিপুরী, ভরতনাট্যম, কত্থক, উড়িষী, মোহিনীত্তম, কথাকলি প্রভৃতির শৈলী নিজ বাণী, সুর-সঙ্গীত ও নৃত্যে ধারণ করার রবীন্দ্রনাথের প্রচেষ্টা। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত ও নৃত্যে বাংলার বিভিন্ন লোকরূপ ধারণ, যেমন বাউলদের নৃত্যভঙ্গি, গুজরাটের ????-নৃত্য, রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী অঙ্গসঞ্চালন ইত্যাদি। বেশ কিছু বিদেশি নৃত্যধারা, যেমনÑ আধুনিক সমকালীন নৃত্য, শ্রীলংকার ক্যান্ডি নাচ, ইন্দোনেশিয়ার জাভা ও বালির ঐতিহ্যবাহী নাচ ইত্যাদির প্রতি রবীন্দ্রনাথের ঝোঁক ছিল। সেগুলো নিজ সঙ্গীত ও নৃত্যে ব্যবহারে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াস। নৃত্য ও পোশাকের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের সর্বদা সারল্যকে প্রাধান্য দেয়ার অভিপ্রায়। রবীন্দ্র-নৃত্য উপলব্ধির এ আয়োজনে নৃত্য পরিবেশন করেন সোনিয়া রশিদ, আফসানা ইসলাম, সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা, মেহেরাজ হক তুষার, লাডলী মোহন মিত্র, ইরা বালা, কৃষ্ণা রায়, ফালগুনী সেন, অহল্য শংকর দাস, আনিকা তেহসিন সুরভী, রিখিয়া আফ্রা, সুস্মিতা লোপা, সুপর্ণা লিমা, রাসেল আহমেদ, সাইফুল ইসলাম ইভান, শফিকুল ইসলাম ও আমীর হামজা প্রীতম। শাস্ত্রীয় নৃত্য-উপলব্ধির এ পর্বে শর্মিলা ব্যানার্জি বিভিন্ন শাস্ত্রীয়, লোকজ এবং বিদেশি নৃত্য শৈলী থেকে আলাদা হিসেবে রবীন্দ্র-নৃত্যধারার বিবর্তন ও উৎপত্তি তুলে ধরেন। সেলিম আল দীনের দুই নাটকের প্রদর্শনী ॥ রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী বাংলা নাটকের অনন্য এক নাট্যকার সেলিম আল দীন। পাশ্চাত্যের ধারাকে উপেক্ষা করে রচনা করেছিলেন এই ভূখ-ের অনুষঙ্গযুক্ত শেকড়সন্ধানী নাটক। রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো তাঁর রচিত দু’টি নাটক। ঢাকা থিয়েটার পরিবেশন করে ‘গল্প নিয়ে গল্প’ ও ‘অমৃত উপাখ্যান’ শীর্ষক জোড়া প্রযোজনা। গল্প নিয়ে গল্প নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন এশা ইউসুফ। আর অমৃত উপাখ্যানের নির্দেশনা দিয়েছেন ওয়াসিম আহমেদ ও সাজ্জাদ রাজীব। গল্প নিয়ে গল্প প্রযোজনায় বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে মানুষের জীবনের প্রেম, ব্যর্থতা, নিষ্ঠুরতা, অবদমন ও হতাশা। আধুনিক শরীরিভাষার সঙ্গে নৃত্য ও এ্যাক্রোবেটিকের ব্যবহারে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহাজাদা সম্রাট, রফিকুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম লিটন, সামিউন জাহান দোলা, শরীফ হাসান ও অনিক ইসলাম। অমৃত উপাখ্যান সেলিম আল দীনের লেখা একমাত্র উপন্যাস। তাই উপন্যাসটির নাট্যরূপ না দিয়ে অন্যান্য নাটকের মতো সম্পাদনা করে মঞ্চ সৃজন করা হয়েছে। নাটকটির নির্দেশনায় সৃজিত বর্ণনাত্মক নাট্যরীতি ও আমাদের ঐতিহ্যবাহী বাঙলা নাট্যরীতির প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রসেনিয়াম নাটকের প্রথাগত কালো উইংসের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে চিরায়ত বাঙলার পটচিত্র। ঐতিহ্যবাহী শ্যাডো পাপেটের ফর্মটিও ব্যবহার করা হয়েছে। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শিমুল ইউসুফ, মোহাম্মদ শাহরিয়ার আখতার, আসাদুজ্জামান আমান, তাহমিদা মাহমুদ, সামিউন জাহান দোলা, মিতালী রানী দেব প্রমুখ। আজ আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস আজ ১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। দিবসটি পালন উপলক্ষে জাদুঘরসমূহের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইসিওএম একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে। এবারের এই দিবসটি উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য হলো ‘টেকসই সমাজের জন্য জাদুঘর’। এই প্রতিপাদ্যটি বিষয়টিকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জাদুঘরসমূহের পাশাপাশি দেশের জাদুঘরসমূহও নানা আয়োজন হাতে নিয়েছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামের (আইসিওএম) যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সেমিনার। আজ সোমবার সকাল ৮টায় শুরু হবে র‌্যালি এবং বেলা ১১টায় শুরু হবে সেমিনার। সকাল আটটায় নানা সাজে সজ্জিত হয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালিটি শাহবাগ জাদুঘর থেকে শুরু হয়ে টিএসসি হয়ে পুনরায় জাদুঘর চত্বরে এসে শেষ হবে। এতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকার বিভিন্ন জাদুঘর, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ এবং জাদুঘরের সুহৃদবৃন্দ অংশগ্রহণ করবে। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশিষ্ট গবেষক ও জাদুঘরবিদ ড. ফিরোজ মাহমুদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিকদার মোঃ জুলকারনাইন। প্রধান অথির বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আক্তারী মমতাজ। সভাপতিত্ব করবেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি এম. আজিজুর রহমান। স্বাগত ভাষণ দেবেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।
×