ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংঘবদ্ধ চক্রের ৫ জন আটক

শিল্পপতির অপহৃত ছেলে মুক্তিপণের টাকাসহ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৮ মে ২০১৫

শিল্পপতির অপহৃত ছেলে মুক্তিপণের টাকাসহ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে অপহৃত এক শিল্পপতির ছেলে আবীরকে উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। রবিবার ভোরে রাজধানী উত্তরার কসাইবাজার ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের ৫ জনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মুক্তিপণের মাধ্যমে আদায়কৃত পৌনে দুই কোটি টাকা। গত ২ মে তাকে উত্তরার মাদ্রাসা থেকে বাসায় ফেরার সময় বনানীর ফ্লাইওভারের কাছ থেকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে আটককৃতরা হলেনÑ মিজানুর রহমান মিজান (৩৪), রেজাউল করিম (৩৬), নজরুল ইসলাম (৩২), জহির উদ্দিন মোঃ বাবর (৩৭) ও শাহ মোঃ অলিউল্যা (৩৭)। এদের মধ্যে রয়েছে অপহৃতের পারিবারিক এক ড্রাইভারসহ কয়েকজন পরিচিত লোক। অপহৃত আবির (৮) রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বিশিষ্ট শিল্পপতি, টিএনজেড অব কোম্পানিজের এমডি শাহাদত হোসেন শামীমের একমাত্র ছেলে। সে উত্তরার একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। তাকে নিয়মিত ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উত্তরায় আনা-নেয়া করা হতো। তাকে অপহরণের মূল পরিকল্পনা করে মিজান নামের এক যুবক। এই মিজানের সঙ্গে যোগ দেন আবিরের পিতার অফিসের আরও কয়েকজন স্টাফ। ধনাঢ্য পিতার কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করার জন্যই আবিরকে অপহরণের পরিকল্পনা। এজন্য এক বছর আগে এ পরিকল্পনা করা হয়। এ চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী এবং হোতা হিসেবে কাজ করেন মিজানুর রহমান মিজান। জানা যায়, প্রায় ৪-৫ মাস আগে ড্রাইভার রেজাউল মিজানকে বলে কোম্পানির বেশি টাকা পাওয়া যাবে না। বরং তার ছেলেকে অপহরণ করে কয়েক দিন আটকে রাখলে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যাবে। অপহরণের পর র‌্যাব সদর দফতরে রবিবার বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, সম্প্রতি মিরপুর ডিওএইচএসে কোম্পানির কর্মচারীদের একটি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা হয়। সেখানে ওই প্রতিষ্ঠানের ড্রাইভার রেজাউল ও ইলেক্ট্রেশিয়ান নজরুল অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা মিজানকে আসতে বলে। ক্রিকেট খেলার মাঠে তারা ৩ জন শিল্পপতি শামীমের একমাত্র ছেলে আবিরকে কিভাবে অপহরণ করে মুক্তিপণ বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করে। পাশাপাশি অপহরণের পর ছেলেকে লুকিয়ে রাখার জন্য প্রায় ৪ মাস আগে মিরপুরে পল্লবীতে একটি বাসা ভাড়া করে। পরিকল্পনা মোতাবেক মিজান ও তার সহযোগীরা নিয়মিত আবিরের উপর নজরদারি ও তার গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে। আবির উত্তরায় যে মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত, সেখানে মিজানের পরিচিত একজনকে ভর্তি করে এবং ভিকটিম আবিরের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। র‌্যাব জানায়, ঘটনার দিন গত ২ মে সকাল থেকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত ১২-১৪ জন তিনটি দলে ভাগ হয়ে অপহরণের কাজে সক্রিয় হয়। মিজান একটি গাড়ি নিয়ে আবিরকে অনুসরণ করে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় গ্রুপ একটি এলএক্স নীল রং-এর প্রাইভেটকার ও আরেকটি নোহা মাইক্রোবাসে ক্যান্টনমেন্ট স্টাফ রোড এলাকায় অবস্থান নেয়। ওইদিন রাত আনুমানিক সাড়ে আটটায় ভিকটিম প্রাইভেটকারে করে বের হয়ে আসলে মিজান প্রাইভেটকারটির পিছু নেয়। সে ফোন করে আগে থেকে স্টাফ রোডে অবস্থানরত অপহরণকারী ২ গ্রুপকে তথ্য সরবরাহ করে। পরে ভিকটিমকে বহনকারী প্রাইভেটকারটি বনানী ফ্লাইওভারের নিচে পৌঁছলে মিজানসহ বাকি ২ গ্রুপ ভিকটিমের প্রাইভেটকারটিকে ব্যারিকেড দেয়। আবিরকে বহনকারী প্রাইভেটকারের ড্রাইভার এবং তার সঙ্গে থাকা আরেকজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে নোহা মাইক্রোতে উঠায়। ভিকটিমের গাড়িটি অপহরণকারী একজন ড্রাইভার গাড়িসহ ৩০০ ফুট রাস্তার দিকে চলে যায়। গাড়িটি ফেলে রেখে আবিরকে অপহরণকারীরা আবিরসহ অন্য ২ জনকে নিয়ে পল্লবীর দিকে রওয়ানা হয়। ওরা ভিকটিমের ড্রাইভার এবং সঙ্গে থাকা অপরজনকে এয়ারপোর্ট এলাকায় ফেলে রেখে যায়। এরপরই মিজান ও তার সহযোগীরা শাহাদত হোসেন শামীমের সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে তাঁর ছেলেকে অপহরণের ঘটনা নিশ্চিত করে ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে অপহরণকারীরা তার ছেলেকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। এ নিয়ে শুরু হয় দরকষাকষি। অপহরণকারীদের দাবিকৃত ১০ কোটি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন শামীম। এক পর্যায়ে দরকষাকষিতে শামীম দুই কোটি টাকার মধ্যে পৌনে দুই কোটি টাকা পরিশোধ করেন। এরপর ৬ মে সন্ধ্যায় হোটেল রেডিসনের সামনে একটি সিএনজিযোগে ভিকটিম আবিরকে নিয়ে আসে অপহরণকারী মিজান। এ সময় সে আবিরের পিতা শাহাদত হোসেন শামীমের কাছ থেকে নগদ আরও ২৭ লাখ টাকা নিয়ে যায়। পরে শামীম বিষয়টি র‌্যাবকে জানালে তারা উদ্যোগী হয়ে উদ্ধার অভিযান চালায়।
×